কবিতাটিতে পেলাম গভীর আধ্যাত্মিক বোধ সহজ সরল ভাষায় বাস্তব অভিজ্ঞতানির্ভর অনুভবের নিরিখে l ভালোবাসা, আশা, সাহস, স্বাধীনতা, বিশ্বাস, সততা, - এর পথ নিলেই আমাদের এই পৃথিবী শান্তিময় হবে, আস্থার পরিবেশ গড়ে উঠবে, এখানেই স্বর্গ নেমে আসবে এবং পৃথিবী যোগ্য বাসভূমি হয়ে ইহ জগতেই আমাদের স্বর্গীয় সুখ প্রদান করবে l
কিন্তু পরকালে স্বর্গলাভের প্রত্যাশায় আমরা হিংসা ছড়াই, এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়কে ঘৃণা করি, অন্যকে পরাধীন করে নিজের স্বাধীনতা খুঁজি, ধর্মের মূল অর্থ ভুলে যাই, নিজের ধর্মবিশ্বাসকে সকলের ওপর আরোপ করতে চাই, ত্যাগধর্ম বিস্মৃত হই, সর্বদা সম্পদ হারানোর আতঙ্কে থাকি, নিজের ওপর বিশ্বাস নেই, তাই অপরকে বিশ্বাস করতে পারি না l
এই সব কিছুর মাধ্যমে আমরা পরকালে স্বর্গ পাবার প্রত্যাশায় আমাদের এই ইহজীবনটাকেই নরক যন্ত্রণাময় করে তুলি l স্বর্গ স্বর্গে থেকে যায়, পৃথিবীতে নরক নামিয়ে এনে আমরা পৃথিবীকে বাসের অযোগ্য করে তুলি l
ধর্ম নিয়ে যুগ যুগ ধরে পৃথিবী জুড়ে কত হানাহানি চলেছে l কবিতাটির মধ্যে পেলাম ধর্মের এক সরল উদার সংজ্ঞা যা বলে ধর্ম হল মানুষের নিজের বিশ্বাস l এটা প্রমাণ করার বিষয় নয়, জাহির করার বিষয় নয় l প্রত্যেকের বিশ্বাস তার নিজের মতো l কারও বিশ্বাস বলপূর্বক কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না l এটা নিয়ে হানাহানি করা মানবজাতির পক্ষে শোভন নয় l


কবিতাটি এভাবেই আমার বোধে ধরা দিয়েছে l খুব ভালো লেগেছে কবিতাটি পড়তে l মনন সমৃদ্ধ l
কবিকে আমার শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই l


কবিতার পাঠোদ্ধারে আসরের কবিগণ যদি আলোচিত কবিতাটি সম্পর্কে তাদের মনোভাব প্রকাশ করে পাঠক-আলোচকদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন, তাহলে আধুনিক কবিতা সম্পর্কে যে অভিযোগটা করা হয়, আধুনিক কবিতা নাকি দুর্বোধ্য, সংবাদপত্রের স্তম্ভের মতো কবিতার আকারে সাজানো কিছু অর্থহীন, ভাবহীন কথার সমষ্টি - এই জটটাই কেটে যাবে l আধুনিক কবিতা কিছু পাঠকের কাছে যদি তার অর্থ, তার আনন্দভাব তার নিজ অবয়বে মেলে ধরতে না পারে. সেক্ষেত্রে কিছু উৎসাহী পাঠক-আলোচক এবং কবি স্বয়ং যদি সেই কবিতার পাঠোদ্ধারে এগিয়ে আসেন , সে তো কবিতার পক্ষে ভালোই l এতে করে কবিতা পাঠকের সংখ্যা বাড়বে এবং কবিতা চর্চার পথ প্রশস্ত হবে l


প্রাসঙ্গিক :
১) কবি খলিলুর রহমান রচিত "গন্তব্য" কবিতার ওপর আলোচনা ০১-০৫-২০১৭ তারিখ l তার লিঙ্ক :
http://www.bangla-kobita.com/jchowdhury298/discussion-on-gontobyo-thirty-seven/