প্রেম এক অনন্য অনুভব l সকলের জীবনেই আসে l মানুষের বেঁচে থাকার আনন্দ, শান্তি অনেকটাই নির্ভর করে প্রেম সম্পর্কের সফলতার ওপর l
একটা বয়সে শরীর যখন তৈরি হচ্ছে, মনের মধ্যে প্রেমের এক আবেশ আসে l অনেক অনেক বন্ধুর মধ্যে বিশেষ একজনকে একটু বেশি মনে ধরে l তার সঙ্গে এক গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে l পরস্পরকে না দেখলে মন কেমন করে l সবসময় কথা বলতে ইচ্ছে করে l উঠতি বয়সে এই যে বিপরীত লিঙ্গের একজনকে ভালো লাগার বোধ তৈরি হয়, এটা মোহ নাকি ভালবাসা - সর্বদা তা বোঝা যায় না l জীবনে এই প্রথম কাউকে ভালো লাগাকে প্রেম বলে মনে হয় l সময় এগোয় l সেই সম্পর্কও ঘনিষ্ঠতর হতে থাকে l কিন্তু প্রেমের এই যাত্রা সকলের একভাবে, একপথে চলে না l ব্যক্তিভেদে তার গতিপথ, প্রকাশ ভিন্ন হতে পারে l প্রেম আবেগ দিয়ে শুরু তো হয়, কিন্তু পরবর্তীতে নানা ধরনের জটিলতা আসে l কখনো পারিবারিক বাধা, কখনো নিজের মধ্যেই অন্যরকম চাওয়া, নানা রকমের বৈষয়িক হিসাবনিকাশ, কিংবা স্রেফ ভুল বোঝাবুঝি - যে কোনো কারণে প্রথম প্রেমের এই সম্পর্কের যবনিকাপাত হতে পারে l তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় প্রথম প্রেম জন্ম যেমন নেয়, তেমন বহু ক্ষেত্রেই এই সম্পর্কের অকালনিধন হতে দেখা যায় l
ভিন্ন সম্পর্কে জড়িয়ে যায় মানুষ l মনে হয় যেন প্রথম প্রেমের কোনো রেশ আর রইলো না l কিন্তু বাস্তবে তা হয় না l জীবনের প্রথম প্রেমকে খুব সহজে ভোলা যায় না l
কবি এম. আশিকুর রহমান (কৌশিক কবি) "সরল স্বীকারোক্তিতে খোলাখুলি ক্ষমা প্রার্থনা" কবিতায় জীবনের এমন এক অনুভবকেই মেলে ধরেছেন l
প্রথম প্রেমের অপমৃত্যু নানা কারণে হতে পারে l কখনো পরিস্থিতি কারণ হয় l কখনো বা প্রেমিকযুগলের কোনো একজনের কারণেও তা হতে পারে l যদি তা-ও হয়, তাহলে যার কারণে এই বিচ্ছেদ হলো, সেও প্রথম প্রেমের এই স্মৃতিকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারে না l অন্য কারো সাথে জীবনের পথে গেঁথে গেলেও সেই প্রথম প্রেমের স্মৃতি যখন তখন মনকে ব্যাকুল করে তোলে l কবি কিছুতেই তাঁর প্রথম প্রেমকে ভুলতে পারেন না l তাঁর হয়তো জানাও থাকে না, তাঁর সেই প্রথম প্রেমিকা বর্তমানে কোথায় আছে, কেমন আছে l কিন্তু তার কথা তিনি এতটাই ভাবেন যে প্রতিদিন স্বপ্নে তাঁকে দেখেন l অতীতের সেই স্মৃতি তাঁকে ব্যথিত করে l লুকিয়ে তিনি কাঁদেনও l
এই ব্যথার কারণ তাঁর অনুশোচনা l যেহেতু এই সম্পর্ক ভাঙার ক্ষেত্রে অপরাধটা তাঁর দিক থেকেই হয়েছিল l এই অপরাধবোধ প্রতি মুহূর্তে কবিকে বিদ্ধ করে l তিনি তাঁর ভুল স্বীকার করেন এবং হাত জোড় করে তাঁর সেই প্রথম প্রেমিকার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন l
কবির মনে হয় তাঁর প্রথম প্রেমিকা তাঁর অপরাধ ক্ষমা করে নি এবং তাঁর ওপর রুষ্ট হয়ে তাঁকে অভিশাপ দিয়েছে l এই বিশ্বাস থেকে কবির মনে হয় যে তিনি ভালো নেই l প্রথম প্রেমিকার অভিশাপ নিয়ে তিনি ভালো থাকতে পারেন না l তাঁর অপরাধবোধ তাঁকে কষ্ট দেয় l যন্ত্রণাবিদ্ধ হন তিনি l
বন্ধুদের মাধ্যমে তিনি তাঁর সেই প্রেমিকার উদ্দেশে বার্তা পাঠান যে তিনি এখনো তাকে মনে মনে খুব ভালোবাসেন এবং তার শুভাকাঙ্ক্ষী l যেহেতু প্রথম প্রেমের সম্পর্ককে অমর্যাদা করে তিনি নিজেই দূরে সরে গিয়েছিলেন, তাই নিজেকে বেইমান বলে মেনে নিতে তাঁর কোনো সঙ্কোচ নেই, এবং তারপরও পুরনো প্রেমের অধিকারে তিনি প্রতিদিন তাঁর প্রেমিকার ভালো থাকাই কামনা করেন l বন্ধুদের মাধ্যমে প্রেমিকার কাছে কবির অনুরোধ তাঁর অপরাধ ভুলে গিয়ে সে যেন তাঁর অভিশাপ ফেরত নেয় এবং কবিকে ক্ষমা করে দেয় l কবির আরও অনুরোধ তাঁর প্রথম প্রেমিকা প্রতিদিন নিয়ম করে যেন তাঁর স্বপ্নে আসে এবং তাঁর অপরাধ স্মরণ করিয়ে তাঁকে যেন কাঁদায় l এইভাবে কান্নার জলে
প্রতিদিন একটু একটু করে পরিশুদ্ধ ও অভিশাপমুক্ত হতে চান তিনি l এবং এভাবেই তিনি তাঁর প্রেমিকার সঙ্গে পুনরায় প্রেমের সম্পর্কে যুক্ত থাকবেন l এই স্বাধীনতাটুকুর মাধ্যমে পুনরায় তিনি তাঁর হারিয়ে যাওয়া প্রেমে অনুরক্ত থাকতে চান l


প্রথম প্রেম জীবনে যে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, কোনো অবস্থাতেই যে তাকে পুরোপুরি বিস্মৃত হওয়া যায় না, সারা জীবন যে এই প্রেমের স্মৃতি মানুষকে তাড়া করে বেড়ায়, এবিষয়ে কোনো অপরাধবোধ থাকলে তা যে সারাটা জীবন অনুশোচনার আগুনে জ্বালিয়ে মারে, ক্ষমা চাইতে চাইতে বাকি জীবনটা পার হয়, কিন্তু ক্ষমা মিলল কি না এবিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না - কবিতাটির মধ্যে এই বিষয়গুলিই তুলে ধরেছেন কবি l
কবিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন !