১) অমৃতভাষণ :


দেশ বলতে বুঝি দেশের মানুষ
আর তাদের নিত্যদিনের সুখ দুঃখ l
সুখকে মনে রাখে না সে,  
কিন্তু দুঃখকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে l
সমস্ত দুঃখকে দিবসে রূপ দিয়ে
বছরভর তা পালন করে l
অতীত দুঃখকে স্মরণ করে শ্লাঘা অনুভব করে l  
এমনই এক পনেরোই আগষ্টে
তেরঙা পতাকা আকাশে তুলে
ভাববিভোর হয় সে l
স্মরণ করে শহীদদের আত্মত্যাগের l
কিসের জন্য এই ত্যাগ ?
অনুষ্ঠানমঞ্চের দূরে বঞ্চিতরা
চোখে অনেক প্রশ্ন নিয়ে
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে l
বাতাসে পতাকা উড়তে থাকে l  
দেশাত্মবোধক গান আবৃত্তি চলে
আর থেকে থেকে অমৃতভাষণ l


২) ধাঁচা :


রিমঝিম বৃষ্টিতে ঝিমঝিম মাথা
এর মাঝে এসে পড়ে দিন স্বাধীনতা l
স্বাধীনতা বড়ো প্রিয় প্রিয়তম বলতে
নিজ খুশি হাঁটো চলো প্রিয় কথা বলতে l
স্বাধীনতা মানে নয় যা খুশি করবো
মূল কথা দায়ভার নিজ কাঁধে বইবো l
এক থেকে দশজন দশ থেকে লক্ষ    
নিজ নিজ দায় নেয় সকলেই দক্ষ l
নিজে বাঁচো আর দেখো সকলের বাঁচাটা
দেশ ও দশের ভালো তবে বাঁচে ধাঁচাটা l


** পত্রানু, (কবিকথা) ১৫ আগস্ট,২০১৯ এ প্রকাশিত


৩) স্বাধীনতা কি তার মানে ?  


স্বাধীনতা কি তার মানে
সবাই কি তার অর্থ জানে ?
অর্থ নিয়ে বিবাদ চলে অনেক অর্থ আবাদ করে
শহীদ দিলো জীবন তাঁদের অনেক স্বপ্ন বুকে ধরে l
মন্ত্রীমশাই আমলা যতো
স্বাধীনতা তাঁদের মতো l
লক্ষ যুবক শিক্ষা শেষে বেকার হয়ে পথে ঘোরে
লক্ষ টাকার পুঁটলি নিয়ে কতো নেতার পিছু ধরে l
ফসল আবাদ করে কৃষক
তারই ঘরে বুভুক্ষু শোক
ভোজে ভাতে অন্ন নষ্ট কতো কতো ধনীর ঘরে
পথের শিশু ভিক্ষা করে পথে জন্ম পথে মরে l
স্বাধীনতা ওড়ায় ধ্বজা
মন্ডা মিঠাই মিষ্টি গজা
পথে নারী আতঙ্কিত পরপুরুষের ঘাতক টানে
স্বাধীনতা কি তার মানে সবাই কি তার অর্থ জানে ?


৪) স্বাধীনতা ২০১৯ :


আকাশে ও বাতাসে আজ স্বাধীনতার সুর
গানে ছড়ায় কথার মালায় ফুলেল সুমধুর l
প্রভাতফেরি খুকু খোকার তেরঙা তার হাতে
ধ্বনি ওঠে দেশের নামে আগষ্ট সুপ্রভাতে l


সোনার দেশে বর্গী এলো মীরজাফরের দোষে
দিনে দিনে লুন্ঠিত দেশ বিজাতীয় রোষে l
শস্যশ্যামল সজল ভূমি অগাধ মণির আধার
সাগরপারে হলো চালান নেই তো কিছু বাধার l


অনেক স্বপ্ন বুকে নিয়ে শহীদ হলেন যাঁরা
স্বাধীন দেশে স্বপ্ন তাঁদের হলো কি সব হারা ?
শিশু কাঁদে মায়ের কোলে যুবকরা সব হতাশ
দুর্নীতির এই লুটতরাজে দুষ্ট দেশের বাতাস l


বলছে সবাই নিচ্ছি মেনে স্বাধীনতা পেলাম
সত্যি তো আর এখন আমরা নেইকো কারুর গোলাম l
কিন্তু এ তো রাজনীতিক, অর্থনীতিক নয়
এখনও তো বহু মানুষ অর্ধভুক্ত রয় l


৫) স্বাধীনতা নামটি :


স্বাধীনতা নামটি শুনলেই
রক্তে শিহরণ খেলে যায়
হৃদয় নেচে ওঠে
মন গুনগুন করে গান শুরু করে l
জীবনভর বহু বহু স্তরে
অসংখ্য পরাধীনতা পেরিয়ে
ধাপে ধাপে আমরা স্বাধীন হই,
অধীনতার অন্তঃসলিলাকে স্বীকার করে l


জন্মেই জুড়ে দিই কান্না
এই কান্না অবোধের, অজ্ঞতার l
টুপ করে একটা জগতে এসে পড়েছি
কিছুই করতে পারি না নিজে
সব বিষয়ে পরনির্ভর অর্থাৎ পরাধীন l
তারপর বসতে শিখলাম, দাঁড়াতে তারপর ছুটতে l


ছোটার অর্থ হচ্ছে থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে
আবার শৃঙ্খল পড়লো পায়ে
শুভানুধ্যায়ীরা বিপদ এড়াতে চোখে চোখে রাখেন l
তারপর অনেক বাধানিষেধ অনুমতি সতর্কতা
স্কুল কলেজজীবন পেরিয়ে স্বাবলমী হলাম,
সেটাও একটা স্বাধীনতা l
এবার দায়িত্ব চাপলো ঘাড়ে l
লাগামহীন জীবনে রাশ পড়লো l
আবার পরাধীনতা
সকলের চাহিদা অভাব পূরণ করো
সেই দায়িত্ব পালনে নিজের শখ আল্হাদ
আপাতত গঙ্গার জলে l


ব্যক্তিগত স্তরে
এই সিরিয়াল স্বাধীনতা পরাধীনতার মাঝে
জাতির জীবনে সামগ্রিক পরাধীনতা আসে
যখন বিশ্বাসকে হত্যা করে
কোনো এক মীরজাফর
শত্রুর সাথে হাত মেলায় l
প্রায় দুশো বছর স্বাধীনতা নেই l
তারপর অনেক আন্দোলন আলোচনার শেষে
পেলাম স্বাধীনতা l
কিন্তু সেখানেও ফাঁক  !!
স্বাধীনতার প্রসাদে কেউ রাজা, উজির, মন্ত্রী
কেউ বা পথের ভিখারী l


এর মধ্যেই প্রতি বছর পনেরোই আগষ্ট আসে যায়
তার নিজের মতো করে
আর দেশের মানুষ স্বাধীনতা দিবস পালন করেন  ঘটা করে l


৬) স্বাধীনতার স্বর :


একটা ছেলে দুষ্টু বড়ো একটা ছেলে শান্ত
আজব তাদের রকম সকম সকলে বিভ্রান্ত ।
দুষ্টু ছেলে বলে - লড়েই নিবো স্বাধীন দেশ
শান্ত ছেলে বলে - হিংসা ছড়ায় শুধুই দ্বেষ ।


যাঁরা শুধু করে শোষণ শাসন করার নামে
কিসের শান্তি তাঁদের সাথে লড়বো অভিমানে ।
স্কুল জীবনে তার প্রমান দিলেন বারংবার
বহু ঘটনা ঘটিয়ে নায়ক, পেলেন বহু তিরষ্কার ।
দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ গিয়ে সেনা পল্টন গড়েন  
স্বাধীন তিনি করেন ভূমি অসম লড়াই লড়েন ।


আরেকজন শান্তিকামী অসহযোগের পথে
অহিংসার নীতি ধরেন জন চেতনা ছোটে l
পৌঁছে গেলো কোণে কোণে আন্দোলনের কথা
লক্ষ লক্ষ মানুষ ভাঙেন তাঁদের নীরবতা ।
এগিয়ে এলেন সকল মানুষ দেশের ডাকে তাঁর
দেশজুড়ে ক্রমে হলো চেতনার বিস্তার ।


উভয় পথে স্বাধীনতা তবু একটু খোঁচা
নাকটা হলো বোঁচা l
শত্রু দমন করে নয় গো, নয় শত্রুকে মেরে
বোঝাপড়ার স্বাধীনতায় জিতেও গেলাম হেরে l
দেশভাগ করলো তাঁরা হলো ক্ষমতা হস্তান্তর
বৃটিশ কক্ষের আইনপাশে শুনি স্বাধীনতার স্বর ।


৭) স্বাধীনতা :


আমাদের দুটো স্বাধীনতা দিবস
পনেরই আগস্ট এবং ছাব্বিশে জানুয়ারি l
পনেরই পেলাম স্বাধীন দেশ
আর ছাব্বিশে নিজের সংবিধান l
দুটো পরস্পরের পরিপূরক
একটা না থাকলে অপরটি অর্থহীন l


এখন পর্যন্ত কেন্দ্রে এবং রাজ্যে
বহুবার সরকার এসেছে এবং গেছে
আমাদের মতদানে l
সাতচল্লিশ থেকে এই শতকের আঠারো,
অনেক পরিবর্তিত আমাদের দেশ l
পরিবর্তন নিয়ে বিতর্কও অনেক l
কোন্ দিকে পরিবর্তন ?


সবাই জনকল্যাণ করতে মরীয়া l
তবু জনগণ সংকটে l
স্বাধীনতা অল্প কিছু লোকের কুক্ষিগত
অধিকাংশ মানুষ ভয়ে জড়োসড়ো l
যার থেকে ভয়
তার বিরুদ্ধে নালিশ নেয় না কেও l
তবু আমাদের দুটো স্বাধীনতা দিবস l


মেয়েরা পথে প্রবাসে নিজ গৃহকোণে লাঞ্ছিত
দুর্বলের ওপর অশুভের আঘাত নিত্য ঘটনা
দারিদ্র্য, অশিক্ষা, দুর্নীতি, হিংসা নিত্যসঙ্গী
তার মধ্যেই
অনেক রাষ্ট্রীয় জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনা l


আমরা স্বাধীন,
আমাদের দুটো স্বাধীনতা দিবস l


৮) অস্ফুটবাক :


অবলা নয় অবলা নয় নয়
যা কিছু বলার সব আজ বলা হয়ে যাক
যুগান্তরের মর্মব্যথা প্রতি কোটরে আছে
মুখ ফুটে বাক রূপ পেয়ে যায় সব গাছে
সব প্রয়োজনে মহাজন গাছ টেনে চলে
জীবন জীবিকা যতো তারই পথ ধরে চলে
তবু নিজ প্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন হাসি মজা
আঘাতে আঘাতে অকারনে গাছ পায় সাজা l


বৃক্ষেরা আজ আওয়াজ তুলেছে স্বাধীনতার
আকারে প্রকারে প্রতিবাদী বিরোধ নীরবতার
দেহ ফুঁড়ে মুখের আকার যুগ যুগ ধরে আঁকে
যতো ক্ষোভ অভিমান ফুটে মুখের বাঁকে বাঁকে
সংবেদী মন শুনেছে সে স্বর আধার নিয়ে তা ধরে
গাছের ব্যথা প্রতি দুখকথা বলে তার মতো করে l


৯) মিঠে হতো স্বাধীনতা


বাংলা মায়ের দামাল ছেলে সুভাষ চন্দ্র বোস
বৃটিশ সূর্য যায় না অস্ত এত যে তার রোষ
সেই বৃটিশ গেলো স্বদেশ আমরা হলাম স্বাধীন
গল্প গানে ছড়া টানে আমরা নাচি তা ধিন ।


ইতিহাসের পাতায় দেখি পরমানুর পথে
বিশ্বযুদ্ধের পরিনামে মিত্রশক্তি জেতে
সুভাষ গেলেন নিখোঁজ হয়ে কালের অসীম স্রোতে ।


বছর বছর কাটতে থাকে এলেন সুভাষ, ভাবি
কতো কতো সাধু সন্ত কতো রকম ছবি ।


স্বাধীন দেশে অনেক নেতা নেতাজীর অভাব
সবাই ভাবেন  
থাকলে তিনি দেশটা হতো বিপরীত স্বভাব ।
সবাই ভাবেন তিনি এলে হতো কেল্লা ফতে
মিঠে হতো স্বাধীনতা হতো না তা তিতে ।


১০) আজগুবি বায়না :


করেছেন তিনি এক আজগুবি বায়না
ছড়া চান এক্ষুনি তর তাঁর সয় না l
দিয়েছেন শর্ত লেখনীর জন্য
ছড়া চান ছড়া চান নয় কিছু অন্য l
একখানি ছড়া চান স্বাধীনতা বিষয়ে
ছোট বড়ো যাই হোক ছড়া হোক তাই নিয়ে l
বেলা যায় দিন যায় কলম তো খোলে না
না জানি কি হলো তাঁর চাপেতেও দোলে না l
শুধু তাঁর বায়না
আর কিছু চায় না
এক হাতে ছড়া দাও নয় নয় কবিতা
লেখনী এমন হবে যেন এক ছবি তা l


১১) স্বাধীনতা তুমি :


স্বাধীনতা - তোমার নামে আছে কতো জাদু
অধীন দেশে তোমার টানে ছেলে বুড়ো দাদু
ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে আন্দোলনে ভাসে
একের পর এক স্বার্থ ছাড়ে নিজের সর্বনাশে l


বিদেশ শক্তি তারা নয়তো ছেড়ে দেবার পাত্র
কায়দাকানুন আছে যতো চালায় অহোরাত্র
প্রলোভনে প্রলোভনে মানুষকে নেয় কিনে
খেতাব রত্নের ছড়রা ছোটে, আনুগত্য ঋণে l


রাজনীতিতে জয়টা পেয়ে সবখানেতে হাতায়
ভাষা সঙ্গীত সংস্কৃতি বিদেশ রঙে মাতায়
তাদের ভাষায় শিক্ষিতরা সরকারেরই গোলাম
বিদেশ রঙে সেজে ভাবে - না জানি কি হলাম l


সবের মাঝে দামাল যারা বিদেশীদের কাঁপায়
আন্দোলনে আন্দোলনে বারে বারে ঝাঁপায়
গানে ছড়ায় নাটক গল্পে লেখক এবং কবি
সামনে তাদের তুলে ধরে স্বাধীনতার ছবি l


যতোই বাধা রাখুক পথে বিদেশী ও গাদ্দার
জীবন দিয়ে স্বাধীনতা সূর্য ওঠে আরবার
স্বাধীন দেশে স্বাধীন শাসক মানুষমুখী নীতি
উন্নয়নটা এগোয় যদি পথ দেখায় সম্প্রীতি l


স্বপ্ন দেখে অধীন মানুষ স্বাধীন পুরো হবার  
সঠিক অর্থে স্বাধীন জীবন এটাই তো অঙ্গীকার
কিন্তু যদি পদে পদে মানুষকে দাও পিষে
স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ হারায় যে তার দিশে l


যেমন ছিলো অধীন দেশে রায় বাহাদুর খেতাব
স্বাধীন দেশেও রকমারি সাংবিধানিক বেতাব
তাদের তলে চাপা পড়ে মানুষ হলো কাহিল
তাদের শুধু খেতাব জোটে গোঁয়ার এবং জাহিল l