(এম. এ. পাশ করার পর ১৯৮৩ সালে যখন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে চাকুরিতে যোগদান করি, তখন বেতন ছিল ১০২৮.০০ - এক হাজার আঠাস টাকা মাত্র l  বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম l আগে থেকে সেই বাড়ীতে আরও দুজন ভাড়া থাকত l প্রবীর দত্ত এবং অরবিন্দ খাসনবিশ l প্রথমজন শিক্ষক ও দ্বিতীয়জন স্থানীয় ডাকঘরের কর্মী l উনিও এম. এস. সি. পাশ ছিলেন l ছাত্র পড়াতেন l তাই তিনিও শিক্ষক হিসাবে গণ্য ছিলেন l ঐ সময় আমাদের এই তিন শিক্ষক দ্বারা একটা অপরাধ হয়েছিল l তার শাস্তিও পেয়েছিলাম l অনুশোচনার  গ্লানিতে প্রায়শ্চিত্তও করেছিলাম l সেই সময়ে স্বল্প বেতনে সবদিক কুলিয়ে উঠতে পারিনি বলে হয়তো কাঁচা বুদ্ধিতে অন্যায়টা হয়েছিল l আবার কিছুটা হাসি-মজার ছলেও হয়ে থাকতে পারে l কিন্তু অন্যায়, অন্যায়-ই হয় l কোনো অজুহাতেই তাকে খাটো করে দেখা যায় না l তাই আজ কোনো নাম গোপন না করে তৃতীয় পক্ষ হিসাবে ঘটনাটি পদ্যে নিবেদন করলাম l পদ্য - তাই একটু রসাত্মক করতে চেয়েছি l)


বিচার


যাদব চৌধুরী স্যার ইংরাজি মাস্টার যোগ দেয় স্কুলে কাজেতে
ইটাহার ছোট গ্রাম বাসা পেতে কালঘাম শেষে ঢোকে ছোট্ট বাড়ীতে l
কল্যাণী মজুমদার হয় বাড়িয়ালি তার সঙ্গেতে আরও দুই ভাড়াটে
খাস অরবিন্দ নবিশটা সঙ্গ আর প্রবীর দত্ত সাথে l


হোটেলেতে খান না ঘরে হয় রান্না বাসনটা মেজে দেয় মাসীতে
হয় মজা গল্প বেতনটা অল্প চালাকিতে পড়ে মাসী ফাঁকিতে l
একদিন পড়ে ধরা মাসীটার চোখ কড়া তিনখানা এঁটো থালা মাজে সে
দু-জন বেতন দেয় মাসীটাও তাই নেয় বাড়তি থালাটা কেন আসে ?
জুড়ে দেয় ধর্ণা নাম তার ঝর্ণা, "ব্যাখ্যাটা দিতে হবে আজকেই,
দু-জন বেতন দেয়, তিনজন খেয়ে নেয়, বিনা পয়সায় শুধু ফাঁকিতেই ?"
একদিন নয় তায় দিন বেশ কয়টায় তিনখানা থালাকে মাজে সে
এমনটা সম্ভব যদি আসে বান্ধব, রোজ রোজ কার ঘরে আসে কে ?
"চাই না ঠকিতে পড়ে গিয়ে ফাঁকিতে কাজ করে চাই তো বেতনটা,
তোমরা তো মাস্টার শিক্ষা তো বিস্তার কেন ফাঁদে পড়ে এই মাসীটা ?"


তিনজন মাস্টার ভেবে ভেবে একসার বেতন যে তাহাদের অল্প,
কি - যে করে, ভেবে মরে, বাড়িয়ালি সাথে করে গল্প l
কল্যাণী দিদিটা, খাসা তার বুদ্ধি-টা তার ঘরে অনেক তো মেম্বার
একখানি এঁটো থালা ঘরে তার হবে ফেলা - এই সমাধান তার l
মাসী-কে ডেঁটে বলে ভুল ছিলো গোনাকালে থালা ছিলো বরাবর দুইটাই
কালকে প্রমাণ হবে থালা যবে গোণা হবে মাসীটাও মেনে নেয় তাই l
যেমনটা ঠিক ছিলো থালা তো দু-টাই হল ভ্যাবাচ্যাকা মুখ হল মাসীটার
গরীবের টাকা মেরে পাপমন অন্তরে আড়ালেতে হাসে তিন মাস্টার l


এ তো গেল গল্পটা হয়েছিল ঠিক এটা অভাবে স্বভাব যায় কালেতে
বিবেকটা পরে জাগে মনে বড়ো ব্যথা লাগে জুতসই বিধাতার মারেতে l
একদিন রাতেতে মনের ভুলেতে স্টোভখানি থেকে যায় বাইরে
সকালেতে মনে পড়ে দরজাটা খুলে ঘরে কোনোকিছু নাই সেথা হায় রে !
মাসীটাকে ঠকিয়ে টাকা কিছু বাঁচিয়ে ভেবেছিল জিতে গেছে খেলাটা
ঈশ্বর আড়ালে ভুলখানি করালে চুরি গেল রান্নার স্টোভটা l


মন ভরে গ্লানিতে দহে অনুতাপেতে মাসীটার বেতনটা বাড়ে
সমান যে চোখ তার বিচারটা ন্যায় তার বিধাতার এই সংসারে l