কথা কর্কশ, সোজা সাপটা
মাঝে দু একটা ইংরাজি শব্দ
বছরের পর বছর ছোট্ট এক গুমটিতে
কুবেরের চায়ের দোকান ছিল
আমাদের টিফিনকালীন আড্ডার জায়গা l


সামান্য জিনিসপত্র
স্কুল থেকে অল্প পথ l  
প্রতিদিন চল্লিশ মিনিট
দিনের সেরা সময় কাটত ওই দোকানে l
এড়িয়ে যেত অনেকে,
আর সেই কারণেই নিরিবিলির খোঁজে
দোকানটা ছিল আমাদের সেরা পছন্দ l


চণ্ডীদা, প্রশান্তবাবু, সমীরবাবু, শেখরবাবু,
বিপ্লববাবু, রঞ্জনবাবু, সুকুমার এবং আমি l


নিয়মমতো প্রতিদিন
চণ্ডীদা একটা নিরীহ প্রশ্ন রাখতেন l
সহজ প্রশ্ন, যার উত্তর খুব সহজ l
সুকুমার, প্রশান্তবাবু, শেখরবাবু
পরপর সব বাবু এক এক করে
উত্তর দিয়ে যেতেন l
প্রশ্নটা যে সহজ নয়
তার যে কোনো উত্তর হয় না
সেটা বুঝতে টিফিন শেষ হত প্রতিদিন l
আর পালা করে শেষ হত
কোনোদিন চিনি তো কোনোদিন চা
আবার কখনো বিস্কুট l
গ্যাসে জল চাপিয়ে কুবের ছুটত
সেগুলি আনতে l
কখনো চা মুখে বিস্কুটের জন্য
কখনো বিস্কুট হাতে চায়ের জন্য
অপেক্ষা করেছি গোটা টিফিন l


কিছু টুকরো স্মৃতি -
চণ্ডীদা বসতেন দোকানের পেছন দিকে
ছোট্ট একটা দরজা
সেখানে এক ভাঙা চেয়ারে
একদিন অসাবধানে পড়ে গেলেন l
বিপ্লববাবুর অসুখযন্ত্রণার গল্প শুনে
আমি জ্ঞান হারালাম একদিন l
কুবেরের গরু কেনার গল্প l
এক রাতে চুরি হলো কুবেরের দোকানে
পরদিন তার খোঁজখবর l
সমীর-শেখর-প্রশান্ত ত্রয়ীর
বিপজ্জনক সব ভ্রমণের গল্প l

ব্যবসায় উন্নতির জন্য
প্রচুর পরামর্শ দিয়েছি কুবেরকে l
সবথেকে বেশি দিয়েছেন রঞ্জনবাবু l
যদিও পরামর্শের তুলনায়
অর্থের প্রয়োজন ওর কাছে বেশি ছিল l
কিন্তু ওর অপেশাদার মনোভাব আর  
লাগামহীন কথাবার্তায়
ওকে টাকা দেওয়া ঝুঁকিহীন ছিল না l


সমীর শেখর প্রশান্ত বিপ্লব -
বাবুরা সব অবসর নিয়েছেন
সুকুমার চলে গেল কলেজে
চণ্ডীদা অবসর নিয়েছেন জীবন থেকে l
দোকান চলে না দেখে
কুবের গেছে দিল্লি কাজের সন্ধানে l


এখন রঞ্জনবাবু আর আমি
পাশে অন্য একটা দোকানে টিফিনে বসি
অন্য অনুজ সহকর্মীদের সাথে l
আর হ্যাঁ, দুবছর পর আমিও অবসর নিব l