কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর "পদ্মিনী উপাখ্যান" কাব্যে স্বাধীনতার জয়গান গেয়েছেন :
"স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায় ?
দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,
কে পরিবে পায়।।
কোটি কল্প দাস থাকা নরকের প্রায় হে,
নরকের প্রায়।
দিনেকের স্বাধীনতা, স্বর্গ-সুখ তায় হে,
স্বর্গ-সুখ তায়।।.."


আধুনিক কবি শামসুর রহমান তাঁর "স্বাধীনতা তুমি" কবিতায় একের পর এক উপমা ব্যবহার করে স্বাধীনতার সৌন্দর্য্যময় রূপটিকে ধরতে চেয়েছেন :
"স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি l"


কবিকূলে স্বাধীনতার খুব কদর l প্রায় সব কবি স্বাধীনতা বিষয়ে কবিতা লিখতে আগ্রহী l মানবসমাজেও স্বাধীনতার প্রতি সমান আগ্রহ l কেউ পরাধীন থাকতে চায় না l বলতে গেলে সকলেই স্বাধীনতার পূজারী l এখানেই মানবচরিত্রের বৈপরীত্যময় বৈশিষ্ট্যের পরিচয় মেলে l যে মানব কবিকূল স্বাধীনতার মাহাত্ম্য বর্ণনা করে কবিতা লিখছেন, তাদেরই সহোদর অন্য কেউ মানুষের স্বাধীনতা হরণ করছে l পৃথিবীর ইতিহাস মানবজাতির স্বাধীনতা হারানোর ইতিহাস এবং দীর্ঘ দীর্ঘ দিন অধীনতা বরণের ইতিহাস l মানবজাতি সম্বন্ধে, তার শ্রেষ্ঠত্ব, গৌরব সম্বন্ধে অনেক কথা বলা হয় l সেই সঙ্গে এটাও বলা যায় যে পৃথিবীতে যত রকমের প্রাণী এবং জীব আছে তার মধ্যে অন্যের স্বাধীনতা খর্ব করার মানসিকতা, ক্ষমতা এবং ট্র্যাক রেকর্ড (বিগত ইতিহাস) একমাত্র মানবজাতির আছে l অন্য কোনো প্রাণী বা জীব অপর প্রাণীকে পরাধীন বা বন্দী করে রাখে না l জীবেদের মধ্যে খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক আছে l কিন্তু মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী বা জীবের গায়ে 'স্বাধীনতাহরণকারী' তকমা নেই l আর মানুষ শুধু অপর একদল মানুষকেই পরাধীন করে থেমে যায় নি, সে তার স্বরচিত জেলখানার মধ্যে বন্দী করেছে তাবৎ প্রাণীকে l কখনো ভালোবাসার অভিনয়ে, কখনো হিংস্র শক্তির প্রয়োগে l বনের পশু, জলের মাছ, আকাশের পাখি, গৃহপালিত জীব - কাউকে বাদ দেয় নি l এই প্রাণীকূল তাঁদের এই অধীনতা কিন্তু খুশিমনে মেনে নেয় নি l স্বাধীনতার জন্য তারাও ব্যাকুল l
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "দুই পাখি" কবিতায় রূপক আকারে মানুষের সমাজে স্বাধীনতার মর্যাদা তুলে ধরতে গিয়ে পক্ষীসমাজের বন্দীজীবনের বেদনা ও স্বাধীনতাপ্রীতির গল্প শুনিয়েছেন :
"বনের পাখি বলে, ‘খাঁচার পাখি ভাই, বনেতে যাই দোঁহে মিলে।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘বনের পাখি আয়, খাঁচায় থাকি নিরিবিলে।’
বনের পাখি বলে, ‘না, আমি শিকলে ধরা নাহি দিব।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়, আমি কেমনে বনে বাহিরিব  l"