Painting : The Elephant Celebes, 1921
Artist : Max Ernst
Year : 1921
Medium : Oil on canvas
Dimensions : 125.4 cm × 107.9 cm (49.4 in × 42.5 in)
Location : Tate Modern, London


আলোচনা :
গতকাল এই আসরে কবি জীবনানন্দ দাশের "বেড়াল" কবিতা আলোচনা প্রসঙ্গে পরাবাস্তবতা বিষয়টি এসেছিল l পরাবাস্তবতা যেহেতু চিত্রশিল্পে ও কবিতায় একসাথে এসেছিলো তাই পরাবাস্তবতাভিত্তিক কবিতা পাঠ ও আলোচনা এবং  পরাবাস্তবতাভিত্তিক ছবি দর্শন ও আলোচনা একে অপরের পরিপূরক l তাই পরাবাস্তবতাভিত্তিক  কবিতা "বেড়াল" আলোচনার পর ম্যাক্স আর্নস্ট এর আঁকা ঐ শ্রেণীর একটি ছবি দিয়েছিলাম l ছবিটি পরাবাস্তবতাভিত্তিক একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছবি, বলা যেতে পারে ম্যাক্স আর্নস্ট-এর masterpiece l ক্যানভাসের ওপর তৈলচিত্র l
কবিতার ক্ষেত্রে দেখেছি এই শ্রেণীর কবিতার অর্থ কত বিচিত্র হতে পারে l ছবির ক্ষেত্রেও তাই l আজ এই ছবিটির কি অর্থ হতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করি l পরাবাস্তবতা বোঝার পথে আর এক পা এগোই l


ম্যাক্স আর্নস্ট (১৮৯১-১৯৭৬) হলেন একজন প্রখ্যাত জার্মান পরাবাস্তববাদী চিত্রশিল্পী, স্থপতি ও কবি l রোমান্টিসিজমের বিরূদ্ধে "দাদাবাদ" আন্দোলন প্রত্যাখ্যাত হলো l "দাদাবাদ" এর  বিকল্প হিসাবে পরাবাস্তববাদ এলো l তার উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এই ম্যাক্স আর্নস্ট l বিংশ শতকের তিরিশের দশকে যখন পরাবাস্তববাদের আনুষ্ঠানিক উদ্ভব, তখন ১৯২১ সালে তিনি এই চিত্রটি আঁকেন l
যেমন পরাবাস্তববাদী কবিতায় যে স্বপ্নময় চিত্রকল্প ব্যবহার করা হয় তার অর্থ উদ্ধারে বহু বিচিত্র ব্যাখ্যা আসে, এই চিত্রটির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে l
ছবিটিতে এক দৈত্যাকার প্রাণী দেখা যাচ্ছে l দেখতে অনেকটা হাতির মতো l সেটি কোনো ক্ষমতাশালী ব্যক্তির রূপক হতে পারে l কারণ তার পা দুটি l ছবিটির নীচে ডানদিকে মাথাহীন এক নগ্ন নারীমূর্তি l তার হাতের আঙ্গুল দিয়ে সে বিশালকায় মূর্তিটিকে দেখাচ্ছে l এর অর্থ কি হতে পারে ? কত তার ব্যাখ্যা l একটা ব্যখ্যা হলো, ঐ নারীমুর্তি কবির রূপক l সে বিশাল মূর্তিটিকে দেখাচ্ছে l কিন্তু সে নিজে মাথাহীন l অর্থাৎ, পরাবাস্তববাদী কবি বা শিল্পীরা কবিতা বা চিত্র যাই সৃষ্টি করুন সেটা বোঝা বা বোঝানোর মতো মাথা তাঁদের নেই l পাঠক বা দর্শক নিজের মাথা খাটিয়ে যা বোঝার বুঝে নিন l মাথাহীনতার আরও ব্যাখ্যা হল, এগুলি স্বপ্নে পাওয়া চিত্রকল্প l অবচেতন মনের কল্পনা l এখানে মাথা বা বুদ্ধির কোনো শাসন নেই l এগুলির নির্দিষ্ট অর্থ নেই l আবার থাকতেও পারে l যার মাথা আছে সে এর অর্থ বার করবে l
ছবিটির ওপরে বাম দিকে দুটি মাছ, তার সামনে একটি কালো দাগ l মাছ জলজ প্রাণী তথা জীববৈচিত্র্য এবং কালো দাগটি জেট প্লেন বা বোমারু বিমানের রূপক হতে পারে l ছবিটি যখন আঁকা হয়েছিল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) সবে শেষ হয়েছে l যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ম্যাক্স আর্নস্ট l বোমারু বিমানের হানায় বহু মানুষ ও অন্য জীবকুলকে  ধ্বংস হতে দেখেছেন l দৈত্যাকার ঐ প্রাণী স্বৈরাচারী, যুদ্ধ-উন্মাদ কোনো রাষ্ট্রনায়কের রূপক যার নির্দেশে জলে স্থলে এই হত্যালীলা চলেছে l প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তাঁর মনের ওপর কি ধ্বংসাত্মক প্রভাব বিস্তার করেছিল তার উল্লেখ পাই তাঁর আত্মজীবনীতে, যেখানে তিনি তাঁর সেনাজীবনের অভিজ্ঞতা বর্ননা করছেন এইভাবে  l ম্যাক্স লিখছেন, "On the first of August 1914 Max Ernst died. He was resurrected on the eleventh of November 1918."
"The Elephant Celebes" চিত্র তার প্রতিবাদ l


হাতির মতো প্রাণীটির টিউবের মতো হাত l সেই হাতে ধরা এক মহিষের মাথা l এই মহিষ এবং তার পাশে এক নগ্ন নারী মূর্তি - এক ভিন্ন ব্যাখ্যার জন্ম দেয় l এখানে মহিষটি হলো গ্রীক দেবতা জিউস এবং নারীমূর্তিটি হলেন ফিনিসীয় রমণী ইউরোপা l এই ইউরোপার নাম থেকেই ইউরোপ মহাদেশের নামটি এসেছে l
গ্রীক পূরাণের গল্প অনুযায়ী জিউস সুদর্শনা ইউরোপার রূপে মুগ্ধ হয়ে সাদা সুদর্শন মহিষরূপে তাকে হরণ করেন l ক্রীট দ্বীপে নিয়ে আসেন l স্বরূপ ধারণ করেন l ইউরোপা জিউসের পরিচয় পান l দুজনের দৈহিক মিলন হয় l এই মিলন ইউরোপার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছিল, নাকি তিনি স্বেচ্ছায় মিলিত হয়েছিলেন, সেটা নিয়েও বিতর্ক আছে l ইচ্ছার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে, কারণ জিউস তাঁকে হরণ করে নিয়ে গিয়েছিলেন l আর স্বেচ্ছায় বলা হচ্ছে, কারণ হরণকালে তিনি বাধা দেন নি l সখীদের নিয়ে ইউরোপা ফুলের বাগানে যখন ফুল তুলছিলেন, হাসি গল্পে মগ্ন ছিলেন, তখন ঐ সাদা মহিষটি তিনি দেখতে পান l তিনি মহিষটির কাছে যান, শান্তস্বভাব মহিষটিকে আদর করেন এবং নিজেই তার ওপর উঠে বসেন l এই সুযোগে মহিষরুপী জিউস ইউরোপা সহ উড়ে যান l এছাড়াও জিউস এর কাছ থেকে ইউরোপা উপহার গ্রহণ করেছিলেন এবং ক্রীট এর রানী হয়েছিলেন l হাতিটির পিঠের ওপর কিছু সামগ্রী দেখা যায় সেগুলি জিউস যে উপহারগুলি ইউরোপাকে দিয়েছিলেন তার রূপক হতে পারে l
এই মিলনের ফলে ইউরোপা গর্ভবতী হন এবং মাইনস-এর জন্ম দেন l এই মাইনস পরে ক্রীট এর রাজা হয়েছিলেন l
ম্যাক্স আর্নস্ট ছবিটির Caption সংগ্রহ করেছেন একটি German Nursery Rhyme থেকে যার প্রথম দুটি লাইন হলো
The Elephant from celebes
Has sticky yellow bottom grease."