কত নয়নের জল ঝরিছে বিফল নয়নে
কত পুষ্প অঞ্জলি দিলাম তোমার চরনে,
পরাণের সাথে খেলিয়াছি কত মরণ খেলা
শুধু তোমায় কাছে পেতে আমার সারাবেলা।


অনিন্দ্যসুন্দরী রাগিনী  সে করে অভিমান
রাখিয়াছিল মোরে কষ্টের মাঝে পর্বত সমান,
হঠাৎ আজি ফিরিল সে ভুলিয়া অভিমান
শিহরণ জাগে পরাণে শুনিয়া "ওহে প্রিয়তম!"


দূর পাহাড়ে ওই মেঘে ঢাকা চাঁদ
ভাঙ্গিয়াছ তুমি আজি যত মোর লাজ,
কোমল উষ্ণতায় তুমি ডুবায়েছ মোরে
প্রেমের অমরাবতী হইয়া এলে মোর দ্বারে।


নুতন রুপে দেখিয়াছি তারে অনেক দিবস পর
মন ভোলানো হাসিটা তাঁর সরসসুন্দর,
উজ্জল রক্তিম বর্ণ ঐ ওষ্ঠাধরের মাঝে
অর্ধ-নির্মিলিত আঁখি পরিপূর্ণ সাজে।


তোমার চুম্বন, আঁখির দৃষ্টি, সর্ব দেহমনে
তৃপ্ত হইয়াছে মন তোমার সোহাগ-সুধা পানে।
তব স্পর্শ, তব প্রেম, রাখিয়াছি যতনে
যেদিন থেকে পাইয়াছি তোমায় লাবণ্যবসনে।


এমনি কাটিবে আজি সারা যামিনী
প্রথম দেখিলাম তারে এমন নিরভীমানী।
সংগোপনে বলিয়া যাও যাহা মুখে আসে
অর্থ-হারা ভাবে ভরা অতি মৃদু ভাষে।


ছিলাম বসিয়া কত রজনী এই রজনীর আশায়
মিনতি তোমায় ওহে কামিনী যেয়ো না মোরে ভাসায়
রাখিব তোমায় বক্ষবাধি, বাহু দু'পাশে
আজন্মসাধন ধন সুন্দরী তোমায় রাখিব শয্যাপাশে।


বলিল সে, ললিত কপোলে, মৃদু হাসিয়া ভরে,
আমার এই লাবণ্য প্রবাহ সব তোমারই তরে।
ছিন্ন করিব না আর, এই হৃদয়ের পাল
পাড়ি দিতে হইবে মোদের যে, সমুদ্র বিশাল।


রবিঠাকুরের চারটি কবিতা আর নিজের কিছু লেখার সম্পাদনায় রচিত।