গাঙের কূলে বাড়ী আমার, গাঙের কূলেই ঘর
গাঙ বাতাসের ঝরঝাপটায় কাটাই বছর ।
গাঙচিল আর পানকৌড়ি এদিক সেদিক উড়ে,
এই উড়নে আমার মনও কোথায় যেন ঘুরে ?
বাবা আমার জলদাস, জলেই কেবল ভাসে
মাঝে মধ্যে কচ্ছপ যেন রোদ পোহাতে আসে ।
মায়ে করে বাড়ী বাড়ী ঝি কামলার কাজ,
একা ঘরে কাটাই আমি, সকাল, বিকাল, সাঁঝ ।
আমার বাড়ির গাছ গাছালি, পাখ পাখালী ভরা
কারো ছানা উড়ছে,কারো বাসা তৈরীর তাড়া
মা বলে বড় হয়েছি, আমি ভয়ংকরী !
নিজ হাতে তাই পড়িয়ে দিল তাঁতের ডোরা শাড়ি
পেঁচানো শাড়িতে পড়ে পড়ে যাই, আঁচল থাকেনা বুকে
নায়ের মাঝিরা মুচকি হাসে আমাকে দেখে দেখে ।
বর্ষাকালে রাত্রি জুড়ে বুক করে থর থর
ভোরে নাকি দেখি বাড়ী নদীর ভিতর !
ঢেউ যেন আছড়ে পড়ে আমায় শুধু কয়-
ঐ মেয়ে তুই একলা ঘরে,একটু কি নাই ভয় ?
কত লক্ষ বাড়ী খেলাম, মানুষ খেলাম কত ?
এমন সাহস কেউ দেখায়নি, অনুঢ়া তোর মতো ।
গাঙে আছে গাঙ শুশুকি, তারও আছে বুনি
মায়ের কাছে নদীর আরো কত কিচ্ছা শুনি ।
নদীর তীরে বিরাট হিজল, নিবিড় ছায়া তার
সুখ দুঃখে সান্তনা দেয়, পরম বন্ধু আমার !
মনটা যখন খারাপ লাগে, তার শিকড়ে বসি
পাতার সাথে কিছু কথা, ফুলের সাথে হাসি ।
বন্ধু আমার, ভাই আমার, একটা মাত্র গাছ,
এখন দেখি শত্রু একজন- লাগছে তারও পাছ ?
লম্বা ঝোলা, কালো প্যান্ট, চাদর দিয়ে গায়,
একটা যুবক ছায়ায় বসে কি লিখে খাতায় ?
লোকেরা কয়, লোকটা কবি, কবিতা লিখে
কবিতা কি নদীর বাতাস ? ছায়ায় পড়ে থাকে ?
দক্ষিনে কে বাজায় বাঁশি, শ্যামল দাসের ঘাটে
বাঁশির সুরে মনের ভিতর- কাঠ ঠো্করায় কাটে
উত্তরেতে কবির জ্বালা, দক্ষিনেতে বাঁশি
ইচ্ছে করে নদীর ঢেউয়ে কোথাও যাই ভাসি !
আমার যদি মরণ আসে, তোমরা শুনে রাখো
এই নদীটার হিজল তলায়, আমায় কবর দিয়ো ।
নদীর ঘাটে বাঁশরিয়া বাঁজায় যেন বাঁশি
কবর থেকে বাঁশির সুরে উঠে যেন আসি !
ধলেশ্বরীর তীরে আমার সোনাকান্দা গ্রাম
কবি যেন তাঁর কবিতায় রাখে গ্রামের নাম ।