''বয়লিং ফ্রগ সিনড্রোম'' একটা জনপ্রিয় মেটাফোর বা রূপক। একটা ব্যাঙকে যদি পানি ভর্তি পাত্রে রেখে, পাত্রটিকে উত্তপ্ত করতে থাকি; ব্যাঙটি পানির তাপমাত্রার সাথে সাথে নিজের শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রাখতে থাকে। কিন্তু একসময় পানির প্রচন্ড তাপমাত্রা ব্যাঙের শরীর আর মানিয়ে নিতে পারে না। তখন ব্যাঙটি ফুটন্ত পানির পাত্র থেকে লাফ দেয়ার স্বীদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু হায়! সে লাফ দিতে পারে না। কারন সে তার সমস্ত শক্তি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে ব্যায় করে ফেলেছে। অতঃপর, মৃত্যু অনিবার্য। তার মৃত্যুর কারন আসলে গরম পানি নয়; বিপদজনক পরিস্থিতির শুরুতে তার সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়া।


আজ সকালে আলোচনা সভায় যে পোস্টটি পড়েছি, তা হলো, কবি খায়রুল আহসানের ''কবি ও কবিতা নিয়ে'' প্রায় ঘণ্টাখানি সময় ব্যয় করে একটি নাতিদীর্ঘ মন্তব্য লিখেছিলাম আসরের বিভিন্ন কবিদের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য নেটসমস্যার কারণে মন্তব্যটি পোস্ট করতে পারিনি।


অফিস থেকে ফিরে এসে দেখি, পোস্টটি আলোচনায় নেই। হয়তো 'ব্যান' হয়েছে; নয়তো কবি নিজেই মুছে ফেলেছন। কোন লেখার অন্তর্নিহিত বক্তব্য সম্যক অনুধাবন না করে ব্যান করে দেয়া উচিৎ নয় বলে আমি বিশ্বাস করি।
আমার মন্তব্যটি ছিলো-


এ পোস্টটি পড়ার আগে অন্যান্য কবিদের মন্তব্যগুলো পাঠ করেছি এবং কোন কোন মন্তব্য একাধিকবার। অতঃপর, মূল পোস্টখানি পড়লাম। কবি মোঃ সানাউল্লাহ্ (আদৃত কবি)-এর মন্তব্যে যা বলা হয়েছে; তারপর কোরআনের  সুরা 'আশ-শুয়ারা'-এর উদ্ধৃতিতে গেলাম না।


কবিতা দু’প্রকার- একটি সত্য ও সুন্দরের, অপরটি ধ্বংসাত্মক, অকল্যাণকর, কুরুচিপূর্ণ বিভ্রান্ত চিন্তার ধারক।


সুরা ‘আশ-শুয়ারা’  নাজিল হওয়ার পর কতিপয় সাহাবি কবি কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে হাজির হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরাও তো কবিতা রচনা করি, এখন আমাদের উপায় কী? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আয়াতের শেষাংশ পাঠ কর।


আয়াতের একদিকে যেমন বিপথগামী কবিদের কথা বলা হয়েছে; অন্যদিকে তুলনামূলক পর্যালোচনার মাধ্যমে সত্য ও সুন্দর এবং ঈমানদার কবিদের শ্রেষ্ঠত্ব নির্বাচন করে তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে।


কবিদেরকে ভাবের জগৎ ও কল্পনাপ্রবণতা থেকে দূরে রাখা আল্লাহর ইচ্ছা নয়। তবে তারা যেন বিপথগামী না হন এ জন্য-  কবিকে ঈমানদার হতে হবে। অসৎ কর্ম বর্জন করে, সত্য ও সুন্দরের অনুসারী হতে হবে।


কবি ও কবিতার এক উর্বর জনপদে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কবি ও কবিতার প্রতি তাঁর একটি স্বভাবসুলভ আগ্রহ ও কৌতূহল ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে যেমন কবিতা শুনতে ভালোবাসতেন; তেমনি অন্যদের ও তিনি কবিতার প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য সচেষ্ট ছিলেন।  তিনি সাহাবিদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন তোমরা তোমাদের সন্তানদের কবিতা শেখাও। এতে তাদের কথা মিষ্টি ও সুরেলা হবে।


রাসূল (সা.)-এর উৎসাহ ও প্রেরণায় সাহাবিদের মধ্যে যাদের কাব্যচর্চার প্রতিভা ছিল তারা প্রায় সবাই কাব্যচর্চা করতেন। সাহাবি কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- সর্বজনাব (হযরত) হাস্সান বিন সাবিত (রা.), কা’ব বিন মালিক (রা.), আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রা.), আলী ইবনে আবু তালিব, আবু বকর সিদ্দিক (রা.), উমর ফারুক (রা.), লবিদ বিন রাবিয়াহ (রা.), কাব ইবনে যুহাযের (রা.), আব্বাস বিন মিরদাস (রা.), যুহায়ের বিন জুনাব (রা.), সুহায়েম (রা.), আবু লায়লা (রা.) প্রমুখ। সাহাবি কবি হযরত হাস্সান বিন সাবিতকে বলা হতো শায়েরুর রাসূল বা রাসূলের কবি।


আর এ ঐশীবাণী কোরআন শরীফ একটি উৎকৃষ্ট কাব্যগ্রন্থ। এখন সম্মানীয় কবিগণ ভাবুন- কবিতা এবং ইসলামের মাঝে কতটুকু পার্থক্য!


-----------------------------------------------------------------------------


একটি লেখা ব্যান করলে, (আর তা যদি অযৌক্তিকভাবে  এবং খোড়া যুক্তিনির্ভর হয়) তার রচিয়তার অন্তরে কি রকম বেদনার সৃষ্টি হয়; তিনিই ভালো বোঝেন।


প্রথমে তুলে ধরা ''বয়লিং ফ্রগ সিনড্রোম'' প্রক্রিয়াটি দিয়ে বলতে চেয়েছি, আসরের কবিদের উপর এ প্রক্রিয়া চাপিয়ে দিলে, কবিদের স্বাধীন চেতনার অপমৃত্যু হবে।  যা মোটেই সুখকর হবে না। তাই কথায় কথায় এবং অযৌক্তিকভাবে কোন লেখা ব্যান করা উচিৎ বলে মনে করি না। কোন আলোচনায় দু'একজন বোঝার কারনেই হোক অথবা তার বিশ্বাসের যুক্তির কারনেই হোক; ভিন্নমতের মন্তব্য দিয়েই পারে। যুক্তি ও প্রতিযুক্তির বক্তব্যের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাধানে আসবেই নিশ্চয়। যাতে অন্যান্য সত্যানুসন্ধানী পাঠকগণ অনেককিছুই জানতে পারবেন।
আমাদের এ যে উন্নয়ন, বৈশ্বিক সম্মৃদ্ধি; তা দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়াই এসেছে।


----------------------------------------------------------------------------


যারা কবি খায়রুল আহসানের 'কবি ও কবিতা নিয়ে' পোস্টখানি পড়েননি; তাদের জন্য উল্লেখিত পোস্টের মূল কথা কবির ভাষায় তুলে দিলেম (আংশিক)।


আমি নিয়মিতভাবে কবিতা চর্চা শুরু করার পর আমার কিছু শুভার্থী আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন যে আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন পবিত্র  কুর'আন শরীফে কবিদের নিন্দা করেছেন এবং কবিদেরকে বিভ্রান্ত ও শয়তানের দোসর বলেছেন। এ কথা উল্লেখ করে তারা আমাকে এ পথ ছেড়ে চলে আসতে বলেছিলেন।  যদিও আমি কবিদেরকে ও কবিতাকে সরাসরি খারাপ ভাবতে পারিনি, তথাপি মন আমার একটা দ্বন্দ্বে দোদুল্যমান ছিল এবং ভেতরে ভেতরে আমি একটা অপরাধবোধ আর আত্মগ্লানি অনুভব করছিলাম। ওরা আমাকে সুরাহ আশ শু'আরা এর ২২১ থেকে ২২৭ নং আয়াত এর রেফারেন্স দিয়ে এ কথা বলেছিল। আমি ভাবতে শুরু করলাম, তবে কি আমি কবিতা লিখি বলে বিভ্রান্ত ও অভিশপ্তদের দলভুক্ত?


পবিত্র কুর'আনে কবিদের নামে নামকরণ করা "সূরাহ্ আশ-শু'আরা" (কবিগণ) হতে উদ্ধৃত আয়াত সমূহের বাংলা ও ইংরেজী অনুবাদ আবার পড়লামঃ
"আমি আপনাকে বলব কি কার নিকট শয়তানরা অবতরণ করে? তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক মিথ্যাবাদী, গোনাহগারের উপর। তারা শ্রুত কথা এনে দেয় এবং তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী। বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদের অনুসরণ করে। তুমি কি দেখ না যে, তারা প্রতি ময়দানেই উদভ্রান্ত হয়ে ফিরে? এবং এমন কথা বলে, যা তারা করে না। তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহ কে খুব স্মরণ করে এবং নিপীড়িত হওয়ার পরই প্রতিশোধ গ্রহণ করে। নিপীড়নকারীরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ।"
------------------------------------------------------------------------------
বিঃদ্রঃ যদি ব্যানকৃত পোস্ট পূণরায় প্রকাশ করা সম্ভব হয়; তবে আমাদের প্রিয় এডমিনের কাছে অনুরোধ রাখবো, কবি খায়রুল আহসান-এর 'কবি ও কবিতা নিয়ে' পোস্টটি পুনর্জীবিত করা হোক।


২২/০৮/২০১৭
মিরপুর, ঢাকা।