বাঙালির কবি পড়েছিলো সে-ই অমর কবিতাখানি  
দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে, জনসমুদ্রের কিনারে দাঁড়িয়ে
ঋদ্ধ রবীন্দ্রনাথের মতো, নজরুলের তেজঃদীপ্ততায়।
যে-ই কবিতার ছত্রে-ছন্দে, শব্দে এবং ভাবে প্রতিভাত হলো-
জীবনের কথা, মানুষের কথা বলিষ্ঠ প্রত্যয় নিয়ে।
বিমুগ্ধ বিকেল, কানায় কানায় পূর্ণ রেসকোর্স ময়দান,
কবি আসলেন দৃপ্ত পদক্ষেপে মুগ্ধ জনতার চোখের সম্মুখে,
ঋজুদেহে দাঁড়ালেন তিনি দখিনা মলয়ে প্রসারিত বুকে ,
অকম্পিত উদ্বেলিত হাত; গণমানুষের মুক্তির বারতা দিতে।
সুনিপুণভাবে কবি তুলে ধরেন বিবর্ণ অতীতের ইতিহাস-
মানুষের বঞ্চনার, চরম দুঃখের, রক্তরঞ্জিত রাজপথের,
মুমূর্ষু আর্তনাদের, স্বৈরাচারীদের অত্যাচারের নিষ্ঠুর ইতিহাস...
চিরবঞ্চিত বাঙালির শ্রেষ্ঠ কবি শান্ত-সৌম্য কান্তিময়;
তখন হৃদয় তাঁর মুক্তির অমোঘ নেশায় আচ্ছন্ন;
শান্তির পায়রা উড়িয়ে দিয়েছে, উড়ছে তারা আকাশ জুড়ে।
অতঃপর, শব্দে শব্দে রচে যান কবি, তাঁর অমর কবিতাখানি-
যে কবিতার সুরেলা ধ্বণি জলদমন্দ্রস্বরে ধ্বনিত হলো-
আকাশে, বাতাসে, বাংলার শ্যামল ঘাসে ঘাসে,
সহজ সরল নির্বিরোধী মানুষের প্রাণের ভেতরে।
যে-ই কবিতার অমোঘ রাগিনী মোহনীয় হয়ে
একদল নিরস্ত্র অনুসারীকে অসীম সাহসী করে তুলে;
যে-ই কবিতার শব্দের ঝংকারে বজ্রের নিনাদ বাজিয়ে
ফেনায়িত করে তুলেছিলো পদ্মা-মেঘনা ও যমুনার জল।
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ অনুসারীরা প্রতিবাদমূখর তেজঃদীপ্ততায়,
ভীরু প্রাণে জেগে উঠে প্রতিহিংসারই দাবানল।


বলো, কে বলতে পারে বজ্রস্বরে দৃপ্তকণ্ঠে-
রক্তের প্রান্তরে সৃষ্ট হয় স্বাধীনতা,
তেজস্বী প্রাণের শাহাদাত প্রতিজ্ঞায় মুক্তি,
পথ ছেড়ে হেঁটে গেলেই পাওয়া যায় অনন্য পথের খোঁজ,
চেতনবিদ্ধতায় আনে পরাজিত জীবনে মোক্ষলাভের সন্ধান?
পোড় খাওয়া দূরদর্শী বিজ্ঞ কবি ছাড়া, কে বলতে পারে!


জ্বলে উঠে কবির মুখের বাণী- আগুনের ফুলকি,
দাবানল তেজে জনজোয়ারের রেসকোর্স ময়দানে,
মানুষের মনে প্রাণে প্রাণে, সারা বাংলাদেশে।
ছাইচাপা অগ্নিকুণ্ডে ঢাললেন তিনি ঘিয়ের কলসি!
প্রেরণার গহন উত্তাপে ঘুমায়িত জাতি চমকিয়া উঠে
দৃপ্তকণ্ঠে শপথের মাঠে প্রাণ বাজি ধরে
প্রাণপণের রক্তদানের যুদ্ধে নামে।
এমনই কবির কবিতাখানি হয়েছিলো পাঠ,
রেসকোর্স মাঠে একাত্তরের মার্চের সাত তারিখে!


০৭/০৩/২০১৮
মিরপুর, ঢাকা।