হঠাৎ করেই তার সাথে দেখা হয় আমার-
এক শোকাবহ অনুষ্ঠানের জনারন্যের ভেতর।
মৃত্যুর শোক নেই কারো চোখে-মুখে-বুকে,
শুধু সদ্য বিধবা এক পৌঢ়া দীর্ঘ নিশ্বাসে
মাঝে মাঝে বিষন্নতায় কথা বলে;
আর সব স্বাভাবিক, অন্য দিনের মতোন।

বিস্তর মেহমান, হৈ-হুল্লুর, শিশুদের ছুটোছুটি,
থালা-বাটির ঝন-ঝনানি, বড়োদের হাঁক-ডাক;
এরূপ বিষাদিত দিবসের উৎসবময়তার মাঝে-
তার সাথে দেখা হয়ে যায় আমার বহুদিন পর।

এরই ভেতর প্রচন্ড সাহসিনীর ভঙ্গিমায়-
হাতের ইশারায় আড়ালে ডাকে আমায়;
বিহ্বল আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে যাই।
'এসো' - এই বলে হেঁটে যায় খানিক দূরে;
এতো মানুষ চারিদিকে! তবুও সব ফাঁকা,
সবাই ব্যস্ত নিজেদের বলয়ের ভেতর।

'কেমন আছো? বড্ডো শুকিয়ে গেছো তুমি!
এখনো কি সে-ই আগের মতো রাত্রি জাগো?
কাব্য রাণীর মৃত্যুর পরও কি কবিতা লেখো? '
আরো অনেকগুলো প্রশ্ন এক সাথে করে গেলো সে-
নিশ্চুপ আমি, স্থবির ছবির মতো দাঁড়িয়ে রই।

তীব্রালোকের ঝলকানী জ্বলে উঠে চোখে,
চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসে ধীরে ধীরে,
কন্ঠনালি বেয়ে নেমে আসে বরফ গলা স্রোত;
নির্বাক , নিস্তব্ধ, চেতনহীন- এই হরবোলা আমি।

কন্ঠস্বর অনেক নিচুতে নামিয়ে এনে, বলল সে -
'একটি প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিবে-
আমাদের জীবন কেনো এমন এলেবেলে হয়?'
নির্বাক আমি ঠোঁটের উপর ঠোঁট চেপে আছি,
চোখেতে জল ছল ছল, এই বুঝি ঝরে যায়;
পুরুষ-চোখের জল ঝরে গেলে মানুষ হাসে;
তাই, দ্রুত পায়ে চলে আসি জনারণ্যের ভীড়ে।