(কাহিনী কাব্য)


এই জীবনের সব লজ্জা আর ভয়,
অমোঘ শক্তির প্রচণ্ডতায় করেযাছি আজ জয়।
ম্রিয়মান আমি কেমন করে যে
ক্রমশঃ হয়েছি সাহসী; নিজেই জানিনা তা'।
তোমার সান্নিধ‌্য, তোমার প্রেরণা, এতোটুকু ভালোবাসা,
হিমালয় অতিক্রমণের দুঃসাহস জাগাতো মননে।
তোমার মুখের অনুরোধ পেলে, নির্দেশ ভেবে তা,
বলিষ্ঠ সাঁতারুর মতোন,
আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার
দুঃসাহসিক হতাম নির্দ্বিধায়।
শুধু তোমারই আনন্দের জন্য, তোমারই ইচ্ছা পূরণের জন্য,
এই জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞানে অকাতরে, অবলীলায়,
পৃথিবীর চমকপ্রদ কর্মে লিপ্ত হতে পিছপা হতাম না;
হে আমার আজন্মলালিত প্রিয়তমা!


তোমার জীবন এই জীবনের সাথে এক হবে না কখনো,জানি;
আমাদের এ জীবন রেল-পথের মতোন
সমান্তরাল, চলে গেছে বহুদূর।
দূর থেকে মনে হয়,এক বিন্দুতে মিলিত আমরা;
কঠিন বাস্তবতার চরম সত্য যে, মিলন হবে না, কখনও।
স্বাতন্ত্রতার মাঝেও আত্মার একাত্ম হয়ে বিচরণ করি-
চিন্তায়, চেতনায় ও চাহিদায়। তাই, ক্রমশই ম্রিয়মান হয়ে যাই,
শত আনন্দের ভেতরে থেকেও।
অনেক ভোগের, অনেক সুখের পরশ নিয়েও,
আমারই অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারোনি,
অবহেলায় বিস্মরিত হওনি তুমি;
পরম যতনে চেতনার অভ্যন্তরে আত্মার আত্মীয় জ্ঞানে
রেখেছো তোমার গহীনতর চেতনার চেতনে।
যেই প্রগাঢ় বিশ্বাস একদিন রেখেছিলেম তোমার কাছে-
আমার প্রতীতী, দৃঢ়তার অহঙ্কার, অমল ধবল ভালোবাসা,
এই সবকিছু, শুধু তোমার জন্যই সৃষ্টি হয়েছিলো মননে আমার।


এতোদিন পর, আশ্চর্য এক মোহন বাঁশির সুর তুলে,
আমার সকল সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে গেলে!
যৌবনের প্রারম্ভের যে হৃদয়ে তুলেছিলে তুমুল ঝড়,
আমার সমস্ত চেতনাকে করেছিলে আলোড়িত;
আজও তেমন উথাল-পাথাল জলমগ্ন ভাটির জলাঙ্গী।
তোমার জন্যই এই পৃথিবীতে আগমন হয়েছিলো,
তোমারই জন্য জন্ম আমার সার্থক হয়েছিলো,
তুমি আমাদের পৃথিবীর কোন মানবী নও;
স্বর্গচ্যুতা এক দেবী, এ জীবন কবিতার প্রথম নায়িকা।
আমার সৃষ্ট প্রতিমা, কবিতার প্রেরণার উৎস,
তোমার কথায় কেঁপে কেঁপে বেজে উঠতো কবিতার ছন্দ,
তোমারই দেখা পেলে কবিতারা হাসতো প্রাণখোলা,
এ কবি প্রাণের অহমিকা ছিলে তুমি;
তুমি ছিলে পরিপূর্ণ একটি নিটোল কবিতা-
কবিতার মতো সুন্দর, কবিতার মতোন বিমুগ্ধকর,
কবিতার মতোন মাধুরীময়, সৃষ্টির উল্লাস!
আমার সমস্ত শব্দ, ছন্দ, শব্দের চয়ন, তাদের সঞ্চরণ,
সবকিছু তোমার নামেই, তোমাকে ঘিরে হয়েছে পরিভ্রমণ,
আমি হলেম তোমার কবি, শুধু তোমারই কবি।


তারপর, সব স্বাভাবিকতার মতো তুমি চলে গেলে,
বহু দূরে, দৃষ্টির অলক্ষ্যে, অন্য এক পৃথিবীতে;
এ জন্য তোমাকে কোন দোষারোপ করেনি কখনো,
আর কখনো তা' করবো না।
প্রকৃতিই আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দিলো;
প্রকৃতির 'পরে আমাদের কোন হাত নেই।
চলে গেলে অজানা, অচেনা পরিমণ্ডলে,
বিত্ত-বৈভব-সুখের মাঝে।
আর, এই আমি?
জীবনের ভাঙ্গা পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতেই থাকি,
এখান থেকে সেখানে, আলো-আঁধারি স্বপ্নকে নিয়ে।
জীবন কারোর অপেক্ষায় স্থবির থাকে না,
সময়ের গাড়ি চলে যায় স্বাভাবিকভাবে,
কারোর চাহিদা, কারোর সুখ-দুঃখের প্রতি
সময় ও প্রকৃতির কোন আক্ষেপ থাকে না, অপেক্ষায় থাকে না;
তারা নির্ধারিত গতিতে নির্দিষ্ট দিকে সঞ্চরণমান।


অতীতকে রোমন্থন করতে গিয়ে সুখের ভাবনায়,
তোমার সেই কিশোরী মুখখানি ভেসে উঠে হৃদি-আয়নায়;
সেই হাসি, সেই মায়ার অপূর্ব সম্মোহনী মূর্তি।
এই জীবনের সাথে মিলন না হওয়ার জন্য
কখনও আফশোস হয় নাই; কারন, এটাই স্বাভাবিক;
এ দেয়াল ভাঙ্গার চেষ্টাও করিনি,কখনও।
এতোদিন পরে, কোত্থেকে এলে তুমি ?
অনেক অন্ধকারের ভেতর থেকে তীব্র আলোতে এলে
যেমন চোখ ধাঁধিয়ে যায়; তেমনই কি হলো আমার?
তোমারই আগমনে বিস্মিত, বিমূঢ় করে তোলেছে আমায়।
আবেগ প্রশমিত করার শক্তি এখনো আমাদের মাঝে ক্রিয়াশীল,
হে আমার কৈশোরীক প্রেম, যৌবনের প্রথম আলেখ্য!
মানুষের জীবন-আবেগ- বালির বাঁধ,
ভেঙ্গে যায় যদি, আমাদের পরিচিত সমাজ ভেঙ্গে যাবে;
হবো কলুষিত- লজ্জার, ভয়ের, অবমাননার।
প্রতিদিন প্রতিক্ষণ- চেতনার সচলতা যতক্ষণ থাকে,
মননের আয়নায় তোমার অত্যুজ্জ্বল মূরতি ভেসে উঠে,
কল্পনার পাখা এতো বিস্তৃত হয়!
তোমাকে স্পষ্ট দেখি দৃষ্টির সীমানায়।


তোমাতে আমাতে অমোঘ রজ্জু গ্রথিত ছিলো কি না, জানিনা;
তবুও কী আকর্ষণ! আশ্চর্য রকম এক অনুভূতি!
অনন্য ভালো লাগার শিহরণ পরতে পরতে ছুঁয়ে যায়;
চরম সুখের গাঢ় অনুভূতির স্পন্দন,
অপরূপ এক মোহাচ্ছন্ন দেশে নিয়ে যায়;
যেখানে সুখের বিকল্প আরেক ধরনের প্রগাঢ় সুখ,
যেখানে আনন্দের বিকল্প মধুময় আনন্দের ধারা,
সুখের পরিধি ও বিস্তৃতি এতো ব্যাপক যে,
সে সকল পরিপূর্ণভাবে পরিভ্রমণ করা যায় না।
ভালোবাসার ঐশ্বর্য এতোই যে, সেখানে দুঃখের কোন শক্তি নেই
প্রবিষ্ট হওয়ার ক্ষমতা রাখে।
তুমি আমার দুঃখবিহীন সুখের প্রতিভূ;
অমিয় সুখের অমল প্রতীক।


আমি অতি সাধারণ,
আমারই চারিপাশে শত সহস্র আইনের বেড়াজাল বিস্তৃত;
তবুও, তোমার স্পর্শে, সুখের মার্গেই উঠে যেতে চাই,
হাত দুইটি বাড়াও গভীর প্রত্যয়ে।


২৯/১১/২০১৬
মিরপুর, ঢাকা।