ডেলী ডিউটির আপিস যাত্রীদের
হুড়মুড়িয়ে যাতায়াতের,
এই পথ।
দুমুঠো ভাত আর বিস্বাদ সবজির
নিমিত্যে, দৌড়ঝাপের
এই পথ।
কত শাসানি, কত খিস্তি,
কত প্রেম, কত লাঞ্ছনার সাক্ষী
এই পথ।
সারা বছর যে বুকের উপর দিয়ে
তোমরা দাপিয়ে বেরিয়েছো,
আমি সেই পথ।
না না কোনো বাইপাস নয়,
আজ শুধুই রাজপথ।


বর্ষার  রিসেশনে উন্মুক্ত
আমার শরীরের শালীনতা;  
শুধু তাপ্পি আর ঢাপ্পি দিয়ে
দারিদ্রতা আড়াল করতে চেয়েছো,
ছেঁড়া কাঁথায় স্বপ্ন দেখিয়েছো অনেক,-
আজ আমার শরীরের কলকব্জাগুলো
কেমন জানি আলগা হয়ে গেছে।
উন্মুক্ত সমস্ত অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ;  
খুব বিশ্রী ভাবে দাঁত কেলাচ্ছে
আমার ভঙ্গুর জীর্ণ কঙ্কাল।
কৈ, এখনতো  কাউকে
ভালবাসরার  হাত বাড়াতে দেখলামনা?
সকলের আনন্দে, সকলের দুঃখে,
বরাবর পাশে থেকেছি;  
আজতো কেউ আমার পাশে এসে দাঁড়ালোনা?
জুটলো শুধু অপমান আর লাঞ্ছনা;  
একদল ছোকরা বিশ্রী মুখ করে বললো,
দ্যাঃ শালা, এটা কি রাস্তা, শুয়ারের বাচ্ছা!
প্রতিবাদ করবার কোনো ভাষা পেলামনা খুঁজে;  
হাসতে চাইলাম পারলামনা;
হাউ হাউ করে কাঁদতে চাইলাম
কিন্তু, যেটুকু অশ্রু বেঁচে আছে
তাতে আর গাল ভেজে না।


শুকনো, ক্ষীর্ণ, দীর্ণ,
অবহেলায় শীর্ণ, অতিকায় রাজপথ।
তোমাদের রাস্তায়, তোমাদের পথ চলায় মিশে থাকি
সারা দিন, সারা রাত, সারাটা সময়;  
কখনো জানতেও চাওনি-
স্বল্প বেতনে কি করে চলে আমার সংসার?
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে
বাজার দর ওঠে-নামে,
বাড়ে-কমে।
কিন্তু অপরিবর্তনীয় থেকে যায়
আমার বেতন হার।
কি করে যে পরিবারের প্রতিটা মানুষের মুখে
খাবার তুলে দি রোজ
তা শুধু আমিই জানি।
রাস্তায় দাঁড়িয়েতো আর
বেশ্যাবৃত্তি করতে পারিনা-
সভ্যতায় ভব্যতায় যে বড়ই বাঁধে।


আজ যদি লাল কার্পেটে
মুড়ে দেওয়া হয়, আমার গোটা শরীর;  
দুধারে সাজানো হয় বাগান গালিচা;  
মহানগরীর সবথেকে উতকৃষ্ট পথ যদি হই আমি,-
তাহলে অবশ্য তোমরা
ভালভাবে সেটা নিতেও পারবেনা জানি।
আমার সতীত্ব নিয়ে কথা বলবে;  
কাদা ছুড়বে, দুয়ো দেবে।
এক ভাঁড় গরম চা আর খাস্তা লেড়োয়
তোমাদের গসিপটা জমবে ভালো,-
দেখেছিস, মাগীটা কেমন প্রমোশন পেয়ে গেল।
নির্ঘাত ম্যানেজারের সাথে নিরিবিলিতে
শেয়ার করেছে কোনো গভীর রাতের একাকীত্বতা;  
একটু ঢোলুনি, একটু চাউনি,
একটু শারীরিক খুনসুটি;  
শালা! এই করেইতো যত প্রমোশন যায় পাওয়া।


আমার মাঝে মাঝে হাঁসি পায়
তোমাদের কথা শুনে;
তোমাদের অবস্থা দেখে;  
হয়তো এটাই সবথেকে ভালো
ফ্রাস্ট্রেশন কাটানোর উপায়;  
হয়তো এটাই তোমাদের কাছে
সবথেকে দামী কোনো অ্যান্টিডিপ্রেশন্ট;  
হয়তো এর মধ্যেই তোমরা
খুঁজে পাও বাঁচার মানে;  
কিন্তু আমি কি নিয়ে বাঁচি?
আমি তো জীবন মরণের
উর্দ্ধে চলে এসেছি।
ঘৃণ্য, বিবর্ণ, দগ্ধিত;  
দানবিক কর্পরেট যুগে
একজন সামন্য বেতনভূক, চাকুরী জীবী-
এই শহরের বড় আদরের রাজপথ।
আমার উষ্ণতা স্তিমিত বুকে প্রতিধ্বনিত হয় রোজ
তোমাদের প্রতিদিনের কোরাস।
আমি সেই অনাদরের প্রেম এক -
ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস।।