চৌধুরি বাড়ির মসজিদটার পাশে এখনো দাঁড়িয়ে আছে
প্রকাণ্ড শতবর্ষী শিমুলগাছাটা।
ওকে এখন আর আগের মত কেউ ভয় পায় না।
গাছের পাশেই ছোট্ট কালভার্টের নিচেও আর
আগের মত বর্ষার জলকল্লোল নেই,
নেই রঙিন চোপড়া আর রুপালি পুটিদের ছোটাছুটি।
স্রোতহীন কালভার্টের নিচে জমেছে ঘাসের বন,
অথচ শিমুলের তলাটা দিব্যি ঠনঠনে হয়ে উঠেছে।
প্রায় এক শতাব্দির অন্ধকারের শাসন শেষে,
বহু রহমান বাঙ্গু আর কেতুদের ভয় দেখানে
শিমুল তলাটা এখন বিজলিতে আলোকিত খুব।
এখনকার সাইমুম-সাদমানরা আর দুরুদুরু বুকে
দ্রুতপদে পার হয়না ওপর তলার জমাট অন্ধকার।
বরং অন্ধকারে সিগ্রেটের লাল আগুনের জোনাক জ্বেলে
ওরা এখন আড্ডা দেয় ছো্ট্ট কালভার্টের ওপর।
শিমুল গাছের ভুতেদের সঙ্গে আমাদের গ্রাম থেকে বিদায় নিয়েছে
রাত্রির অন্ধকারে রহস্য ছড়ানো সেইসব জোনাকিরা।
এখন এখনে ভোর আসে বিজলির ফ্যকাশে হলুদ আলো সরিয়ে
পাখিগুলোও বোধহয় এখন ন'টা অব্দি ঘুমায়
আর আমরা ঘুম থেকে জাগি ট্রাক্টরের কর্কশ শব্দে।
আমাদের বাড়বাড়ির বড় জামগাছটার তলায়
গ্রামের খোকখুকির দল আর ভীর করেনা
ভরদুপুরে পাকা জামে মুখ রাঙাবার আশায়।
ভোরসকাল থেকে কোচিং আর স্কুল শেষে
তারা ঘুমাবার মতো যথেষ্ট ক্লান্ত থাকে।
আর জামও আর আগের মত পাকবার ফুসরত পায়না।
প্রশস্ত পাকা সড়ক গ্রামে এনেছে বানিজ্যলক্ষী,
গাছের আধপাকা জলপাই আর জাম-জাম্বুরারাও
রাজধানীতে ঘুরতে যাচ্ছে আজকাল।
অথচ আমাদের কেতুবুড়া কখনো অংপুরও দেখেন নি।
সত্যি গ্রামটা বড্ড বদলে যাচ্ছে।