কবি এবং কাক, দুজনেই সর্বভূক।
কবিও কাকের মতোই খুটে খায়,
জীবনের ভাগাড়ে জমা দু:খের আবর্জনা।
কবি শুষে খায়,
অগ্নিপিন্ডের লাভা থেকে ঠিকরানো সূর্যের আলো,
আর ভালোবাসে
মাটির পাতা পঁচা সোদা সোদা গন্ধ।
পৃথিবীর নিষিদ্ধ পল্লীর কানা গলিতে
জমে থাকা আদিম বাতাসে বদমাশ কবি
বুক ভরে শ্বাস টেনে নেয়।
চাঁদের আলো থেকে নগরীর ডাষ্টবিন
নর্দমার পাক কিংবা বেলিফুলের সুবাশ
সবই কবির উপাদেয় আহার্য।
কবি খাবার খুঁজে ফেরে
ভাতের থালা থেকে মানচিত্রের ভাজে
কিংবা উতলা নারীর দেহের রেখায়।
আবার কখনো বধ্যভুমির কঙ্কাল-স্তুপে বসে
চুষে খায় জীবনের অস্থিমজ্জা।
পৃথিবীর সব রসনায় কবির অবাধ্য বিচরন।
রাজকীয় বিছানা থেকে শক্ত ফুটপাত,
মোগলাই রসনা কিংবা পূর্নোদর উপবাস
বুলেটের আঘাতে ছিন্ন মগজ কিংবা
ঘাষের বুকে জমা কালচে রক্তের পুডিং
কবির জিভে সমান সুস্বাদু লাগে।
প্রেমিকার চুম্বন,
বুটের লাথি,
প্রিয়সম্ভাসন কিংবা অশ্রাব্য গালি
সমান তালে গিলতে পারে কেবল কবিই।
ফুলের সুবাস খায়, লাশের গন্ধ খায়
একপাত্রে ঢেলে খায় দুধ মদ সব,
সপ্তসাগর সেঁচা অমৃত-গরল
সুখের সুরা কিংবা দু:খের হেমলক
সবই সহজপাচ্য কবির পাকস্থরলীতে।
পূর্বপুরুষের পিণ্ডি থেকে বংশধরের সম্বল
রাজকোষ থেকে ভিক্ষার থলি
কলাপাতার পাত বা রুপোর থালি
সর্বত্র কবির বিষাক্ত রসনার অত্যাচার।
সুন্দর প্রকৃতি, সুন্দরী নারী
হরিণী ঝর্ণা, চঞ্চলা নদী
সুসজ্জিত নগর বা বিরান মরুভুমি
আকাশ, সমূদ্র, সুরভীত বাতাস
কিংবা সবুজ শ্যামল বসুধা
কেউই রেহাই পায়নি কবির লোলুপ দৃষ্টি থেকে।
পৃথিবীর সব কিছু কবি খেয়েছে
সকালের বুবুক্ষু কাকের মতোই চোখ বুজে।
আর আমাদের পরিপাটি চিন্তার পৃথিবীকে
নোংরা করে যাচ্ছে প্রতিদিন
অবাঞ্চিত কাকদের মতোই
কবিতার বিষ্ঠায়।