----------------------------------------
আমরা যদি অসীম(আরো বিস্তৃত) পৃথিবী এবং হাতে অফুরন্ত সময় পেতাম, তাহলে প্রিয়তমা! তোমার এই সলজ্জভাব কোন দোষের হোত না। আমরা বসে পড়তাম এবং ভাবতাম, কোন পথে ভ্রমণ করবো, আর কিভাবে আমাদের দীর্ঘ ভালোবাসাপূর্ণ দিনগুলি কাটাবো। তখন তুমি হয়তো ভারতের গঙ্গানদীর তীরে তীরে পদ্মরাগমণি কুড়িয়ে বেড়াতে, আর আমি হাম্বার নদীর জোয়ার দেখতে দেখতে তোমার প্রতি অভিযোগ জানিয়ে গান করতাম। প্রলয় বন্যার (পৃথিবীর সৃষ্টি) দশ বছর আগে থেকে তোমাকে ভালবাসতে শুরু করতাম; আর তুমিও, যদি তুমি চাইতে, আমার ভালোবাসা প্রতিবার প্রত্যাখান করতে যতদিন না সমস্ত ইহুদী খ্রিস্টানে পরিণত হচ্ছে (পৃথিবীর ধ্বংস )। আমরা নিষ্কাম প্রেম ধীরগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে বৃহৎ সাম্রাজ্যের চেয়েও বিস্তৃতি লাভ করতো। একশো বছর পার হতো তোমার চোখদুটির প্রশংসা করতে করতে আর মুখের উপর তাকিয়ে থাকতে থাকতে। তোমার বক্ষ সৌন্দর্যের তারিফ করতে আরো দুশো বছর পেরিয়ে যেত। আর বাকিদের জন্য থাকতো ত্রিশ হাজার বছর। প্রতিটি অঙ্গের জন্য অন্ততঃ এক যুগ করে এবং শেষ যুগটি ব্যয় হতো তোমার হৃদয় দর্শনে। কারন, প্রিয়তমা, তোমার সৌন্দর্য সত্যিই এরকম প্রশংসার দাবী রাখে এবং তাই আমার ভালোবাসাও কোন অংশে কম হতো না।
কিন্তু বাস্তবে যে আমি সময়ের গাড়ির চাকার শব্দ শুনতে পাচ্ছি যা খুব দ্রুতবেগে ধেয়ে আসছে। এবং আমাদের সবার সামনে পড়ে রয়েছে অবধারিত মৃত্যু এবং তারপর অনন্তকাল। তোমার এই সৌন্দর্য্যও চিরকাল টিকে থাকবে না; আর আমার গানও প্রতিধ্বনিত হবে না তোমার কবরের স্তম্ভে। মৃত্যুর পরে কবরস্থিত পোকাতেই কুরে কুরে খাবে তোমার দীর্ঘদিনের সংরক্ষিত কুমারীত্ব। তোমার অর্থহীন সতীত্ব যেমন ধূলোয় পরিণত হবে, আমারও কাম প্রবৃত্তি তেমনি ছাই-এ পরিনত হবে। কবর নিঃসন্দেহে একটা সুন্দর গোপন স্থান, কিন্তু কোন প্রেমিকপ্রেমিকাই সেখানে পরস্পরকে আলিঙ্গন করে না বলেই আমার মনে হয়।
সেইজন্য এখন যখন তোমার ত্বকে যৌবনের রং জ্বলজ্বল করছে সকালের শিশিরের মতো, এবং যখন তোমার প্রেমোন্মুখ হৃদয় সারা শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে বয়ে নিয়ে চলেছে কামনার আগুন, তখন এখনই এসো আমরা যতক্ষণ পারি প্রেমের খেলা খেলি। সময়ের ধীর আক্রমনে অনুতপ্ত না হয়ে, বরং প্রণয়শীল শিকারী পাখির মতো খিপ্রগতিতে সবকিছু উপভোগ করে দ্রুত সময় শেষ করে ফেলি। এসো, আমাদের সকল শক্তি, সকল মাধুর্য্যকে একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করি, এবং প্রাণপণ লড়াই করে জীবনের লৌহ কপাট থেকে আমাদের আনন্দকে ছিনিয়ে আনি। এইভাবে, যদিও আমরা সময়ের প্রবহমানতাকে বন্ধ করতে পারবো না, কিন্তু আমাদের জীবনকে উপভোগ করতে পারবো।