দেবাদিদেব নিদ্রামগ্ন।
পৃথিবীর মানুষের পাপাচারে দুই নেত্র ও মুদ্রিত।
বিষ্ণু নিরুত্তর, নির্লিপ্ত।
কল্কি অবতার পা রেখেছেন পৃথিবীর পরে।
তমিস্রা, রৌরব, অন্ধতমিস্রা, কালাসূত্র, কুম্ভ পাক
সকল নরক পূর্ণ।
তিল ধারণের জায়গা নেই।
বিশ্বকর্মা নূতন করে সীমা বাড়িয়ে;
পাঁচিল ভেঙে, আবার তোলার নির্দেশ দিয়েছেন।
কাজ চলছে চব্বিশ ঘণ্টা।
কল্কি অবতার পা রেখেছেন পৃথিবীর পরে।
নারদ এসে জানালেন...
একদল মানুষ যাদের মর্তে বিজ্ঞানী বলে,
তারা নাকি জানিয়েছেন; চব্বিশ ঘণ্টায়
পৃথিবী এক-পাক ঘুরছে না;
ভারসাম্য হারিয়েছে পৃথিবী!
যমদূতেরা আসা-যাওয়া করে ক্লান্ত,
প্রতি পলকে একবার।
মর্ত আর স্বর্গের দূরত্ব স্বল্প হলে ও।
যমরাজ নির্দেশ দিলেন,
প্রতি প্রহরে একবার যাওয়ার।
প্রতি প্রহরে একলক্ষ মৃত মানুষের জীবিত আত্মা!
কল্কি অবতার পা রেখেছেন পৃথিবীর পরে।
হঠাৎ কে যেন বলে উঠলেন;
আজানের ধ্বনিতে আজকাল সেই মিষ্টতা নেই!
একজন বললেন শরণং গচ্ছামি---
বুদ্ধং, ধর্মং, সংঘং-- আওয়াজ বড়ো ক্ষীণ।
সৎ ত্রিরত্ন ; তিন মার্গ বা কোথায়!
পৃথিবী বুঝতেই অক্ষম।
ব্রম্ভা মিটিমিটি হাসলেন।
বাকি সকলে নিরুত্তর, বললেন-
সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর শেষ করে
চলছে কলি যুগ।
চার লক্ষ বত্রিশ হাজার বছর।
এ যুগে পাপ তিন, পূণ্য এক;
মনুষ্য তপস্যা হীন, ব্রাম্ভন শাস্ত্র হীন;
দুষ্টের প্রভাব, সৎ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি-
কলি যুগ শেষ সীমানায়।
কল্কি অবতার পা রেখেছেন পৃথিবীর পরে।
তাঁকে চোখে দেখা যায় না।
কিন্তু ধ্বংস অনিবার্য।
পৃথিবীর ভার কমাতে হবে যে।
এক লহমায় সকলের ঠোঁটে,
হাসির ঝিলিক উঠলো ঝিল মিলিয়ে।
কি ভাবলেন তাঁরা!
তাঁরা কি ভাবলেন---
পৃথিবী আবার সাজবে নুতন করে?
স্থাপিত হবে ধর্ম?
মন্দির, মসজিদ, গির্জা-
সত্যিকার মানুষে ভরে উঠবে?
একমেবাদ্বিতীয়মকে প্রাণ দিয়ে,
জানাবে ভালোবাসা?
দ্বেষ, হিংসা, থাকবে না;
রক্ত ঝরবে না আর পৃথিবীতে!
থাকবে কেবল আনন্দ আর আনন্দ।
হঠাৎ কেঁপে উঠলো সভাস্থল।
শোনা গেল উলুধ্বনি, শংখ ধ্বনি।
দেবাদিদেব দুই চক্ষু খুললেন।
আবার ক্ষনিকের জন্য স্তব্ধ হল সভা।
সবাই অধীর আগ্রহে আশংকায় অপেক্ষারত;
ত্রিনেত্র কখন খুলবেন।
কিছু ধংসের শেষে আবার শুরুর সময়কাল।
সকল স্তব্ধতা ভঙ্গ করে,
একজন জড়ানো গলায় অস্ফুট স্বরে বলে উঠলেন-
আর কতকাল
লোহার নেইল গাঁথা অবস্থায়
ঈশ্বর ঝুলে থাকবেন!
এবার ওগুলো খুলে নিলে হয় না!
পৃথিবী যে শিখছে
এভাবেই অমানবিক দণ্ড দিতে হয়;
অপরাধ বোধ তো কার ও জাগছে না।
অবতার দের শাস্তি, অপমান, লাঞ্ছনা
কেউ আর আসতে চাইছেন না পৃথিবীতে।
কল্কি অবতার পা রেখেছেন পৃথিবীর পরে।
চোখে না দেখা জীব কিম্বা জড়;
শেষ করবে অনেক কিছু ই।
নূতন সকাল আসবে আবার,
পৃথিবী আর ভার সইতে পারছে না।
ত্রিনেত্র কখন খুলবেন?
তাঁর নির্দেশে ব্রম্ভা যে সৃষ্টি করেছিলেন,
তাঁর নির্দেশে বিষ্ণু যে রক্ষা করে চলেছেন;
তা ও আজ টলোমলো।
পৃথিবীর ভার কমানোর খেলা চলছে--
কিন্তু চলবে আর কতদিন?
কল্কি অবতার সত্যিই পা রেখেছেন পৃথিবীর পরে।