কখনও ভাবতে পারিনি,
পারিনি কল্পনাতেও আনতে-
মা থাকবেন পরপারে, আমি ধরাতে।
মাঝে মাঝে অন্যের মাকে দেখেছি যেতে না ফেরার দেশে ,
তখন ভেবেছি, ’বিধাতা, পরিবারের সবাই যেন একসাথে মরি!’
আমার মা যখন বারডেমের আইসিইউতে
তখনও ভাবতে পারিনি, মা পাড়ি দেবেন পরপারে।
প্রতিদিন সূযোগ খুজতাম, মার কাছে বেশি সময় থাকবার-
আর থাকতাম আস্থায় অবিচল।
মা সেরে উঠবেন নিশ্চয়ই।
ভাইবোন কেঁদেছে, সান্তনা দিয়েছি।
মাঝেমাঝে বকাঝকাও করেছি।
বাবার ব্যাথার কথাতো বোঝার চেষ্টাও করিনি।
মনে পড়ে অচেতন অবস্থার মাঝে -
কিছুক্ষণের জন্য জ্ঞান ফিরেছিল,
বাবাকে দেখতে চেয়েছিল ’মা’।
কিন্তু রাজনৈতিক উম্মত্ততা আর কুটকৌশলে মসনদের লড়াই -
বাবাকে আসতে দেয়নি অচেতন মায়ের কাছে।
ভাবা যায় এদেশের রাজনীতি কতটা নীচে নেমেছে !
বারডেমের বারান্দায় দশদিন থেকেছি,
অন্যের মাকে ইহধাম ত্যাগ করতে দেখেছি।
তবুও ভেবেছি আমার মা আমাদের কাছেই থাকবেন।
মাঝে মাঝে ডাক্তার ডাকত,
ভাবতাম, এই বুঝি মা সেরে উঠল।
ত্রিশে নভেম্বর তেরর দুপুরে, ডাক্তার যখন ডাকল,
বুকের মধ্যে কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠল।
পড়িমরি করে দৌড়ে মার কাছে পৌঁছে-
পরম ব্যকুলতায় মাকে স্পর্শ করলাম।
ডাক্তার বলল, দোয়া পড়েন।
দেখলাম-নার্স মার শরীরে লাগানো যন্ত্রপাতি খুলছে।
ঠাঁই-নির্বাক দাড়িয়ে থাকলাম।
কতক্ষণ সময় পার হল ঠিক পাইনি।
ভাইদের বুক ফাঁটানো চিৎকারে
কিছুটা ধাতস্থ হলাম।
কেমন যেন তখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, মা নেই।
গয়ে চিমটি কেটে দেখলাম , আমি বেঁচে আছি।
তখনও আল্লাহর কাছে চাইলাম ,
মা যেন এক্ষনি আমাকে ডাক দেয়,
বলে- ’আমার কিচ্ছু হয়নি।’
নামাজ পড়েছি, বিধাতার কাছে প্রার্থনা করেছি সারাক্ষণ।
আমার মাকে সুস্থ করে দাও।
মাঝে মাঝে ভাবি ,
সন্তানের প্রার্থনা আমলে নিলে বিধাতার কি এমন ক্ষতি হয় ?
মায়েদের কেন মৃত্যু দেন বিধাতা ?
এখন আমার মা নেই।
তবুও আমি বেঁচে আছি,
ভাত - মাংস - ফল -মিষ্টি ভালভাল সবই খায়।
আমার প্রাত্যাহিক সকল কাজই রুটিন মেনে করি।
সন্তান- স্বজনদের সাথে স্বাভাবিক আচরণই করি।
স্ত্রীর সাথে একই বিছানায় রাত্রী যাপন করি।
আমার সবই আছে, শুধু মা নেই।
মা থাকা আর না থাকার পার্থক্য এখন আমি খুব ভাল বুঝি।
আমি এও বুঝি,
আমার মা নেই , বিশ্বে আমার কিছু নেই।