আমি নারী
যুগে যুগে আমার ফিরে আসা
    নানা রূপে, নানা ঢ‌‌ঙে
আমিই তো টানি সভ্যতার হাল
       সভ্যজগত সভ্য হয়
       আমার হাত ধরে
             কারণ আমি নারী ।।


নানা যুগে নানা ভাবে আমার আগমন
সেই কবে এসেছিলাম এই ধরার বুকে
         দেবী দুর্গা হয়ে
ওরা দশ হাত দিল আমায়
       দিল দশ রকম অস্ত্র
ওরা যুদ্ধ করল না, রণসাজ‍ে সাজাল আমায়
ফেলে দিল সেই নরখাদক অসুরদের সামনে
       স্বর্গকে রক্ষা করব আমি !
শ্রান্ত হয়ে ক্লান্ত হয়ে যুদ্ধ করে মারলাম শেষে
              মহিষাসুরকে,
হলাম মহিষাসুরমর্দিনী, ওরা ধন্য করল আমায় ।।


আবার এলাম একবার সতী বেহুলা হয়ে
স্বামীর সঙ্গ ভাগ্যে নেই আমার,প‌ড়লাম মনসার রোষে
বণিকশ্রেষ্ঠ চন্দ্রধরের সপ্তপুত্রের জীবন ভিক্ষায়
         গেলাম স্বর্গে,
দেবতাদের করলাম তৃপ্ত নৃত্যকলার দ্বারা
      স্বামীকে রক্ষা করব আমি !
অবশেষে ফিরে পেলাম স্বামীর জীবন
হলাম আমি সতী, ওরা ধন্য করল আমায় ।।


আমি এসেছিলাম আরেকবার
সেই যে পিতা জনকের কন্যা হয়ে
যাকে দেখে ধনুক ভেঙে মন জয় করলেন
     স্বয়ং রামচন্দ্র !
আমাকে রক্ষার জন্য, ভক্তদের মন জেতার জন্য
   করলেন রাবণের সাথে যুদ্ধ
আমি একা বসে অশোকবনে করলাম তাঁর
       জয়ের প্রতীক্ষা
কিন্তু তিনি যুদ্ধ শেষে আমায় বানালেন অশুদ্ধা
আমি হলাম কলঙ্কিতা, দিতে হল অগ্নিপরীক্ষা
ছেলের মুখ দেখে গ্রহণ করলেন আমায়
        অবশেষে
ফিরে গেলাম তাঁর কাছে, বসলাম সিংহাসনে
     ওরা ধন্য করল আমায় ।।


এবার আমি হলাম দ্রৌপদী, মাছের চোখে তাক করে
   অর্জুন করল আমার মন জয়
কিন্তু মায়ের আদেশ মান্য করতে হতে হল আমায়
       পাঁচভাগ !
দিতে হল পাঁচ স্বামীকে সঙ্গ
কেউ তো শোনেনি আমার মনের কথা
বিনা অনুমতিতে, কৌরবদের হাত থেকে রাজ্য
        বাঁচানোর জন্য
     বাজি রাখল আমাকে
হেরে গেল ওরা, অপমানিতা হলাম আমি
ঘরভর্তি পুরূষের সামনে বস্ত্রহরণ করে দেখালও
     তাদের পৌরূষত্যের জো্র
আমি কাঁদলাম দেখাল না সহানুভূতি
মুখ বুজে রইল তারা, মাথা নীচু করে,
       হলাম আমি নির্যাতিতা
যুদ্ধ শেষে পাঁচরাজার সাথে যখন গেলাম
     আমি সেই রাজমহলে
     ওরা ধন্য ক‍‍রল আমায় ।।


এখন আমি মালালা ইউসুফজাই
পড়ার জন্য আমি সব যুদ্ধ করতে পারি জয়
মুসলিম সমাজে নেই মেয়েদের পড়ার অধিকার
        প্রতিবাদ করলাম আমি
মিলল তার বদলে গুলির জবাব
      তালিবানরা করল গুলিতে ঝাঁঝরা
             আমার করোটি
কিন্তু আবার আমি সেই ফিরলাম বেঁচে
মার্কিন সেনেটে গলা তুললাম আমি
বিশ্বে ধ্বনিত হল আমার নাম
      ওরা ধন্য করল আমায় ।।


এভাবে চিরকালই ব‌ঞ্চিতা আমি, কেউ
তোয়াক্কা করে না আমায়,
আমি কি চিরকালই ভোগ্যপণ্যা !
কখনও কারও সাম্রাজ্য রক্ষার্থে,
কখনও কারও অহম চরিতার্থে
কখন‍ও বা স্বামীর সম্মান রক্ষার্থে
কখনও সেই প্রতিবাদ করার জন্য ।
অন্যের দয়ায় বাঁচতে হয় চিরকাল আমায়,
নেই আমার মতামত, নেই কোনো চিন্তা
পুরুষের হাতের ক্রীড়নক আমি,
এক সুতোর টানে চালনা করে আমায়
বাতলে দেয় আমার জীবন
বাতলে দেয় ভবিতব্য
তাদের অঙ্গুলিহেলনে মানুষ আমি
কারণ,  আমি নারী ।।