ওলাওঠার পরে
--
বিরান হলে ভূমি খাঁ খাঁ করে ঘর-দোর,
শূন্য ভিটেয় কেবল বাতাস বইতে থাকে,
মানুষ নেই, প্রাণ নেই, নিঃশব্দ পুরীতে।
শূন্যে ভাসমান শব্দেরা শুধু কথা বলতে থাকে,
ওলাওঠায় তাড়ায় মানুষ, ভয় পাওয়া মানুষেরা
দলে দলে ভিটে মাটি ছেড়ে পালায় জীবনের সন্ধানে।
পূর্বপুরুষের স্মৃতিময় ভিটে মাটি ছেড়ে মানুষ পালায়
কত স্বপ্ন, কত আশ্বাস, কত বিশ্বাস জলাঞ্জলি দিয়ে
মানুষগুলো আবাস ছেড়ে পালায়।


জমি থেকে তুলে আনা মাটিগুলো বারান্দার এককোণে পড়ে থাকে, যত্ন করে আল্পনা এঁকে দেবে কাঁকুই এর দাঁতে।
লাউয়ের মাচায় সবে কলি ফুটেছে,
ক'দিন পর শিম ফুল হেসে ঢলে যাবে সবুজ শস্যের সাথে,
মাঠের পর মাঠ সবুজ ধানের ঘ্রাণে মৌ মৌ করে।
প্রকৃতি থাকে সবুজ, বিবর্ণ হয় মানুষ,
মানুষ দেশান্তরী হয়, প্রকৃতি ঠায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখে
পলায়নরত মানুষের মুখে আঁকা ভয়ের মানচিত্র।


গ্রামের পর গ্রাম পেরিয়ে অবশেষে নতুন বসতি হয়,
ঘন অরণ্য ক্রমশ লোকালয় হয়, সবুজ নির্বাসিত হয় মানুষের প্রয়োজনে, মানুষেরা দল বেধে আবার বসতি গড়ে।
আবারও বেঁচে থাকার সংগ্রামে শ্রান্ত ঘর্মাক্ত মুখেরা
নতুন স্বপ্ন দেখে, আবাদ হয় আবাদহীন ভূমিতে,
এখানেও বাতাস আগের মতই দোল খায়।
কিছু পুরনো মানুষের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে,
আমার পূর্বপুরুষেরা মিশে আছে ওই মাটিতে,
ফেলে আসা ভিটেতে আমার পূর্বপুরুষের কিছু স্বপ্নের গন্ধ আছে।


আর কখনও হয় না দেখা, কেবল স্মৃতি,
আমার পূর্বপুরুষেরা গরুর দুধ, মাছ কুয়োয় ফেলে দিত,
ছিল না খাওয়ার মত পর্যাপ্ত মানুষ।
ওলাওঠা এসেছিল কতবার?
মানুষের মনে গুনগুন করে এখনও পুঁথিপাঠের আসর,
ধান তোলার উৎসবে কত আয়োজন, স্বজনের আনাগোনা।
সময় এখন যেমন শুধু
যোগ আর বিয়োগে স্বজনের দেখা মিলে কপালগুণে,
ওলাওঠা নির্মূল, তবু মানুষেরাই ভুলে গেছে মানুষ, হয়েছে স্বজনবিমুখ।
২৩/০১/২০২০