কি এমন কষ্টের স্বেদাক্ত পলি জমেছিল
বুকের ভিতরের ওই
ছোট্ট মরা নদীটিতে-
যা বলা গেল না কাউকে;
শুধু জমিয়ে জমিয়ে-
আফিমের মতো বিষাক্ত করে;
গলায় ঢালতে হলো!


না, ‘কাদম্বরী দেবী’র কথা নয়-
এমন কতো ‘কাদম্বরী’ ছেঁড়াকাঁথার
নিচে মরে ভূত হয়ে থাকে-
সে খবর ক’জন রাখে বিশ্বসংসারে?
ঠাকুর বাড়ীর ‘কাদম্বরী’র কথা বলছি না।
নিজের বুকের মধ্যে যে-
এক চঞ্চলামতি ফুলেশ্বরী জন্মেছিল,
আবার শুকিয়ে ঝরে গেল-
তার কথা বলছি।


কোন এক মাঘের শীতে,
উষ্ণতার ওম নিয়ে সে এসেছিল।
কি তুলতুলে শরীর তার,
হাত-পা, নরোম রক্তবর্ণ-
কান্নার মধ্যেও যেন খুঁজে পেতাম
এক অনিবার হাসি
অনন্ত শান্তি; প্রণয়প্রশান্তি।


বুকের মধ্যেই সে বেড়ে ওঠে
নদীর মতো কলকল ছলছল হাসিখুশীতে।
শাদাসুতোর মত সম্পর্কের
দুধশেকড় ছাড়তে থাকে
নীরবে নিভৃতে প্রেমকুঞ্জে;
ভালোবেসেছি তারে,- সেও।
মুখে কারো হয়নি বলা
খোলস খুলে বেরিয়ে এসেছিল যে ভ্রণ
বেড়ে ওঠার আগেই মরণব্যাধি।


মন তার কষুল করেছিল
নানাবিধ শাসন-বারণ, শোষন
মেনে নিতে পারেনি,
তাই মুখ বুঁজে সয়ে গেছে আমরণ।
যেদিন ঝরে গেলো
সেই শীতের রাতে
সবাই ঘুমে ছিল অচেতন;
বুকের মধ্য থেকেই যেন চীৎকার করে
কেউ বলে উঠলো,
আর পারছি না, সইছে না আর শরীরে-
মনে, চেতনে, মানসিকতায়-


তারপর নিশ্চুপ! নিথর!
থেমে গেল সেই করুণ কণ্ঠ!
কোনদিন আর শুনিনি,
কতো শীত-বসন্ত যায় আসে
সেই তারে আর খুঁজে পাই না-
বিশ্বচরাচরে কিঙ্বা বুকের মধ্যে,
যেখানে ছিল তার স্পর্শমাদুর পাতা।
সকাল-সন্ধ্যা; রাত-বিরাতে ছিল
অবাধ খেয়ালখুশী বিচরণ তার।


সেই ফুলেশ্বরীর স্মৃতি বুকে নিয়ে
আজও পথ চলি একাকী নিঃসঙ্গ!


তারে আর হয় না ভুলা; যায় না ভুলা-
কোজাগরী পূর্ণিমায় দেখি সে মুখখানি,
অমাবশ্যার তিমিরে দেখি তার মালিণ্যতা
সকালের কুয়াশায় দেখি তার চঞ্চলতা!


ভুলেও যায় না ভুলা, রয়ে যায় বুকের উঠোন জুড়ে-
যাকে ভালোবাসিয়াছি, সেই তার জন্য হৃদয় পোড়ে!
------------------ ০ ----------------
০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৩, বুধবার, দুপুর: ০১:৫৩, কাব্যকুঞ্জ, (স্বত্ত্ব সংরক্ষিত)