বাংলাশের এক সামরিক শাসক নিজের ক্ষমতার
ভিত্তি তৈরি করতে কাছে টেনেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধীদের।
তিনি প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন এমন একজনকে, যিনি ১৯৭১
সালে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের সদস্য
হিসেবে জাতিসংঘে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলতে।
তিনি সামরিক ফরমানবলে দেশের সংবিধান সংশোধন
করে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বর্জন
করেছিলেন, ধর্মাশ্রিত রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন
এবং সংবিধানের সূচনায় বিসমিল্লাহ্ যোগ করেছিলেন।
বাংলাদেশের আরেক সামরিক অভ্যুত্থানের নায়কের স্বৈরশাসনের
বিরুদ্ধে সারা দেশে যখন তুমুল আন্দোলন চলছিল, তখন নিজের
ক্ষমতা নিরাপদ করার আশায় তিনি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার
বিধানসংবলিত এক সাংবিধানিক সংশোধনী জাতীয়
সংসদকে দিয়ে পাস করিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে সেদিন
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল ও নাগরিক
সমাজ প্রতিবাদ জানিয়েছিল এবং এককভাবে ও
সমষ্টিগতভাবে অন্তত তিনটি মামলা হাইকোর্টে রুজু হয়েছিল।
দেশের মানুষ কেউ কখনো সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার উচ্ছেদ
চায়নি, রাষ্ট্রধর্মের প্রবর্তনও চায়নি। ক্ষমতাসীন ব্যক্তি ও
গোষ্ঠী নিজের স্বার্থে এসব উদ্যোগ নিয়েছিল এবং, বলা যায়,
দেশের অধিকাংশ মানুষ তা মেনে নিয়েছিল। তবে সচেতন
জনগোষ্ঠী বরাবরই এসব ব্যবস্থাকে বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক কাঠামোর বিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার
পরিপন্থী বলে গণ্য করে এসেছে। তারা বারবার করে ১৯৭২ সালের
মূল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর
কাছে দাবি জানিয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিগুলো গৃহীত
হয়েছিল পাকিস্তান-আমলে পূর্ব বাংলার মানুষের দীর্ঘকালের
রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। এই প্রক্রিয়ায়ই ১৯৫১
সালে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ গঠিত হয় সে-সময়ের একমাত্র
অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠানরূপে; ১৯৫২ সালের
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অব্যবহিত পরে অসাম্প্রদায়িক ছাত্র-
সংগঠনরূপে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ও অসাম্প্রদায়িক
রাজনৈতিক দলরূপে গণতন্ত্রী দলের প্রতিষ্ঠা ঘটে। এই
প্রক্রিয়ায়ই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের নাম
থেকে এবং তারপরে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নাম
থেকে মুসলিম শব্দ বর্জিত হয়। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের একুশ
দফার শীর্ষদেশে নীতি হিসেবে যদিও অঙ্গীকার করা হয় যে, ‘কোরান
ও সুন্নার মৌলিক নীতির খেলাফ কোন আইন প্রণয়ন
করা হইবে না এবং ইসলামের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের
ভিত্তিতে নাগরিকগণের জীবনধারণের ব্যবস্থা করা হইবে’, তবু এ-
নীতি কোনো দফা হিসেবে ঘোষিত হয়নি এবং এতে রাষ্ট্রের
ইসলামিকরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের
প্রথম শাসনতন্ত্র (তখন তাই বলা হতো) প্রণয়নের
সময়ে গণপরিষদে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের ইসলামি প্রজাতন্ত্র
নামকরণের বিরোধিতা করে। একই সময়ে পূর্ব পাকিস্তান
ব্যবস্থাপক পরিষদে যুক্ত নির্বাচনপ্রথার পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ
করে পাকিস্তানের দ্বিজাতিতত্ত্বের মূলে কুঠারাঘাত করা হয়
এবং পূর্বাঞ্চলে এই ব্যবস্থা পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রের
বিধানরূপে গৃহীত হয়। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি এবং দলটি বিভক্ত
হলে এর উভয় অংশ, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন এবং অধিকাংশ
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্রমশ ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবের প্রসার
ঘটাতে সাহায্য করে। অপরপক্ষও নিষ্ক্রিয় ছিল না। তারই
পরিপ্রেক্ষিতে, ১৯৬৯ সালে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন।
১৯৭০ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া খান যে-আইনগত কাঠামো আদেশ
জারি করেন, তার ২০ ধারায় বলা হয়েছিল যে, পাকিস্তান পরিচিত
হবে ইসলামি প্রজাতন্ত্র বলে, যে-ইসলামি ভাবাদর্শ পাকিস্তানের
ভিত্তি তা রক্ষা করা হবে এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান হবেন
একজন মুসলমান। ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরে আরো দুটি ধারার
সঙ্গে ছাত্রলীগ এই ধারা সম্পর্কে আপত্তি জানায়
এবং আদেশটি বাতিলের দাবি করে। ১৯৭১ সালের
ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্র ইউনিয়ন প্রস্তাব করে যে, ‘রাষ্ট্র
হইবে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’।
বাংলাদেশ যে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবে, মুক্তিযুদ্ধের
কালে আমাদের নেতারা সেকথা অনেকবার বলেছিলেন। শুধু
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ নন, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ
নজরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান,
এমনকি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদও একাধিক
বক্তৃতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় তিন নীতির—গণতন্ত্র,
সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার—ঘোষণা দিয়েছিলেন।
পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশের
রাষ্ট্রপতিরূপে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে রেসকোর্সের জনসভায়
বঙ্গবন্ধু সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন যে, ‘বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম
রাষ্ট্র “বাংলাদেশ” রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র
ও ধর্মনিরপেক্ষতা।’ পরে তিনি এর সঙ্গে আরো একটি নীতি যোগ
করেন—জাতীয়তাবাদ। ১৯৭২ সালে এই চার নীতিই বাংলাদেশের
সংবিধানে রাষ্ট্র-পরিচালনার মূলনীতিরূপে গৃহীত হয়।
সুতরাং এ-কথা জোর দিয়ে বলা চলে যে, রাষ্ট্র-পরিচালনার এইসব
মূলনীতি হঠাৎ করে কারো ইচ্ছায় প্রণীত হয়নি, কারো স্বার্থরক্ষার
জন্যেও নির্ণীত হয়নি। এ হলো জনগণের দীর্ঘকালের সংগ্রামের
ফল, নেতাদের সুচিন্তিত পথনির্দেশনার পরিণাম। অন্য
কোনো রাষ্ট্রের প্রভাবে বা অনুকরণে নয়, অন্য কোনো রাষ্ট্রের
প্রতি দায়বদ্ধতা বা কৃতজ্ঞতাস্বরূপও নয়, এ ছিল একান্তই
আমাদেরই চয়িত আদর্শ। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে,
১৯৪৯ সালে যখন ভারতের সংবিধান প্রণীত হয়, তখন
রাষ্ট্রপরিচালনার নির্দেশক নীতিগুলোর মধ্যে সমাজতন্ত্র
বা ধর্মনিরপেক্ষতার স্থান ছিল না। সংবিধানের প্রস্তাবনায় সে-
দেশের রূপ নির্ণীত হয়েছিল সার্বভৌম গণতান্ত্রিক
সাধারণতন্ত্র (Sovereign democratic republic) বলে।
পরে ১৯৭৭ সালে গৃহীত দ্বিচত্বারিংশ সংশোধনীর
দ্বারা তা সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক
সাধারণতন্ত্র (Soverign socialist secular democratic
republic) করা হয়। ততদিনে আমাদের রাষ্ট্রনায়কেরা সমাজতন্ত্র
ও ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়েছেন।
রাষ্ট্রধর্মের প্রবর্তন বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক
কাঠামোকে আঘাত করেছে। রাষ্ট্রধর্মের প্রবর্তন বাংলাদেশের
মানুষকে মুসলমান (রাষ্ট্রধর্মের অনুসারী)
এবং অমুসলমানে (শান্তিতে পালনযোগ্য অন্যান্য ধর্মের অনুসারী)
বিভক্ত করেছে। রাষ্ট্রধর্মের প্রবর্তন বাংলাদেশের অমুসলমান
নাগরিকদের মধ্যেও এক ধরনের স্বাতন্ত্র্যবাদের সূচনা করেছে।
রাষ্ট্রধর্ম-প্রবর্তনের পরে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান
ঐক্যপরিষদের প্রতিষ্ঠা তারই দৃষ্টান্ত। ১৯৯০, ১৯৯২ ও ২০০১
সালের সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের
মনে অনাস্থার সৃষ্টি করেছে। তার ফলে একদিকে ঘটেছে নীরব
দেশত্যাগ, অন্যদিকে দেখা দিয়েছে তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য
স্বতন্ত্র নির্বাচনপ্রথার পুনঃপ্রবর্তন কিংবা সংরক্ষিত সংসদীয়
আসনের চিন্তা।
বিশেষ ধর্মের প্রতি রাষ্ট্রের পক্ষপাতের ফলে যে নাগরিকদের
মধ্যে বিভেদ ও বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়, একথা অনেকে মানতে চান না।
তাঁরা যুক্তরাজ্যের দৃষ্টান্ত দেন। স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতীয়
রাষ্ট্রের উদ্ভবের পরে ইউরোপে ক্রমে ধর্ম ও রাষ্ট্রের—স্টেট ও
চার্চের—পৃথকীকরণ ঘটে এবং সকল নাগরিকের ইহলৌকিক
কল্যাণসাধন রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে স্বীকৃত হয়। তা সত্ত্বেও
ইউরোপের সব দেশে রাষ্ট্র ও ধর্ম পৃথক হয়নি। যুক্তরাজ্যের
রাজা ও রানী চার্চ অফ ইংল্যান্ডের রক্ষাকর্তা—এই
অর্থে অ্যাংলিকান চার্চের ধর্মই যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রীয় ধর্ম।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ার একাধিক দেশ, আয়ারল্যান্ড, ইতালি ও স্পেনেও
রাষ্ট্র বিশেষ বিশেষ ধর্মের আনুকূল্য করে থাকে—
তবে পৃষ্ঠপোষকতা বলতে আমরা যেমন বুঝি, তেমন নয়। সেসব
দেশে আমাদের দেশের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা পীড়িত হয় না।
অন্যদিকে ক্যাথলিক ধর্মের অসাধারণ প্রাধান্য সত্ত্বেও ফ্রান্স
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, প্রোটেস্টান্টদের গরিষ্ঠতা সত্ত্বেও
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। ইসলামি রাষ্ট্রসংস্থার
(ওআইসি) অর্ধেক সদস্য-রাষ্ট্রেরই রাষ্ট্রধর্ম বলে কিছু নেই।
ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত কিংবা সিরিয়ার মতো দেশ
রাষ্ট্রধর্ম স্বীকার করে না। তুরস্ক কেবল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র
নয়, তার সংবিধানের যে-তিনটি বিধান কোনোমতে সংশোধনযোগ্য
নয়, ধর্মনিরপেক্ষতা তার একটি; সেদেশে সম্পত্তির উত্তরাধিকার
এবং নারীর স্বাধীনতা বিষয়ে ধর্মনিরপেক্ষ আইন প্রচলিত।
সুতরাং কেবল উদাহরণ দিয়ে লাভ নেই, স্বদেশের অভিজ্ঞতা ও
পরিস্থিতির বিবেচনায় এ-বিষয়ে করণীয় নির্ণয় করা আবশ্যক।
ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ ফ্রান্সকে ধর্মনিরপেক্ষ থাকার
প্রেরণা দিয়েছে; আদি বসতিস্থাপনারীদের ধর্মীয় নিপীড়নভোগের
অভিজ্ঞতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষ কোনো ধর্মের
সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেয়নি। পাকিস্তান আমলে ধর্মভিত্তিক
রাজনীতির যে-কুফল আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ধর্মের
নামে যে-নিপীড়ন এখানে চলেছে এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় সকল
সম্প্রদায়ের মানুষের মিলিত সংগ্রামের যে-ইতিহাস
আমরা রচনা করেছি, তার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মনিরপেক্ষতার
আদর্শগ্রহণই আমাদের পক্ষে স্বাভাবিক ও সংগত ছিল।
আমরা ঠিক তাই করেছিলাম।
পঞ্চদশ সংশোধনীর বলে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার
মূলনীতি ফিরে আসছে। কিন্তু বিসমিল্লাহ্ ও রাষ্ট্রধর্ম
রয়ে যাচ্ছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে স্পষ্টই
বলা হয়েছিল যে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক)
সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন
ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের
অপব্যবহার (ঘ) কোন বিশেষ ধর্মপালনকারীর প্রতি বৈষম্য
বা তাঁহার উপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে।’
একইসঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ এবং রাষ্ট্রধর্মের বিধান—
অর্থাৎ রাষ্ট্র কর্তৃক ইসলামকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান—
কীভাবে পাশাপাশি থাকতে পারে, তা আমাদের
স্বল্পবুদ্ধিতে বোধগম্য নয়।
বাংলাদেশের জন্যে রাষ্ট্রধর্ম যে আবশ্যক, তা কীভাবে নির্ণীত
হয়েছে? একথা কি আমরা ভুলে গেছি যে, বাংলাদেশের যে-একমাত্র
শাসক দেশবাসীকে রাষ্ট্রধর্ম উপহার দিয়েছিলেন, জনসাধারণ
আন্দোলন করে তাঁকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে?
আওয়ামী লীগকে ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থক জেনেও কি দেশের
মানুষ একাধিকবার তাকে ক্ষমতায় আনেনি? তাহলে কাদের মুখ
চেয়ে আমরা রাষ্ট্রধর্ম রাখতে চাইছি এবং ধর্মনির্বিশেষে সকল
নাগরিককে দিয়ে বিসমিল্লাহ্ বলাতে চাইছি?
রাষ্ট্রধর্মের বিধান বাংলাদেশে ধর্মব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করেছে।
তাঁরা মুসলমান-অমুসলমানে পার্থক্য করেছেন, শিয়া ও
আহমদিয়াদের অমুসলমান বলে ঘোষণা করেছেন এবং রাষ্ট্রের
কাছে অনুরূপ ঘোষণা দাবি করেছেন। তাঁরা নারীপুরুষে বৈষম্যসৃষ্টির
অভিপ্রায় প্রকাশ্যে জ্ঞাপন করেছেন।
তাঁরা নারীপুরুষনির্বিশেষে মুরতাদ ঘোষণা করে মানুষকে পীড়ন
করেছেন। তাঁরা নির্বিবাদে ফতোয়া দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব
সৃষ্টি করেছেন। এ থেকেও আমাদের শিক্ষা নেওয়ার রয়েছে।
বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের সমান অধিকার
প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাষ্ট্রধর্মের বিধান বর্জন করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হলে রাষ্ট্রধর্মের বিধান
বিলোপ করতে হবে। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তান-
প্রতিষ্ঠার পরে রাজনৈতিক নেতারা আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতার
আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে সৃষ্ট
বাংলাদেশে আমাদের নেতারা কি সকল নাগরিককে সেই আদর্শ বজায়
রাখার প্রেরণা দেবেন না?


(সংগৃহীত)