রাতের খানা উপস্থিত। কিন্তু খেতে একটুও
ইচ্ছে করছেনা। শুয়ে শুয়ে একটি ইসলামিক
ম্যাগাজিন পড়ছিলাম। কিন্তু
উদাসীনতা কাটছেনা। তাই বের হলাম।
মোড়ের দোকান হতে একটি পানীয়
কিনে খেলাম। কিছুক্ষণ গল্প করলাম। আবার
ফিরে এলাম এবং ছাদে গিয়ে আকাশ
দেখলাম। তবুও মন ঠিক হচ্ছেনা। অতঃপর আবার
শুয়ে শুয়ে ওই ম্যাগাজিনটির
পাতা উল্টাচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখের
সামনে মা’কে নিয়ে লেখা একটি ক্ষুদে রচনা গোচর
হল। পড়লাম। মায়ের অভাব
ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তাতে। আর তখনই
আমার অচেতন মনটি চিৎকার
করে মা’কে ডাকা শুরু করল। খুঁজে ফিরল
মা’কে সর্বত্র। এখানে ওখানে, এ ঘরে ও
ঘরে। মা! ও মা! তুমি কোথায়......? মা’র
সাড়া মিলছেনা কোথাও। অবাক
হয়ে একাকীই বলছে প্রশ্নের ছলে,
মা সাড়া দিচ্ছেনা কেন? সেই কখন
থেকে ডাকছি। কোন কথাইতো বলছেনা!
এমন সময় কে যেন অদৃশ্য হতে বলছে,
উনি তো ঘুমিয়ে আছেন। শান্তির ঘুম। চির
শান্তির ঘুম। কেন তাকে ডাকছ? তাকে একটু
ঘুমোতে দাও। সবে মাত্র শুয়েছেন,
চোখটা হয়তো সবে মাত্র লেগে এসেছে।
আরো দীর্ঘকাল ঘুমোতে হবে তাকে।
তোমার সুখের আশায় দীর্ঘকাল
নিদ্রা যাননি তিনি। বড় ক্লান্ত হয়ে এখন
একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন। তাকে বড্ড জ্বালাতন
করেছ তুমি। আর কষ্ট দিওনা। এখন থেকে আর
সাড়া দিবেন না তোমার ডাকে।
তিনিতো মালিকের
সান্যিধ্যে চলে গেছেন। এ
ধরা হতে বিদায় নিয়ে। চির বিদায়।
ওখানে গেলে আর ফিরে আসেনা মানুষ।
সকল বায়না শোনেন কিন্তু কোনটাই পূরণ
করেন না। সকল নালিশ শোনেন কিন্তু কিছু
বলেন না। তোমার ফোন রিসিভ করবেন
না আর। তোমার সহদোর ভাইও
যদি তোমাকে দ্বিখন্ডিত করে তবুও
তাকে নিষেধ করবেন না। তাকে আর
বুঝাবেনা। কারন, ইহধামে বহুবার নিষেধ
করেছেন কিন্তু সে কথা মানেনি। তাই এখন
আর বলবেন না। হয়তো চেয়ে চেয়ে শুধু
দেখবেন। করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকবেন।
কিন্তু ডাক দিবেন না। তার দায়ীত্ব শেষ।
তিনি অবসর।
এক সময় তিনি তোমার
ডাকে সাড়া দিতেন। তোমার সামান্য
ব্যাথায় ব্যাথিত হতেন।
নিজে না খেয়ে তোমাকে খাওয়াতেন।
তোমার বিপদের খবর শুনলে নির্ঘুম রাত
কাটাতেন। তোমাকে কেহ কষ্ট
দিলে তাকে শাশিয়ে দিতেন।
সে ভয়ে আর কথা বলতে পারত না। আজ
তোমাকে কেহ আক্রমন করলেও
তিনি তোমার পাশে দাড়াবেন না।
তিনি এখন তোমাদের নয়। তিনি এখন নিছক
তার মালিকের। অন্য জগতের। কোন সম্পর্ক
নেই এখন তোমাদের সাথে তার। তাই এখন
তোমার শত্রুদের স্বাধীনতা। তারা এখন
তোমার উপর একযোগে হানা দিবে।
তোমাকে তছনছ করতে সকল অপকৌশল
খাটাবে। এটাকে তোমার
মেনে নিতে হবে। অথবা নিজেকেই কৌশল
অবলম্বন করতে হবে। জানি মা’য়ের
শুন্যতা পূর্ণ হবেনা। তবুও এ দায়ীত্ব এখন
থেকে তোমার। তুমি অসহায়। অনন্যপায়। মা-
বাবার স্থলাবিষিক্তরা ঘাতক হয়ে গেছে।
তাহলে কি করবে বল? মা’য়ের মালিক
যিনি তিনি তোমারও মালিক। তার
সহয়তা কামান কর।
তিনি তোমাকে সাহায্য করবেন। অবশ্যই
করবেন। তিনিই সাহায্যকারী।
প্রতি আঘাতে মা’য়ের মায়বী শান্তনার
বাণীগুলো দ্বারা বেদনা উপশম করবে।
আগে আল্লাহকে স্মরণ করবে। তাকেই
একমাত্র অবিভাক বানাবে। কারণ, তিনিই
উত্তম অবিভাবক। অতঃপর মার
আদরগুলোকে স্মরণ
করে মনকে সান্তনা দিবে। মা তোমার জন্য
এই দিনে আঙুরগুলো লুকিয়ে রেখে দিতেন।
গাছের
কাঠালগুলো পাহারা দিয়ে রাখতেন।
কাহাকেও ছুঁতে দিতেন না। বলতেন আমার
বাছা আসলে আসলে খাবে। তোমরা যাও।
তারা চলে যেত। ফোন করলে মা বলতেন, আয়
বাড়িতে এসে বেড়িয়ে যা। যদি শুনতেন
বাছা আসছে, সারাক্ষণ পথ চেয়ে থাকতেন।
কাহারো সাথে গল্প কালে বলতেন, আমার
বাছা এমন আমার বাছা ওমন ইত্যাদি।
তোমার দোষ তিনি একেবারেই
শুনতে রাজি হতেন না।
নিন্দুকেরা তার চির নিদ্রার অপেক্ষায়
ছিল। তাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে।
এখন তারা তাদের মনাবাঞ্চনা পূর্ণ করবে।
তাই তুমি অশ্রু ঝরাও। বেশি করে ঝরাও।
কারন, তিনিও তোমার কষ্টে বহু অশ্রু
ঝরিয়েছেন। তোমার জীবনে তার সাথের
স্মৃতিগুলো স্মরণ করতে থাক। তোমার মাথায়
মায়ের হাত বুলানোর প্রশান্তিগুলো অনুভব
করতে থাক। মায়ের অতীতের আদরগুলোই এখন
তোমার হাতিয়ার। মা’র জন্য অবশ্যই
দোয়া করবে.................
হঠাৎ একজন এসে পিছন থেকে ডাক দিল।
বেরিয়ে এলাম ভাবনার জগত হতে।
অজান্তে বয়ে যাওয়া অশ্রুর
শ্রোতধারা থামিয়ে দিলাম....................


(সংগৃহীত)