কবিতা হলো কবির আবেগোত্থিত অনুভূতি, উপলব্ধি, চিন্তা ও চেতনার ছন্দোবদ্ধ বিন্যাস যা সে হৃদয়ে ধারণ করে, ভেবে ভেবে উপমা আর সুনিপুণ শৈল্পিক বর্ণমালায় রূপায়িত করে। যুগে যুগে কবিতার বৈশিষ্ট্য ও কাঠামোতে পরিবর্তন এসেছে সময়ের চাহিদায়।গদ্য কবিতা নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও কবিতা যে ছন্দময় বিন্যাস, কাব্যরসে সিক্ত আর ভাষার ব্যহারে উপমা বিহীন হতে পারে না; তা সবাই মানেন।


সবাই বলেন, সমালোচনা করা সহজ। শুধু বেশিরভাগ নেতিবাচক আর কিছু ইতিবাচক শব্দের জট মিলালেই একটা সুন্দর সমালোচনা লেখা যায়।
কথাটা আংশিক সত্য! সমালোচনা করা সহজ কিন্তু লেখা কঠিন। এর জন্য প্রয়োজন অনেক পড়াশোনা আর সময় নিয়ে ভাবা। যেই বিষয়ের সমালোচনা করতে হবে তা হৃদয়ে ধারণ করা।
অনেকেই বলে থাকেন, মন্তব্যের ঘরে সমালোচনা থাকে না, শুধুই প্রশংসামূলক আর উৎসাহব্যঞ্জক কিছু কথা। তা ঠিক! নিজের ঘরে ভালো কিছু মন্তব্য জমা করতে এর চেয়ে বেশি আর কী করতে পারি। তাছাড়া মন্তব্যের ঘরে আলোচনা বা সমালোচনা করা যায় না। ওটা উৎসাহ আর কিছু ভুল বা বৈসাদৃশ্য তুলে ধরার জন্যই।
যুগ যুগ ধরে সাহিত্যের অনন্য এক শিল্প হলো সমালোচনা। সমালোচনার একটি অন্য রকম ফল হলো, যে বিষয়ের বা যার সমালোচনা করা হলো তার প্রচার আর প্রসার বিস্তৃত হওয়া। সুতরাং আজকে আমি একজন (আমার প্রিয় ও স্নেহষ্পদ) কবির কবিতার সমালোচনা লিখবো। আশা করি তার কাব্য ভাবনা প্রসারিত হবে।


কবিতার নাম "প্রিয়শী বালিকা" কবি - রবিউল ইসলাম রাব্বি
কবিতার লিঙ্ক: http://www.bangla-kobita.com/kabbokobita/post20161126085656/


প্রিয়শী শব্দের মানে আমি জানি না (অভিধানে পাই নি)। আমার ব্যর্থতা। প্রেয়সী যদি হতো তাহলে বুঝতে পারতাম।
শুরুটা হয়েছে এভাবে-
বালিকা;
অফুরন্ত ভালো থাকার কারণ তুমি;
তুমিই দুঃখ সুখের সঞ্চারিনী,
বিকেল বেলা উরু উরু রঙধনু তুমি;
তুমিই অনাবিল আনন্দের ঢেউ তটিনী।
শুরুটা মোটামুটি কাব্যিক বলা চলে কিন্তু সঞ্চারিনী শব্দটি অদ্ভুতভাবে আসলো..তাছাড়া বানানেও ভুল আছে (সঞ্চারণী)। উরু উরু (মনে হয় উড়ো উড়ো হবে) রঙধনু উপমাটা যথার্থ হয় নি। ঢেউ তটিনী উপমাও ভুল।
২.
বালিকা;
আধার রাতে আলো তুমি;
জোছনা ভরা চাঁদনী,
সব একাকীত্বের সঙ্গী তুমি;
ভালবাসার রাগীনী।
যদি এভাবে হতো তাহলে কিছুটা কাব্যিক হতো-
আঁধার রাতের আলো তুমি
জোছনা ভরা চাঁদনী
একাকীত্বের সঙ্গী তুমি
ভালোবাসার রাগিনী।


৩.
বালিকা;
আমি মজনুর লাইলী তুমি;
আমার প্রেমের তাঁজ পড়া রাণী,
অজস্র শান্তির কারণ তুমি;
সুভাষিত ফুটন্ত পুষ্প কামিনী।


বানান ভুল সহ এখানে আবেগের সস্তা ও পুরাতন উপমা ব্যবহার ও ছন্দ কেটে কবিতার সৌন্দযের হানী ঘটেছে।
৪.
বালিকা;
হৃদয় ঘরের সন্ধার প্রদীপ তুমি;
নীড় আলোকিত করার সন্ধা চারনী,
অগোছালো ব্যাচেলর জীবনের গোছালো ঘরণী তুমি;
পরিপাটি মুচকি হাসিময় রূপসী রমনী।


এখানেও উদ্ভট আর সারল্যময় উপমায় শব্দের প্রাধান্য পেয়ে কাব্যিকতা নষ্ট হয়েছে।
৫.
বালিকা;
এই অলস ভূবনের শাষণময়- ভালবাসার অর্ধাঙ্গী তুমি;
সাহস দিয়ে সামনে পথ চলার দুঃসাহসিনী,
চোখ রাঙীয়ে অবাদ ভালোবাসা দিও তুমি;
দিয়ে আগলে রেখো আমরন আমায়- ওগো প্রিয়শীনী।


শেষ স্তবকে এসে কবি ভাবের চুড়ান্ত পরিণতি টানতে গিয়েও হোঁচট খেলেন। এখানেও বানানে গড়মিল, ছন্দের অমিল আর শব্দের বাহুল্য লক্ষণীয়।

‌তবে এই কবিতার ভালো দিক হলো ভাবের প্রবর্তনা এবং পরিণতিতে চমক আনা, যদিও ছন্দ তাল লয় ঠিক ছিল না। ঠিক ছিল না উপমার চমৎকারিত্ব, শব্দের জাদুকরী ব্যবহার।


কবির নিরবিচ্ছিন্ন সাফল্য ও ব্যাপক প্রসারতা কামনা করি।


বি.দ্র.: আমারও বানানে বিভ্রাট ঘটতে পারে। সংশোধনীয়.....
সংযুক্তি: গতকাল (২৫.১১.২০১৬) কবিতা আসরে মোট ৯০টি কবিতা প্রকাশ পেলেও আজ দেখছি সংখ্যাটা ইতোমধ্যেই ১০২ ছাড়িয়ে গেছে..... ভালো