একদা কবিতা জাগিয়া উঠিয়া জোরে দিল চিৎকার
চলনে বলনে নিয়মের বাঁধে থাকিতে চাহিনা আর।
জগতে বাজিছে মুক্তির গান, আমি শুধু আছি বন্দী
চারিদিকে মোর দেয়ালের বাধা উপরে ছাদের সন্ধি।


ভাঙিল দেয়াল, ভাঙিল ছাদ বাহির হইলো পথে
কবিতা এখন মুক্ত পথিক আবদ্ধ ঘর হ'তে।  
পথ হ'তে পথে হাট হ'তে হাটে কবিতা বেড়ায় ঘুরে
মুখ ও দেহের লাবণ্য তার গিয়েছে রৌদ্রে পুড়ে।


দেহেতে পড়া যত ধুলাবালি বর্ষার জলে ভিজে
কবিতা এখন আলুথালু বেশে নিজেরে চেনে না নিজে।
কবিতার কথা কর্কশ আজ, তাই তার চিৎকারে
কেউ যেন আর আগের মতো ফিরেও দেখে না তারে।


কবিতা যখন বন্দী ছিল নিয়মের বন্ধনে
জগৎ চকিতে চাহিয়া দেখিত সামান্য ক্রন্দনে।
বদ্ধ ঘরের অলিন্দে তার সোনালী আলোক এসে
আরো উজ্জ্বল হওয়ার তরে প্রতিদিন যেতো ভেসে।


সমীরণ এসে ছুঁয়ে যেত তারে ছন্দ-মধুর পরশে
যার ছোঁয়া সে বিলিয়ে দিত জগতের মাঝে হরষে।
মধুঝরা তার কণ্ঠ শুনিতে বনের কোকিল গেয়ে
বসন্ত-গানে অদূরের বনে কাটাইতো ক্ষণ চেয়ে।


তুষিত তারে প্রেমিক পুরুষ কত না অলংকরণে
কণ্ঠ শোভিত মনিহারে আর হাত শুভ কঙ্কনে।
নাকে ছিল তার নাকছাপি আর কানেতে ঝুলিত দুল
কপালে শোভিত চন্দন ফোঁটা খোঁপাতে রঙিন ফুল।
গালে ছিল তার আবিরের রং - মুখেতে মধুর হেসে
চরণে ছিল প্রেমিক হৃদয় নিবেদিত ভালোবেসে।


মুক্ত কবিতা স্মৃতি নিয়ে আজ জলভরা চোখে কাঁদে
কে আছে এখন আজিকে তারে নিয়মের জালে বাঁধে?
কবিতা এখন ঘর চায় আর মাথার উপরে ছাদ
তারই মাঝে রবে মুক্ত হৃদয় এই তার শেষ সাধ।
যে ঘরে খেলিবে হাজার অলিন্দে মুক্ত আলো ও বায়ু
নব বিন্যাস, নব উপকরণ স্নিগ্ধ করিবে স্নায়ু।