তিন সপ্তাহের ব্যস্ত স্বদেশ ভ্রমণ শেষে অষ্ট্রেলিয়ায় ফিরে এলাম গতকাল। নিরাপদে সন্তানদের সাথে পূনর্মিলনের আনন্দে ভুলে গেলাম দেশে বিরূপ আবহাওয়াজনিত ও ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক সঙ্ক্রান্ত অনেক দুর্ভোগের কথা। সময়ের হাত ধরে এই সংক্ষিপ্ত স্বদেশ ভ্রমনের ভালো-মন্দ অনেক কিছুই একদিন ভুলে যাবো। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় কোনদিনই ভুল হবে না ২২শে জুনে অনুষ্ঠিত ঈদ পূনর্মিলনী ও মাসিক কবিতার আসর থেকে যে অনুভূতি নিয়ে ফিরে এসেছি।


ইতিমধ্যে অনুষ্ঠানটির সুন্দর বর্ণনা সম্বলিত বেশ কয়েকটি লেখা আসরে প্রকাশিত হয়েছে, সুতরাং আমি তার  পূনঃবর্ণনায় যাবো না। তবে দু একটি তথ্য একটু পরিস্কার করা দরকার। কয়েকটি লেখায় বলা হয়েছে আসরের সম্পূর্ণ খরচ আমি একা বহন করেছি। তথ্যটি সম্পূর্ণ সত্য নয়ঃ কম বা বেশী আসরে উপস্থিত সকলেই বহন করেছেন। গুরুকবি অনিরুদ্ধ বুলবুল ও শ্রদ্ধেয় কবি কবীর হুমায়ুন দুজনেই অনেক ব্যয়সাপেক্ষ ও শ্রমসাপেক্ষ ঘোরাঘুরির মাধ্যমে স্থান নির্বাচন ও আয়োজন না করলে অনুষ্ঠানটি যে ভাবে হয়েছে তা হওয়া সম্ভব ছিল না। কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের অতিরিক্ত আয়োজনঃ (১) ফুলে সাজানো আসর কবি ও বিশেষ অতিথির টেবিল, (২) আসর কবি, বিশেষ অতিথি এবং আসর সভাপতির জন্যে ফুলের তোড়ার ব্যবস্থা, (৩) বিশেষ অতিথি ও আসর কবির জন্যে ক্রেস্ট নির্মাণ ও প্রদান এবং (৪) আসর কবিপত্নীর জন্যে ছবি ও নাম সম্বলিত স্মারক কাপ - এর সবগুলিই যথেষ্ঠ, চিন্তা, পরিশ্রম ও অর্থের ফসল। ঢাকায় যে কোন জায়গায় যাতায়াত করা অত্যন্ত কষ্টসাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল, যার হাত থেকে আসরে উপস্থিত কোন কবিই রেহাই  পাননি, অথচ সবার উপস্থিতি ও অবদান ছাড়া এ আসরটির কোন সার্থকতায় থাকতো না। আর অত্যন্ত স্বল্পভাষী, বিনয়ী ও মার্জিত, আসরের সভাপতি কবি রুনা লায়লা ও তাঁর অনন্য প্রতিভায় সম্ভাবনাময় ছেলেটি আসরে এক অন্য ধরণের সৌরভ ছড়িয়েছে সারাক্ষণ। সকলের উপস্থিতি কবিতার প্রতি ও কবিতার আসরের প্রতি নিবেদিত ভালোবাসার প্রমাণ। আর আমার উপস্থিতি যদি তার সামান্য অনুপ্রেরণাও হয়ে থাকে, তবে আমার জন্যে তা কত বড় পাওয়া তা প্রকাশের যথেষ্ঠ ভাষা কোনদিনই পাবো না। তবু কিছু অনুভূতি ভাগ করার লোভ তো যায় না।


যদিও মনে করি আসর কবিকে ক্রেস্ট এবং আসর কবিপত্নীকে স্মারক কাপ প্রদান করার আদৌ কোন প্রয়োজনীতা ছিল না, তবুও এ ব্যাপারে কবিপত্নীর অনুভূতিটুকু সবার সাথে ভাগাভাগি না করলে তার প্রতি অবিচার করা হবে। প্রথমেই সে খুবই ক্ষমাপ্রার্থী যে সে তার বৃদ্ধ পিতামাতাকে অতিরিক্ত সঙ্গ দিতে গিয়ে আমার সাথে ঢাকায় এসে ঐদিন সবার সাথে আসরে থাকতে পারেনি।  তবে স্মারক হিসাবে পাওয়া আরও তিনটি কাপ ঢাকায় রেখে কবিতার আসরের কাপটি যে যত্নের সাথে অস্ট্রেলিয়ায় এনেছে এবং সাজিয়ে রেখেছে তাতে বুঝা যায় এটি তার হৃদয়ে স্থান পেয়েছে এবং তার বন্ধু বান্ধবদেরকে গর্বের সাথে দেখাবে অনেকদিন। কবিতার আসরের ক্রেস্টটি ছাড়াও এবারে আরও একটি বড় সড় ক্রেস্ট পেয়েছি পেশাগত অর্জনের জন্যে। সকাল বেলায় ছেলেমেয়েদের ওদুটি দেখাতে গিয়ে দেখলাম কবিপত্নীর বিবেচনায় আসরের ছোট্ট ক্রেস্টটি পেশাগত বড় ক্রেস্টটির মস্তক। তাই বড় ক্রেস্টটির ঠিক উপরে বসিয়েছে ছোট কেস্টটি। কিছুক্ষণ দেখতে দেখতে আমার একটা অদ্ভুত কথা মনে হলোঃ পেশাগত ক্রেস্টটিতে হয়তো নাম ও বাহুল্যের সরঞ্জাম দিতে গিয়ে অত বড় হয়েছেঃ Prof. Dr. Md. Khalilur Rahman এক লাইনে লিখতে অবশ্যই ওটি প্রশস্ত হওয়া দরকার ছিল, আর আমি যে প্রতিষ্ঠানের ফসল তার ছবি ক্রেস্টে ঢুকালে তো ওটা লম্বা হওয়াও দরকার ছিল। অথচ 'কবি খলিলুর রহমান' ছোট জায়গা নিয়েছে আসরের ক্রেস্টটিতে। তবে আরও ছোট জায়গা যদি কারো হৃদয়ে পেয়ে থাকি তবে তা হবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রেস্ট। আমার যোগ্যতায় তা অর্জন করা আমার দ্বারা কোনদিন সম্ভব হবে এ দুঃসাহস রাখি না, তবে যদি কারো ভালোবাসায় পেয়ে থাকি তাতেই ধন্য হবো। ঠিক নামটা স্মরণ করতে পারছি না, তবে আসরের কোন এক কবি বলেছিলেন, তিনি পছন্দ করেছেন যে আমি পিএইচডি ডিগ্রি করার পরেও নামের আগে ড. না লাগিয়ে কবি লাগিয়েছি। কবিতার আসরে রেজিষ্ট্রশনের সময় খুব সচেতনভাবেই নামের আগে ড. বাদ দিয়েছিলাম, আর নিজের হাতে নামের আগে কবি লেখার ধৃষ্টতা যেন কোনদিনই না হয়। তবে ভালোবাসার প্রকাশ হিসাবে ক্রেস্টে যাঁরা লিখে দিয়েছেন তাঁদের সে লেখা হৃদয়েও লিখে নিলাম। আর চিরদিনের জন্যে হৃদয় জুড়ে রবেন ওদিনের আসরে উপস্থিত সকল কবি বন্ধুগন।


আসরে বেশ কয়েকটি বই উপহার পেয়েছি। সবগুলিই হৃদয় স্পর্শ করেছে। তবে একটি উপহার যেন জীবনের প্রতি পদক্ষেপে মাথার উপর রাখতে পারি সেই দোয়া প্রার্থনা করি। আমি জানি কত সুন্দর মনের একটি মানুষ সেটি আমাকে উপহার দিয়েছেন। শুধু কামনা করি তার ইহকাল ও পরকালের জীবন সুন্দর ও শান্তিময় হোক।


bangla-kobita.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মন্ডলীর অনুমতিক্রমেই অনুষ্ঠানটির সবকিছু করা হয়েছে। আমরা সবাই কৃতজ্ঞ প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালকমন্ডলীর কাছে এই সাইটটির প্রতিষ্ঠা ও সুচারু পরিচালনার জন্যে। আর আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ অনুষ্ঠানটি আমার পছন্দমত করার অনুমতি দেওয়ার জন্যে। এ সম্পর্কে বিভিন্ন লেখা ও মতামত থেকে ধারনা পেয়েছি, সবাই আশা করেন ভবিষ্যতে এ ধরণের অনুষ্ঠান আরও হোক। আমিও সেই আশা রাখি, আর এ ব্যাপারে আমার হাত ও হৃদয় সব সময় প্রসারিত থাকবে। যদি কোনদিন কবি পল্লব (আশফাকুর রহমান) ও আমি একই সময় দেশে আসি, অনুমোদন সাপেক্ষে ও আয়োজকদের অবদান সাপেক্ষে আরও বড় পরিসরে কবি সম্মেলন করার আশা রইল।  
  
আসরের সবচেয়ে সহজ কাজটি করেছি আমি আর আমার জন্যে সবচেয়ে কঠিন ছিল এ রকম একটা সুন্দর আসরে মুগ্ধ না হওয়া। তাই আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে সবাইকে জানাই অকপট ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা এমন একটা অভিজ্ঞতা ও স্থায়ী অনুভূতি দেওয়ার জন্যে। এ ধরনের অনুষ্ঠানে ছোট খাটো ভুল ভ্রান্তি ও মতের পার্থক্য হওয়াই স্বাভাবিক। আমার পক্ষ থেকে কিছু ভুল ও অপূর্ণতা থাকাও অস্বাভাবিক নয়। আশা করি সব ভুল ভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আমরা একতাবদ্ধ হয়ে ভবিষ্যতে কবিতা ও কবিতার আসরের মঙ্গলের জন্যে নিবেদিতভাবে কাজ করে যাবো।


সবার মঙ্গল কামনা করি এবং আমার ও আমার পরিবারের জন্যে দোয়া প্রার্থনা করি।