ঘরটা পরিষ্কার করলাম,
ধুলো জমেছিলো এখানে সেখানে সারাটা ঘরময় -
মাকড়সার জাল কোণায় কোণায়
তেলাপোকা, ছারপোকা, বিছানার নীচে,
দেয়ালে টাঙানো ছবিগুলিও রেহাই পায়নি।

ও তো ঝাড়লে মুছলেই ঠিক হবে,
হলোও তাই।
আলমারিতে বাবা-দাদার আমলের অনেকগুলো বই,
ধুলির আস্তরণের চেয়ে সময়ের আস্তরণ অনেক বেশী।
সময়ের সাথে সময়ের বিরোধ
বড় সংকটময়, বিভ্রান্তিকর,
সময়ের আস্তরণ মুছে ফেলাই শ্রেয়!

ধুলো, মাকড়সার জাল, তেলাপোকা, ছারপোকা,
আবার ফিরে আসতে পারে যে কোন সময় -
আসবেও তাই।
সময় ফেরে না কোনদিন, নিশ্চিত করে বলা যায় -
যে সময় চলে যায়, সে সবচেয়ে শক্তিহীন, মূল্যহীন,
কখনো সখনো আবেগের সাথে
যদিও কিছুটা বিরোধ করে।

বর্তমানকে যারা আবেগের সাথে আঁকড়ে থাকে
তারা স্রোতহীন,
আবদ্ধ জলাশয়,
ক'দিন পর দুর্গন্ধের উৎস।
অন্ততঃ আগামীকাল তো বেশী দূরে নয় -
এটুকু পথ পরিক্রমায় যারা অনিচ্ছুক
তাদেরকে পরিষ্কার করতে ইতস্ততঃ করা উচিৎ নয়।

ঘরটার দিকে আর একবার তাকালাম
পরিষ্কার, সুন্দর, ঝকঝকে।
প্রফুল্ল একটা ভাব নিয়ে দরজাটা বন্ধ করলাম,
রাস্তায় নেমে এলাম।
আলো ঝলমল একটা দিন,
তবু কোথা থেকে বৃষ্টি এলো হঠাৎ।
বৃষ্টিতে ভিজলে দেহের তাপমাত্রা আবার বাড়তে পারে -
মাথা বাঁচাতে একটা ঘরের ছায়ায় দাঁড়ালাম।
চারিদিকে চোখ বুলাতেই দেখলাম
মাটিতে অনেক আবর্জনা
অল্প বৃষ্টির স্রোত তার কিছু ধুয়ে নিতে চেষ্টা করছে।
ঘরটায়ও অনেক আবর্জনা -
তা থাক, অন্ততঃ বৃষ্টি থেকে তো রক্ষা পাচ্ছি।

মনের ভেতর অনেক আস্তরণ অনুভব করলাম,
মনকে তো সব সময় পরিষ্কার করার চেষ্টা করি।
এগুলো নিশ্চয় পূর্বপুরুষদের দিয়ে যাওয়া ধুলোর আস্তরণ।
তার অনেকটাই ঝেড়ে মুছে বাঁচতে চাই,
দুর্গন্ধহীন বাঁচতে চাই।
যা মুছে ফেলা যায় না
তাকে সুবাসিত করার চেষ্টা করি,
মাঝে মাঝে এয়ারফ্রেশনার স্প্রে করি -
নিতান্তই অস্থায়ী সমাধান।

জানি মূল্যহীন,
জানি কষ্ট দেয়,
মাঝে মাঝে এসেই হৈ চৈ করে,
বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচায় না
দেহের তাপমাত্রাও বাড়ায়।


পরিষ্কার করা চাই,
অপসারণ করা চাই,
অথচ হারমান ছাড়া কোন বিকল্প নেই -
হয়তো সবকিছু পরিষ্কার করা যায় না।
-----------------------------------------
মনের ঘরে ময়লা প্রতিনিয়তই জমে। তার কিছু পরিষ্কার করা সহজ। প্রয়োজন অনুসারে পরিষ্কার করি বারবার। বিরোধ আনে পরিবার ও পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে আসা আস্তরণগুলো: বিশ্বাস, রীতিনীতি, মূল্যবোধ। চলমান সময় ও সমাজের সাথে অনেক বিরোধ আনে। সময়ে শক্ত মনে মুছার চেষ্টা করি। কিন্তু জীবনের সুখের দিনে (জন্ম, বিবাহ ..), অথবা দুঃখের দিনে (মৃত্যু, বিদায়,...)  আবার সেই প্রথা ও বিশ্বাসেই স্বস্তি খুঁজি। এই অন্তর্দ্বন্দ্ব মনকে বিচলিত করে, অস্থির করে, বিভ্রান্ত করে, কষ্ট দেয়। বিশ্বাস, রীতিনীতি ও মূল্যবোধগুলোর কিছু নবায়ণ, কিছু সহাবস্থানের সমঝোতা খুঁজি, সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা কোনদিনই সম্ভব নয় মেনে নিয়ে জীবন যাপন করি।