আমি জেল থেকে বলছি, নইলে কবরে নীরব থাকতাম:
আমি ইঞ্জিনিয়ার, ঘুষ নিই তবে ঘুষখোর নই -
ছাত্র জীবনে অহরহই তর্ক করেছি বন্ধুদের সাথে,
ইঞ্জিনিয়ার হলেও ঘুষ না খেয়ে বাঁচা যায়
বাস্তবে না খেয়ে বাঁচতে পারিনি
খেয়ে জেলে আছি, তবু তো বেঁচে আছি|


বাবা মায়ের মুখ আবছাও মনে পড়েনা
চাচা, চাচীর অভাবের সংসারে মানুষ
চাচাতো ভাই বোনদের সাথে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে যাওয়া
জীবনের ন্যূনতম হিসাবপত্র শেখার জন্যে|
মেধাটা শত্রু হলো,
যার উস্কানিতে বৃত্তি আর টিউশনির ক্রাচে ভর দিয়ে
একপা দুপা করে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা পার হলাম|
বাইরে চাকুরীর জগতে দেখলাম
মেধার চেয়ে মামা, চাচা আর নগদ ঘুষের কদর অনেক বেশি|
সে তো আর মেধা দিয়ে বানানো যায় না
তাই অনেক ঘুরতে হলো
চাকুরী নামক চপল চকিত হরিণীর পিছনে
মিললো শেষে একটা জাতীয় ব্যাংকের ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে|


সরকারি ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুরা ঠোঁট উল্টালো
এমডি সাহেব শিক্ষা দিলেন কিভাবে চাকুরী রক্ষা করতে হয়
জীবনের মাঝখানে পোলিওতে পঙ্গু ছেলেটির মুখ
ভুলিয়ে দিলো ঘুষের অপবিত্রতা -
প্রভুদের কাছে যা মহাপবিত্র
না খেলে আমার শুভাকাঙ্খীরা হন অখুশী
আর দাতারা হন রুষ্ট|


বেশ তো চলছিল, বিপাকটা আনলো রাজনৈতিক দলের বিভক্তীকরণ
একই দলের আবার অনেক গ্রুপ|
একদলের হাত থেকে বাঁচতে প্রতিরক্ষা পাওয়া যায়
অন্য দলের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরক্ষা নেই,
তা বিপদটা যে গ্রূপ থেকেই আসুক|
ব্যাংক লোন দিলো শিল্প স্থাপনের জন্যে এক গ্রূপকে,
অন্য গ্রূপ রুষ্ট হলো|
কোনো কারখানা হলোনা, কোনো মেশিন এলোনা
প্রজেক্ট সমাপ্তির ছাড়পত্র এলো স্বাক্ষরের জন্যে|
এমডি বললেন, স্বাক্ষর করলে ভাগ্যলক্ষী সুপ্রসন্ন হবে
নইলে সুন্দর কবর উপহার আসবে পরিবারের জন্যে,
বুদ্ধিমান হউন, স্বাক্ষর করুন|
বুদ্ধিমানের দস্তখত পড়লো এমডির স্বাক্ষরের সাথে|
কদিন পরেই ডিএমডি আর দলের অন্য গ্রূপটি জোট হলো
দুজনেই চাকুরী থেকে বরখাস্ত হলাম, ডিএমডি হলেন এমডি
আমরা দুজন এলাম জেলে|


বৌয়ের কাছে শুনলাম দৈনিক কাগজগুলোই
দুর্নীতি দমনের জাতীয় সংগীত বাঁজছে|
রাজনৈতিক দলের সব গ্রূপগুলোই এখন দারুন খুশী|
আমার বৌও কম খুশী নয়,
আমার সাথে দেখা করতে কবরস্থানে যেতে হচ্ছেনা|


লেখা: ৯ অগাস্ট, ২০১৬