যার তরে বইয়ে দেয় হাসিমুখে নিজ রক্তের গঙ্গা
দেশে দেশে কালে কালে যার হয় একটাই সংজ্ঞা
স্বাধীনতা ! মানুষের আজন্ম কাম্য, সেই তো স্বাধীনতা
কাঙ্খিত তারে নিয়ে যুগে যুগে তবু হয় ঘৃণ্য হীনতা।

স্বাধীনতার রক্ত গঙ্গায় তরী নাচে তাল মাতাল
সন্যাসীর পরিচ্ছদে স্বার্থান্বেষী ধরে তার হাল
স্তূতির জয়ধ্বনি করে প্রকম্পিত বেদনায় ধূসর গগন
স্বাধীনতার ধ্বংসাবশেষ অগোচরে হয়ে যায় লুন্ঠন।


স্বাধীনতা আসে যতবার তার চেয়ে বন্দী হয় বেশি
যখন যায় যার হাতে সেই তারে খায় নিঃশেষী।
যে গায় স্বাধীনতার জয়গান স্বাধীনতা পাওয়ার আগে
পায় যেই স্বাধীনতা, অন্যে তা দিতে ব্যথা লাগে।


স্বাধীনতা চাওয়া যায়, পাওয়া যায়, দেওয়া বড় কঠিন
তাই তো স্বাধীনতা হয় বারবার নির্যাতিত, পরাধীন।
সময়ের খেয়ালি নির্মমতার হাতে স্বাধীনতা হয় বন্দী
স্বাধীনতার প্রেতাত্মা করে পরাধীনতার সাথে সন্ধি।


ভন্ড সন্যাসী বিছায় ধুম্রজাল, পড়ে মন্ত্র তন্ত্র
আবিষ্ট রুগ্ন হৃদয় হয় কিংকর্তব্যবিমূঢ় যন্ত্র।
যে অস্ত্র আনে স্বাধীনতা সে যায় ভন্ড সন্যাসীর হাতে
নিরস্ত্র সৈনিক মরে নিরক্ত, অচিকিৎসা ও অভাতে।


কিছু কিছু লাশ তবু মরে না, থেমে থেমে তড়পায়
স্বাধীনতার অভিশপ্ত প্রেম বুকে শুভ্র কাফনে শুকে যায়
অন্তিম যাত্রার পথে ছিটানো গোলাপ জলে জননীর ঘ্রান
"মাগো, আমার কষ্টগুলো ছুঁয়ে দেখলে না" - কাঁদে সন্তান।


রক্তাক্ত জননী, রক্তাক্ত স্বাধীনতা, শকুনির আঁচড়ে
নিরস্ত্র, নিরক্ত, স্বপ্নভ্ৰান্ত সৈনিক লড়ে বিপ্রতীপ সমরে।
প্রশ্নে হয় জর্জিত অবিশ্বস্ত সময় - কেন এ জীবন?
হৃদয়ের নিসর্গ প্রেম জ্বালায় অনির্বান অন্তর দহন।


অতন্দ্র প্রহরী অন্ধকার নিশীথে হেঁকে যায় - সাবধান হুশিয়ার
স্বাধীনতার রক্তে যেন জন্ম না হয় আবার পরাধীনতার।
স্বাধীনতা ! হায় স্বাধীনতা ! তুমি আর এসো না
নিরক্তির সস্তা রক্ত গঙ্গায় বারবার ভেসো না।


যারে আসো নাশিতে তারই সাথে করো যদি বাস
বঞ্চিতের বুকে আর দিও না বারবার সুখের আশ্বাস।
সহিতে পারি রক্তের ক্ষরণ, যদি জানি তুমি আসো নাই
কেমনে সহি যদি দেখি তুমি এসে মোরে ভালোবাসো নাই?


বারবার মরি তোমার তরে, তুমি একবারও আমার তরে মরনি
আমার রক্তে এসেই তুমি হয়ে যাও অন্যের ঘরনী।
এসো না, তুমি এসো না, আসো যদি হয়োনা ঘাতক
আজীবন রয়ে যাবো তোমারে না পেয়ে জলধির চাতক।