স্রষ্টা ডাকিয়া সেবকগনে কহিলেন, আমি সৃজিব 'মানব'
যারা বিনা প্রশ্নে পূজিবে আমায়, যা করেনি দানব।


কহিল সমঃস্বরে সেবকগণ, কিবা তার প্রয়োজন, নয় কি তা ভুল?
প্রভুর তুষ্টিতে আমাদের সেবা ও প্রার্থনা কি নিতান্তই অপ্রতুল?

কহিলেন স্রষ্টা, তারা হবে আমার প্রতিভূ, আমার প্রশংসা মুখে
শ্রেষ্টত্বে শিরোমনি আমার সৃষ্টিকুলে ধরণীর বুকে।

কহিল সেবকগণ, আশংকা মনে ওরাও যদি হয়  
দানব আগের মতোই, যারা ঘটিয়েছে ধরণীতে অপকর্মের প্রলয়!

স্বমহিমায় কহিলেন স্রষ্টা,
“আমি যাহা জানি তাহা তোমাদের অজানা, আমি সর্বদ্রষ্টা।”  
  
স্রষ্টার ছিল যাহা জানা
আজ কিছু তার বুঝি মানুষেরই আনা।

পৃথিবীর প্রত্যেকটি ধর্ম আজ দাবিদার
শুধু তাদেরই আছে স্রষ্টায় একছত্র অধিকার।
ভালোবাসা, ক্ষমা, ধৈর্য, ত্যাগ, সহিষ্ণুতা,
অনুতাপ, প্রার্থনা – সব ধর্মের মূলবাণী - আজ কথার কথা।
মানবতা শেষ হোক, শুধু নিজ ধর্ম থাক বেঁচে -
স্রষ্টাকে সাথে নিয়ে সব ধর্মের অনুসারী বলে নেচে নেচে।
ভুলে যদি প্রশ্ন করো, ঠিক না তা বেঠিক
ওদের স্রষ্টার নির্দেশে নিশ্চিন্ন হবে, হে অধার্মিক!

হোক সে ছিঁচকে চোর, যে চুরি করে কাঁঠাল
পেটের ক্ষুধায় অন্য কোন শস্যকণা, ফল বা চাল
নাম তার রাম, ডেভিড অথবা রহিম
চুরির সময় তার বিশ্বাস অপরিসীম
স্রষ্টা তার  সহায় হবে চৌর্য্য কর্ম সম্পাদনে নিরাপদে।


অবৈধ হস্তক্ষেপ করে মানুষ অন্যের সম্পদে
ঘুষ, হরণ, প্রতারণায়
তারপর দাবি করে এ সবই পাওয়া স্রষ্টার পরম করুণায়।
ক্ষমতাধর কেটে নেয় হাত, ভেঙে দেয় চরণ
স্রষ্টার পক্ষে জারি করে কারো কারো মরণ।
একই কর্মে স্বাধীনতা যুদ্ধে কেউ হয় বীর, কেউ সন্ত্রাসী
দু'জনেই হাসে স্রষ্টার নামে মরণেও হাসি।

স্রষ্টার আধিপত্য রক্ষায় সৃষ্টির নির্বিচার বিনাশ
স্রষ্টার নামে কারো ধর্ম-কর্ম, কারো তরে প্রাণঘাতী সন্ত্রাস -
দু’জনেই স্রষ্টার নামে হয় বলীয়ান
পৃথিবীর অর্ধেক ধ্বংসকারী গায় তাঁর জয়গান।

সকলেরই দাবি স্রষ্টা তার সাথে, তা সে হোক যেই নামে -
নীরব স্রষ্টা, কে জানে কার সাথে থামে?
না কি স্রষ্টা আজ জনারণ্যের বাইরে অন্য কোন বনে  
আছে এক নিরপেক্ষ স্থানে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে,
অধীর আগ্রহে নিরন্তর অপেক্ষায়
তাকে না ডেকে নিজের কাছে, তার কাছে কে যায়?

কোথায় আজ রাম, গৌতম, মোজেজ, যীশু, মোহাম্মদ
একসাথে যাবে তার কাছে, ত্যাগ করে পৃথিবীর শক্তি ও সম্পদ?