কেউ কবিতা লেখে অথচ তা প্রকাশ করার স্বপ্ন দেখে না, তার নিজস্ব একখানা কবিতার বই হাতে ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখে না এমন উদাহরণ থাকলেও বিরল। এ গেল এক ধরনের স্বপ্ন। আজকের এই আলোচনায় আমি যে স্বপ্নের কথা বলব তা সত্যিই আমার ঘুমের মাঝে দেখা স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন কিভাবে ঘটে, এবং কিভাবে তা বাস্তবায়িত হলো এবং তার সাথে আজকের অর্ক প্রকাশনীর কি সম্পর্ক তাই বলব।


বন্ধুদের গ্রুপে হাসি ঠাট্টার ছন্দ লিখতে লিখতে এক সময় এই কবিতার আসর আবিষ্কার করি, মনে অনেক সংশয় ও শঙ্কা নিয়ে নিচের কবিতাটি দিয়ে যাত্রা শুরু করি ১৯/০২/২০১৬ তে।


শুরুর শঙ্কা


জীবন পথের বৃদ্ধ পথিক, কাব্য-জগতে নব্য ফকির
পুরানো কবির মেলেনা পাঠক, হবে কি কদর নতুন কবির?
হোক বা না হোক, যা কিছু শিখেছি জীবন পথের বাঁকে
লিখে যাব তাই ছন্দ ভাষায় নিত্য কাজের ফাঁকে।
শঙ্কিত হিয়াই তুলে দেব তাই এই কবিতার আসরে
কে জানে ভাগ্যে কি লেখা আছে ছন্দ খেলার বাসরে!
কোনদিন যদি কেউ প'ড়ে তা ভেবে থাকে কোনো ক্ষণে
হাসি বা কান্না সুখ ও বেদনা যা ছিল লুকানো মনে
আলো আঁধারের আবছা ছায়ায় পেয়েছে কথার ভাষা
পূর্ণ হবে নব্য কবির সুপ্ত মনের আশা।
সেই আশা নিয়ে নতুন পথে শুরু হোক পথ চলা
হয়ত হবে, হয়ত হবে না, অনেক কথায় বলা।
তবু তো হেথায় মিলিবে কথায় বৃদ্ধ এবং তরুণ
তাই লিখে যাব, পছন্দ তা করুন বা নাই করুন।


কবিতায় যেমন বলেছি তেমনি চলতে চলতে এক সময় পরিচিতি ঘটে আসরের বেশ কিছু সুলেখক কবি বন্ধুদের সাথে যাদের ভেতর শ্রদ্ধেয় কবীর হুমায়ুন, মোঃ সানাউল্লাহ এবং অনিরুদ্ধ বুলবুল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২৮/৯/২০১৬ তারিখে কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের কাছ থেকে একটা ইমেল পাই তাঁর পরিকল্পিত  সম্পাদনায় যৌথ কাব্যগ্রন্থ (কাব্য কৌমুদী)-তে আমার কবিতা প্রকাশের আমন্ত্রন জানিয়ে। এই প্রথম কোন বইতে আমার কোন কবিতা প্রকাশিত হয়। বইটি হাতে পাওয়ার পর বেশ আবেগ প্রবন হই, এবং নিজস্ব বই প্রকাশের ব্যপারে কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের কাছে অনেক কিছুই জানতে চাই। আস্তে আস্তে জানতে পারি বই প্রকাশে অনেক বাধা বিপত্তি সম্পর্কে, বিশেষ করে উনি ব্যক্তিগতভাবে প্রকাশকদের কাছে কিভাবে নাজেহাল ও অপমানিত হয়েছেন।


নিজে ইন্টারনেটে কিছুটা অনুসন্ধান শুরু করি। বিভিন্ন প্রকাশনা গ্রুপের নাম পাওয়া গেলেও, তাদের নামে মাত্র ওয়েবসাইট পেলেও বিস্তারিত তথ্য বা নির্দেশাবলী পাওয়া প্রায়ই দুস্কর। যা দুই একটি পেলাম তাদের সাথে ইমেল যোগাযোগে অল্পদিনেই বুঝলাম তাদের ভেতর পেশাদারীত্ব বা খরিদ্দার সেবার মনোভাব বলে কিছু নেই। কিছুদিন যাদের সাথে ইমেল চলল, তাদেরও মনোভাব পরিস্কার হলো যে আমার প্রবাস সুযোগে একটা বিরাট অংক জমা পাওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য, আর যখনই জানালাম দেশে আমার প্রতিনিধি ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে বন্দোবস্ত করবে, তারপরেই সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।


যাই হোক, এমনি ভাবনার মাঝে হয়তো ঘুমুচ্ছিলাম ৩১/০৩/২০১৭ তারিখে। হঠাত ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে গেল একটা স্বপ্নে - আমার নিজের কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে কবিতার আসরের নিজস্ব প্রকাশনা থেকে। এপাশ ওপাশ করেও আর ঘুমুতে পারলাম না। উঠে পড়লাম পাশে ঘুমানো স্ত্রীর অজান্তে। বেশ লম্বা একটা ইমেলের ড্রাফ্ট করলাম কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলকে পাঠানোর জন্যে। আবার কেটে ছিড়ে ছোট করলাম। পাঠাব কিনা বেশ কিছুক্ষণ ইতস্ততঃ করলম। তারপর সেন্ড বাটনে প্রেস করলাম সকাল ৭.৩১ মিনিটে। ইমেলের কয়েকটি লাইন নিচে দিলামঃ


"আমি মনে করি কবিতার আসর এখন শুধু অনলাইন প্রকাশনা ছেড়ে দৈহিক প্রকাশনায় আসতে পারে। অর্থাৎ 'কবিতার আসর প্রকাশনা' নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা খোলা যেতে পারে, যেটা আসরের কবি যারা নিজ খরচে বই প্রকাশ করতে চাই তাদের দিয়ে শুরু করবে। বই প্রিন্টিং, বাঁধায় ছাড়াও বই মেলায় কবিতার আসর প্রকাশনার নিজস্ব স্টল থাকবে যেখানে আসরের কবিদের কবিতার বই বিক্রির একটা চুক্তিতে কাজ হবে। আমি মনে করি, আসরের অনেক কবি এতে অংশ নেবে, যার থেকে প্রাথমিক স্থাপনা খরচ আসবে। তাছাড়াও কবিতার আসরের প্রতিষ্ঠাতা নিজেও যে এ ব্যাপারে আগ্রহী হবে না এমন বলা যায় না।"
------------
-----------


“এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে একজন নিবেদিত প্রাণ, আগুন সম্পন্ন মানুষের দরকার। সে দেখা যাবে। তবে যদি মনে করেন আমার চিন্তার কোন মেরিট আছে, তাহলে ব্যাপারটা নিয়ে কবিতার আসরের মালিকের সাথে আগে আলোচনা করতে পারেন ব্যক্তিগত যোগাযোগে। তারপর আসরের আলোচনা সভায় একসময় পোস্ট দিতে পারেন।আমি মনে করি কবিতার আসরে অনেক ভালো কবি আছে যারা প্রতিষ্ঠিত অনেক কবির চেয়ে ভালো লেখে, এবং এরকম সুযোগ পেলে কবিতার আসরের আরো অনেক আনাড়ি কবিরাও একদিন আলোর মুখ দেখবে।"


২০/০৪/২০১৭ তারিখে কবিতার আসরের সুপ্রিয় এডমিন পল্লব আশফাক আমাকে একটা ইমেল পাঠান আসর সংক্রান্ত আমার এক প্রশ্নের উত্তরে যাতে ইঙ্গিত দেন নিজস্ব প্রকাশনা বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেওয়ার ব্যাপারে। এরপর আলোচনার পাতায় বিভিন্ন পোস্ট মারফত আমরা 'অর্ক প্রকাশনীর' খবর জানতে পারি। ইদানিং আরও জানি এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম স্বপ্ন পূরণ হওয়া কবি সরদার আরিফ উদ্দীন এবং তার প্রকাশিত বই 'তোমার টানে' সম্পর্কে। আমার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'বেলা শেষের রঙ' অর্ক প্রকাশনী থেকে ২৫/১২/২০১৮ তারিখে প্রকাশের মধ্য দিয়ে আমার স্বপ্নও পূরণ হয়েছে। আর আমরা সবাই জানি আমার ইমেলে উল্লেখ করা সেই নিবেদিত ও আগুন সম্পন্ন মানুষটি নিজে থেকেই বেরিয়ে এসেছেন, কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল। তাই বলি, আগুন যাঁর ভেতরে আছে সে জ্বলবেই।  


অর্ক প্রকাশনী-কে আমার এই লেখায় 'আলোক বর্তিকা' বলব না 'প্রতিষ্ঠান' বলব এ নিয়েও অনেক ভেবেছি আমার এই লেখাটির সময়। তবে শেষ পর্যন্ত আমি প্রতিষ্ঠান বলতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করি। কারণ, আলোক বর্তিকা আলো দেখালেও একটা প্রতিষ্ঠানই পারে কোন স্বপ্ন ও পরিকল্পনাকে কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করতে। একটা প্রতিষ্ঠানের কাছেই খরিদ্দার দাবীর সাথে সেবা আশা করতে পারে। আমি প্রত্যাশা রাখি অর্ক প্রকাশনী সেই অঙ্গীকারেই দৃপ্তপদে এগিয়ে যাবে সামনের দিনগুলিতে। সে বিষয়ে কিছু ভবিষ্যত পদক্ষেপ (বলা যায় আমার প্রত্যাশা) নিম্নরূপ হওয়া উচিত বলে আমি মনে করিঃ


১। আগুন সম্পন্ন মানুষটির কাছে থাকা তরুণ কবিগণ সর্বোতভাবে সহযোগীতা করবেন ও কাজ শিখে নেবেন ভবিষ্যতে দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্যে।
২। এর প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোগ নেবেন এটির একটি সুন্দর ও তথ্যসমৃদ্ধ ওয়েবসাইট তৈরী করার জন্যে এবং কবিতার আসরে তার লিঙ্ক দেওয়ার জন্যে।
৩। প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য হবে সেবা প্রদান যার সফলতা আনবে বানিজ্যিক সাফল্য।
৪। প্রবাসী কবিদের বইগুলি কম ঝামেলায় প্রকাশ করা।
৫। দেশে বসবাসরত কবিতার আসরের কবিদের বই সুলভমূল্যে প্রকাশ করা।
৬। প্রকাশিত বইগুলি বইমেলা এবং অন্যান্য বই বিক্রেতার মাধ্যমে এবং অনলাইনে বাজারজাত করা।  


যাই হোক, আমি মনে করি প্রতিষ্ঠাতার আরও অনেক পরিকল্পনা হয়তো আছে যা ক্রমাগত বাস্তবায়িত হবে। যাঁরা কবিতার বই প্রকাশের স্বপ্ন দেখেন অথচ প্রকাশের জন্যে  নির্ভরযোগ্য একটা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে আমার মতো প্রবাসে অবস্থানরত, আশা করি অর্ক প্রকাশনী তাদের স্বপ্ন পূরনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে যাবে।