পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে
ছুটে গেছি সমুদ্রের কাছে বহুবার জানতে
কার প্রতি কিসের তার এতো বিক্ষোভ
তর্জনে, গর্জনে পৃথিবীতে কি পাওয়ার লোভ?


একদিন যখন
সমস্ত পৃথিবী নিশিতে নিমগন
বিশ্ব চরাচরে কোলাহল গিয়েছিল থেমে
শীতল স্পর্শ নিতে তার হাঁটুজলে নেমে
দূর সমুদ্রের গভীরে পেতেছিনু কান
শুনেছিনু কেন তার অনাদিকাল কেঁদে যায় প্রাণ।


চুপিচুপি বলেছিল; যুগে যুগে ছুটে এসে তীরে
হৃদয়ের ভালোবাসার নিঃশেষে গিয়েছি তো ফিরে
তীরে থাকা পলি মাটির গলেনি হৃদয়
দিনে দিনে হয়েছে তা পাথর-নিদয়।
বালুকাবেলায় আঁকা যত পদরেখা
হৃদয়ের অনুভূতি, জীবনের আলেখ্য লেখা
যতবার ছুটে এসে দিতে চাই ছুঁয়ে
নোনাজলে মুছে যায় অকারণে ধুয়ে।


ক্লেদাক্ত পৃথিবীকে রোজ ধুয়ে ধুয়ে
পঙ্কিলতা বুকে নিয়ে অবারিত শুয়ে
হৃদয়ের সমস্ত রোষে গর্জন তুলে
ছুঁ'তে চেয়ে আকাশকে উঠি ফুলে ফুলে।
বলি তারে, এতো জলে ধুয়ে দাও তোমার পৃথিবীকে
তবু কেন দুঃখ, পাপ, পঙ্কিলতা তার দিকে দিকে?
নিশ্চুপ সে আকাশ, নিষ্ঠুর হাসে
বলে না সে পৃথিবীকে কেন ভালোবাসে।  
অথচ আমার বুকে তার নিরন্তর খেলা
আলোছায়া রঙের ইন্দ্রজাল উদয়-অস্ত-বেলা।
তার বুকে অগনিত তারকারা হাঁটে
তার প্রতিবিম্ব নিয়ে আমার রাত কাটে।
তার বুকে বাড়ে কমে মোহনীয় চাঁদ
আমার হৃদয়কে উদ্বেলের কী নিঠুর ফাঁদ!
নিজেরই অজান্তে খেলি জোয়ার ভাঁটায়
হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা তার বুকে পাঠায়।
বিনিময়ে পাঠায় সে নিঠুর তার হাসি
খন্ড, খন্ড আলো খেলে ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাসি'।
এ বিশাল বুকে শুধু পঙ্কিলতা বিনে
দেয়নি কেউ স্পর্শ তার, ভালোবাসার ঋণে।
সে বিরহে যুগ যুগ করি যত ক্রন্দন
পৃথিবী দেখে নিষ্ঠুরতা, বিক্ষোভ, গর্জন।


ব্যর্থ কবি, যুগে যুগে আমার তরঙ্গ-নিনাদ
যেমন ব্যর্থ তোমার কলমের তীব্র প্রতিবাদ।
হে কবি! করিও ধারণ তাই তোমার বুকে  
আমার যত অক্ষমতা কেঁদে যায় দুখে।
তার সাথে বন্ধু মোর করে যেও ক্ষমা
এই বুকে নেই তোমার পিপাসার জলকণা জমা।
তবু এসো যুগে যুগে আমার সৈকতে
সাথে নিয়ে দুঃখ, ব্যথা নিষ্ঠুর পৃথিবী হতে
অক্ষমতার সমস্ত বেদনা দুইজনে করে নিয়ে ভাগ
পৃথিবীকে দিয়ে যাবো নিঃস্বার্থ, পূর্ণ অনুরাগ।