আজ থেকে বছর দশেক আগে
বলেছিলাম তোমায় আমি-
পৃথিবীটা তোমার মতই গোল;
তাই ঘুরেফিরে দেখা হবে তোমার সাথে।
এ মুখে বলা কথা মন ভুলে গিয়েছিল।
সহসা আজ আবার মনে পড়ে গেল তোমায় দেখে।


আজ সরকারি বন্ধের দুপুরে-রোদ কাঁধে নিয়ে যখন যাচ্ছি পাড়ার মোড়ে।
পুরাতন হয়ে গেছি-তবু চঞ্চলতাটুকু কাটিয়ে উঠতে পারিনি আজ অবধি-
এখনো অনেকক্ষণ বেকার চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকতে পারিনা।
তাই হয়তো আবার তোমায় দেখা;
একই সেই চোখ,হাসির আভা,
শুধু সেই বাচ্চাসুলভ ভাবটা নেই চেহারায়।
চকচকে এক গাড়ি থেকে হুট করে নেমে আসলে-
তোমার হাতের আঙুল ধরা ফুটফুটে এক বাচ্চা।
আমাদের এ পাড়ায়ই নাকি তোমার বাচ্চার দামী স্কুলের এক শিক্ষকের বাসা খুঁজছিলে।
প্রচন্ড শক্তিশালী হাতুড়ির বাড়ি বুকে নিয়ে টিপটিপ পায়ে আমি এগুলাম তোমার পানে।
অত:পর কিছুটাক্ষণ শুধু মৌণতার।


মুখ ফুটে প্রথমে শুধালে-কেমন আছি।
যেদিন তোমায় বিদায় দিলাম ঠিক তার পর থেকে কোনদিন কেউ শুনেনি খারাপ আছি;
আজ তুমিও তো অন্যকেউ নও।
তাও কেন বিষাদের ছায়া চোখে নিয়ে প্রশ্ন করলে?


শৈশবের অপরিপক্ক প্রেম নয়,
যৌবনের অতৃপ্ত ক্ষুধায় নয়,
তুমি এসেছিলে আমার কৈশোর আর তারুণ্যের সন্ধিলগ্নে।
আমি ছিলাম ঝড়ো হাওয়া,তুমি ছিলে কাঁশবন।
তুমি সাদা মেঘ হয়ে উঁকি দিলেই আমি হিমেল হাওয়ায় উড়ে যেতাম।
অত:পর স্রোতে বয়ে চলা,
আমাদের সবার চোখে বড় হয়ে যাওয়া,
সমাজ,ধর্ম আর পরিবারকে মেনে নিয়ে তোমার ছুটি নেওয়া।


আচ্ছা বলোতো-পৃথিবীটা গোল কেন সবার?
জমা রাখা প্রশ্নগুলো জাগলো  কেন আবার?


এক আকাশ মাতাল জোছনায় কি হারাও তুমি কারো সাথে?
সাথের মানুষটা কি অঝোর বর্ষণে তোমার হাত ধরে ভিজতে চায়?
তোমায় কি কেউ দেখিয়েছে তারার নিচে জোনাকির মেলা?
রাতের ট্রেনে পাশাপাশি বসে কেউ কি চাকার আর্তনাদে মিলিয়েছে তোমার নাম?


যা করেছো বেশ করেছো,বলছি তোমায় আজ-
তোমার মেরুন রঙের গাড়ি,আমার কপালে মধ্যবিত্ত ভাঁজ।
কেমন আছো,কেমন ছিলে,
শুধালাম না কিছু,
দৃষ্টিজুড়ে ছিল তোমার গাড়ির দামী ধোঁয়া শুধু।


টগবগে রক্তে একদা তোমার চলে যাওয়ার কথা উঠলেই আমি পৃথিবী ভেঙে চুরমার করে ফেলতে চাইতাম,
সব সত্যকে ভূমিসাৎ করে দিতাম,
সব কল্পনা আর মিথ্যাকে ভালোবাসার আদলে প্রশ্রয় দিতাম।
তোমার চামড়ায় অন্য কারো অধিকার-ভাবতেই রক্তের দাগ দেখতাম।
প্রথম তোমার ঠোঁটে ঈশ্বর আর তোমার চুলে স্বর্গ....
শুধু বড় বেশিনির্বাক ছিল তোমার চলে যাওয়া।।।


সেই থেকে আর কখনো স্বর্গ পাইনি,ঈশ্বর পাইনি,
কারো হাতে হাত রেখে মরে যাইনি,
সেই থেকে আর আবেগ নিয়ে লিখতে পারিনি।
কবিতা লেখলেও তুমি চলে আসতে,
উপন্যাস ভাবলেও দৃশ্যপট তুমি।
আজ শুধু বছর দশেক পরে লিখে গেলাম শেষ লেখাটি।


তোমার ডাকা সে নামগুলো আজ নিউরন সেলে নিথর,
আমি তারপর থেকে আর বৃষ্টি,জোছনা বা সমুদ্রে ভালোবাসা খুঁজে পাইনি।
শুধু কোন এক অভাগীকে নিয়ে ছাঁদের নিচে ঘর পেতেছি-
সে শুধু জেনে এসেছে আমি এক অথর্ব নিষ্প্রাণ দায়িত্ববান সংসারচালক.....


আজ আমার শেষ লেখায় একটি ইচ্ছা জানিয়ে গেলাম-
হয়তো কোন এক অন্যজন্মে তুমি রাস্তার মোড়ে আমি হয়ে থেকো,
আমি গাড়ি থেকে নেমে গুটিপায়ে এগিয়ে আসা তোমাকে দেখবো।
খুব জানতে ইচ্ছে করছে-ঠিক কি ভাবছিলে তখন তুমি;
কোন ঝড় কি বয়ে যাচ্ছিলো তোমার মনে?
কোন দশ বছর আগের এক চঞ্চলতাকে খুঁজে পেয়েছিলে?
নাকি শুধুই অতীত থেকে বেরিয়ে আসা জড়ো এক অনুভূতিকে?