বাঁধন হীন প্রকৃতিকে
গ্রামবাসীরা চায়,
অক্ষি রেখে শ্যাম দৃশ্যে
আনন্দ কুড়ায়।
রয়েছে সেথা ভূমি বক্ষে
অফুরন্ত সুখ,
প্রকৃতির স্বাধীন গতি
তাড়িত করে দুখ।
নেই সেথায় আবর্জনা
মশা মাছির ঝাঁক,
নজরে পড়ে বৃক্ষ ডালে
মক্ষিকার চাক।
বৃক্ষ ডালে বিহগ ডাকে
মিষ্ট সুর তুলে,
শ্রবণ করে দুঃখ গুলো
যায় সকলে ভুলে।
আনন্দে ও নিরানন্দে
কাটায় মিলে ঝুলে,
দাঁড়ায় পাশে অন্যদের
কষ্ট দেখা দিলে।
তপন হাসে তরু চূড়ায়
পুবে উদয় কালে,
অস্তাচলে সাঁতার কাটে
পল্লবে ও জলে।
চন্দ্র হাসে সারা রাত্র
তরু লতার ফাঁকে,
বৃক্ষরাজি গাত্র ছায়া
ভূমির গায়ে রাখে।
বৃক্ষ দোলে বায়ুর সনে
মৃত্তিকায় বসে,
দৃশ্য ভাসে চাঁদ-তপন
ঊর্ধ্বে যবে হাসে।
গ্রীষ্মকালে নদীর চরে
খেলে রাখাল ছেলে,
সাঁতার কাটে গরমে সব
হাটু অব্দি জলে।
তিব্র ঝড়ে মনের সুখে
কুড়ায় সবে আম,
মুখ রঙিন করে সবাই
খেয়ে অনেক জাম।
লম্ফজম্প দিয়ে বিড়াল
কাঠাল গুলো খায়,
হৈহল্লা করে সবাই
মুহূর্তে তাড়ায়।
বাদুড় বসে বৃক্ষ ডালে
লিচু উজাড় করে,
শিশুরা সব এই ফলটি
শক্ত হাতে ধরে।
মৃত্তিকায় ঝরা পত্র
বিছানা হয়ে থাকে,
অস্তিত্ব বিলীন করে
ভূমি শীতল রাখে।
বৃক্ষ ডালে নব পত্র
সবুজ মুখে হাসে,
দৃশ্যটিকে চিত্ত সুখে
সবাই ভালো বাসে।
প্রস্ফুটিত কামিনী ফুল
হরিৎ করে সাদা,
গ্রীষ্ম শেষে শুষ্ক ভূমি
বৃষ্টি করে কাদা।
বর্ষা কালে কলকলিয়ে
চালায় পড়ে জল,
অধিক পানি নিচু জমিন
করে নেয় দখল।
খালবিল ও নদী-নালায়
মৎস করে খেলা,
শিশু-কিশোর অথৈ জলে
চড়ে তখন ভেলা।
কৃষক ভাই করে কর্ম
নিজ-দেশের তরে,
প্রকাশ পায় হাসির রেখা
ফসল যবে ধরে।
কদম ঘ্রাণ থাকে তখন
নাসিকাগ্রে লেগে,
বেলি-বকুল নড়ে তখন
তিব্র বায়ু বেগে।
ঊর্মি তালে নৃত্য করে
সাদা শাপলা ফুল,
পরিপূর্ণ থাকে দিঘির
চারি হরিৎ কোল।
নদীর বুকে চলে নৃত্য
অধিক পানি পেয়ে,
হাসি প্রকাশ করে লহর
মিষ্ট ধ্বনি দিয়ে।
বর্ষাকালে বৃক্ষ ডালে
দোলনা চড়ে ফল,
গ্রামবাসীরা এসব খেয়ে
বাড়ায় দেহ বল।
কাদার সনে সখ্য করে
কাটে সবার দিন,
যত্ন করে মৃত্তিকাকে
কমায় কিছু ঋণ।
পল্লী সাজে শরৎ কালে
ঋতুর রাণী হয়ে,
বায়ু তখন ধীরগতিতে
শীতল যায় দিয়ে।
শিউলি ঝরে পড়ে তখন
রাস্তায়-উঠানে,
সুগন্ধটা ছড়িয়ে পড়ে
প্রত্যেকটা কোনে।
নৃত্য করে বায়ুর সনে
সফেদ কাশ ফুল,
দৃশ্যটিকে দেখতে কভু
কেউ করেনা ভুল।
ধানের চারা মৃত্তিকাকে
দেয় হরিৎ করে,
দৃশ্য দেখে নেত্র-মন
যায় সবার ভরে।
সারা রাত্র তরু লতায়
শিশির থাকে বসে,
রবিরশ্মি অঙ্গে মেখে
স্বর্ণ মুখে হাসে।
স্বচ্ছ জলে পুঁচকে পুটি
দলবদ্ধ হাটে,
চঞ্চু দিয়ে সারস পাখি
দেয় ঢুকিয়ে পেটে।
আউশধান মাড়াই করে
কৃষকে পায় সুখ,
আনন্দটা করে প্রকাশ
কৃষাণীদের চোখ।
শরৎ রানী হেসে বেড়ায়
ধরিত্রীর বুকে,
রূপ ঝলক দিয়ে সবার
হাসি ফুটায় মুখে।
হেমন্তের শেষ লগ্নে
সোনালী হাসে মাঠে,
স্কন্ধে নিয়ে ধানের আঁটি
বাড়ির পানে হাটে।
সু ঘ্রাণ দিয়ে আমন ধান
অন্তরটা ভরে,
চড়ুই পাখি আঙ্গিনায়
সারাটাদিন ওড়ে।
প্রতিটি ঘরে নবান্নের
আমোদ উৎসব,
কর্ণে ভাসে বহু দূরে ও
আনন্দের রব।
সন্ধ্যা কালে খেঁকশিয়াল
হুক্কাহুয়া ডাকে,
কম্প দিয়ে শিশুরা সব
চুপটি মেরে থাকে।
কন্যা আসে পিত্রালয়ে
সঙ্গে স্বামী নিয়ে,
বরণ করে সবাই মিলে
হাসি প্লাবন দিয়ে।
নতুন চালে বানায় সবে
সুমিষ্ট পায়েস,
নব জামাই করে তখন
আনন্দ-আয়েশ।
বায়ুর সনে গন্ধরাজ
গন্ধ নিয়ে ভাসে,
শিশির জমে সারা রাত্র
অন্তহীন ঘাসে।
সব্জিগুলো করে সবুজ
উঁচু জমির মাটি,
মৃত্তিকা যে স্বর্ণ চেয়ে
লক্ষ গুণে খাঁটি।
শীত স্পর্শে গ্রামাঞ্চলে
পিঠের আয়োজন,
এই কর্ম দেয় যুগিয়ে
মনের বিনোদন।
হলুদ গাদা হাসে তখন
হলদি শোভা দিয়ে,
পল্লীবালা বাড়ায় রূপ
গলায় পরে নিয়ে।
গ্রামে তখন চলে নিত্য
নানা অনুষ্ঠান,
চিত্ত সুখে গায় যে সবে
নানা ধরন গান।
দিঘির জল ক্রমান্বয়ে
তলায় জমা পড়ে,
সবাই মিলে গল্প করে
হরষে মাছ ধরে।
সর্বাঙ্গে লাগিয়ে কাদা
শিশুরা খেলা করে,
রুই মাছের পিঠে তখন
গাড়ির মত চড়ে।
রবি রশ্মি স্পর্শ দিয়ে
তপ্ত রাখে গৃহ,
খড়পুড়িয়ে রাত্র বেলা
গরম করে দেহ।
খুশগল্প করে সবাই
চক্রাকারে বসে,
দেয় সকলে অট্টহাসি
গল্প ভরা রসে।
হলদি দিয়ে সর্ষে ফুল
ক্ষেত্র রাখে ঢেকে,
মন জুড়ায় হলদি রঙে
নয়ন দু'টি রেখে।
তরু চূড়ায় থাকে তখন
কুয়াশার চাদর,
পাল্লীবাসী চাদরটি কে
করে সদা আদর।
বসন্তের স্পর্শ পেয়ে
ডেকে যায় কুকিল,
মধুর সুর মনের সনে
করে মনের মিল।
বৃক্ষ ডালে থাকে তখন
বহু জাতের ফুল,
বায়ুর সনে ধাক্কা লেগে
খায় খুশিতে দোল।
শিমুল গাছে থাকে তখন
লাল-হলুদ বেশ,
নদীর ঘাটে নব বধূর
উড়ে লম্বা কেশ।
চারা গজায় রুক্ষ ভূমে
বৃষ্টি ছোয়া পেয়ে,
বাড়ায় শুভা বৃক্ষরাজি
ফুল-পত্র দিয়ে।
ঝরা পাতায় বসে সবাই
করে হস্তে কাজ,
বাঁশের বেত ধরে তখন
নতুন রূপে সাজ।
চৈত্র মাসে দমকা বায়ু
দেহ শীতল রাখে,
লোকে তখন মুক্ত বায়ু
সারা অঙ্গে মাখে।
বায়ুর সনে গগন জুড়ে
শিমুল তুলা ভাসে,
চায়না কেহ যেতে ফেরত
পল্লীগ্রামে এসে।
অহর্নিশ লেগেই থাকে
হাসি-খুশির ঢেউ,
প্রতিবেশীর দুঃখে কভু
সুখ করেনা কেউ।
ভূমি-জল ও রশ্মি সনে
মিশে সবাই থাকে,
প্রকৃতিকে নিজ স্বার্থে
নির্ভেজাল রাখে।
জীবনটা কে করে সহজ
প্রকৃতির দান,
ভূমি বক্ষে প্রতিটি গ্রাম
প্রসূনের বাগান।