শালিক পাখী  দেখলে
তোমার মেয়ে শুধু এক দুই তিন গুনত  
টিয়া পাখী দেখলে গান ধরত
ফুল বাগানে গেলে শুধু আগাছা কুড়াত
তোমায় দেখলে শুধু আদর দিত ।
মনে পড়ে তোমার ?  
স্বাধীনতার আজ কত বৎসর
তোমার মেয়ের বয়স ছিল তখন আঠারো বৎসর
দিনক্ষণ মাস চাঁদ দেখে মেয়ের বিয়ে ঠিক হল
কত লোক এলো আত্মীয় পরিজন  
হলো বিয়ে
তোমার মেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেললো  
বিনা মেঘে যেন বর্ষা নামলো তার চোখে
তুমি নিজ হাতে তুলে দিলে জামাইয়ের হাতে ।
যাত্রা দিল শশুর বাড়ী
বিদায়ের বেলায় বুক ফেটে যেন চৌচির হলো তোমার
বলে উঠলে,এত দিনের বুকে রাখা মেয়ে আমার,
তুমি শুকনা বাঁশের খোটায় মাথা ঠুকালে
প্রাণ খুলে দুয়া করলে ‘মা তুই সুখী হ ‘।
ওরা দুজনে বসে স্বপ্নে বিভোর হয়
ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্নে ।  
হঠাৎ বিকট গুলির আওয়াজ
বুটের পধাঘাতে অন্ধকার ঘরে কাহার প্রবেশ
কে তোমরা দাড়াও !
রাতটা ছিল ২৫শে মার্চ
যারা পালাবার তারা পালালো
ওরা যেখানে ছিল সেথায় রইলো  
পদাঘাত গুলি
বাঁচাও চিৎকার কি যে আর্তনাদ !
গুলিতে মেয়ের সাথীর বক্ষ বিদীর্ণ হলো
রক্ত ভেজা মেজে পড়ে রইল সে
তোমার মেয়ে কোথায় ?
পৃথিবীতে যাহা ছিল সবই রহিল
শুধু এই তাজা জীবন গুলো ফিরে না আর ।
সূর্যের উদয় হয়
লক্ষ যোজন মনে হয়
সূর্য অস্ত যায়
গুলীর শোঁ শোঁ শব্দ শুনা যায় ।
ঘুমিয়ে পড়া ছেলে গুলো উঠলো জেগে
তরুণ মনে জ্বললো আগুন
হাতে ধরল বন্দুক অস্ত্র ।
বাংলা মাগো তুমি কোথায়
তোমার বুকে ঠাই পেতে চাই
সুরমার বুকে রক্ত ধারা দিলো যারা
কর্ণফুলীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো তারা
পদ্মার বুকে এক হয়ে যাবে
বাংলা মাকে বাঁচাতে হবে
বাংলার বুকে স্বাধীন হয়ে বাঁচতে চাই ।
এমনি করে নয়টি মাস পরে
উদয় হয় নূতন সূর্যের
বাগানে অনেক আগাছার মাঝে
অজস্র ফুল গন্ধে বিভোর
হল বিজয়, দিনটি ছিল ১৬ই ডিসেম্বর ।  
কোথায় আমার মেয়ে?
তোমার আর্তনাদ চিৎকারে দেশটি কেঁপে উঠে  
তোমার মেয়ে রেল সড়কের গর্ত থেকে বাহির হয়
এক নয় দুই নয় হাজারো
তোমার মেয়ের লাল উর্ণা
আবৃত কিছুই নয় সবই গলিত সবই উলঙ্গ
কেঁদোনাকো আর সূর্যে আবীর ধরেছে  
পূর্ণিমা আজ।
মুজাহিদ চৌধুরী ।লন্ডন। ১৫।১২।১২  
muzahid.choudhury@gmail.com