ভূমিকা:
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ত্রিপুরা রাজ্যের একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক ঐতিহ্য রয়েছে। এই রাজ্যের প্রকাশনা আন্দোলনের যাত্রা বিভিন্ন সংগঠন দ্বারা উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাবিত।‘প্রকাশনা মঞ্চ’, ত্রিপুরার একটি বিশিষ্ট প্রকাশনা প্ল্যাটফর্ম, যা এই অঞ্চলের সাহিত্যে স্থানীয় ভাষা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।


প্রেক্ষাপট:
২০১৮ ইং এর ২৯ ডিসেম্বর ‘ত্রিপুরা প্রকাশনা মঞ্চ’ একটি অন্যতম প্রধান প্রকাশনা সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ত্রিপুরায় ‘প্রকাশনা মঞ্চ’-এর প্রকাশনা আন্দোলনের ইতিহাস মাত্র ৭ বছরের।এই অল্প দিনের যাত্রা পথে সংগঠনটি রাজ্যে সাহিত্যিক কর্মকাণ্ডে উত্থান প্রত্যক্ষ করেছে। পরবর্তী কালে ২০২১ ইং এর ১৪ই নভেম্বর ‘প্রকাশনা মঞ্চ’ নামে সংগঠনটি  সরকারি রেজিস্ট্রেশন পায়।  তবে, পরিতাপের বিষয় হলো এই  সংগঠনটি  রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পরেও কোন বারই আগরতলা বই মেলাতে ডাক পায়নি। যাইহোক এই ধরনের সামস্যা গুলোর নিরসনের জন্য সংগঠনের সদস্য সদস্যারা রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছেন।  


স্থানীয় ভাষার প্রচার:
প্রকাশনা আন্দোলনে “প্রকাশনা মঞ্চ’’ এর একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হল স্থানীয় ভাষার প্রচার ও সংরক্ষণের নিরলস প্রচেষ্টা। ত্রিপুরা বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের আবাসস্থল, প্রত্যেকের নিজস্ব ভাষা এবং সাংস্কৃতিক সূক্ষ্মতা রয়েছে। প্রকাশ মঞ্চ সক্রিয়ভাবে ককবরক, বাংলা, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, রিয়াং, চাকমা, মগ, ছিলোমিলো এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় সাহিত্যকর্ম প্রকাশে নিযুক্ত রয়েছে।এই প্রয়াস নিশ্চিত করে যে, রাজ্যের ভাষাগত বৈচিত্র্যকে সাহিত্যের জগতে প্রকাশের আঙিনা তৈরী করে দেওয়া।


সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ:
ভাষাগত বৈচিত্র্যের পাশাপাশি, ত্রিপুরা একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করে। ‘প্রকাশনা মঞ্চ’ রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্মকে ধারণ করে এমন সাহিত্যকর্ম প্রকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। লোককাহিনী, পুরাণ এবং কিংবদন্তি ছাপায় স্থান পেয়েছে, “প্রকাশনা মঞ্চ’’ এর প্রচেষ্টায়। এটি শুধুমাত্র ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক পরিচয়ই রক্ষা করে না বরং তরুণ প্রজন্মকে এবং ত্রিপুরার সমস্ত লিটিল ম্যাগাজিনকে তাদের শিকড়ের সাথে সংযোগ করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্মও প্রদান করে।


স্থানীয় লেখকদের উৎসাহ:
‘প্রকাশনা মঞ্চ’ স্থানীয় লেখকদের জন্য একটি লালন ক্ষেত্র হয়েছে, তাদের প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। ত্রিপুরার প্রতিষ্ঠিত এবং উদীয়মান উভয় লেখকের কাজ প্রকাশ করে, একটি প্রাণবন্ত সাহিত্যিক সম্প্রদায়ের বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। এই অনুপ্রেরণা শুধু নতুন কণ্ঠের আবিস্কারই করেনি বরং এই অঞ্চলের সাহিত্যিক কাঠামোকেও শক্তিশালী করেছে।


পঠন সংস্কৃতির প্রচার:
প্রকাশনার বাইরেও, ‘প্রকাশনা মঞ্চ’ ত্রিপুরায় পাঠ সংস্কৃতির প্রচারে সক্রিয় হয়েছে। বইমেলা, সাহিত্য ইভেন্ট এবং আউটরিচ প্রোগ্রামের মাধ্যমে, এটি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে যেখানে পড়া শুধুমাত্র একটি একাকী কার্যকলাপ নয় বরং একটি গণ অভিজ্ঞতা নিয়ে পথ চলা। এটি কেবল সাহিত্যের প্রবেশযোগ্যতাই বাড়ায়নি বরং ত্রিপুরার বাসিন্দাদের মধ্যে বৌদ্ধিক কৌতূহলের অনুভূতিও বাড়িয়েছে।


চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা:
যদিও প্রকাশনা মঞ্চ ত্রিপুরার প্রকাশনা আন্দোলনে একটি রূপান্তরমূলক ভূমিকা পালন করেছে, এক্ষেত্রে এই সংস্থার সামনে অনেকগুলি চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, এবং পড়ার অভ্যাস পরিবর্তন-এই প্রকাশনা  প্ল্যাটফর্মের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাইহোক, অভিযোজন যোগ্যতা এবং উদ্ভাবনের সাথে,  ‘প্রকাশনা মঞ্চ’ বিকশিত হয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিকে আলিঙ্গন করে  বৃহত্তর পাঠকদের কাছে পৌঁছাতে পারবে।


উপসংহার:
এই সংগঠন ত্রিপুরার প্রকাশনা আন্দোলনের আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, যা সাহিত্য অন্বেষণ, সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ এবং ভাষাগত বৈচিত্র্যের চেতনাকে মূর্ত করে। স্থানীয় ভাষার প্রচার, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, স্থানীয় লেখকদের উত্সাহিত করা এবং পাঠ সংস্কৃতির বিকাশে এর ভূমিকা অপরিহার্য।‘প্রকাশনা মঞ্চ’ যেহেতু ত্রিপুরার সাহিত্য জগতে তার যাত্রা অব্যাহত রেখেছে, তাই এই সংগঠন নিশ্চিত করে যে এই অনন্য অঞ্চলের কণ্ঠস্বর দূর-দূরান্তে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে  নিশ্চয় পৌছে দিতে পারবে। সাহিত্যের প্রচার ও অন্যান্য  প্রকাশনার  জন্য নিবেদিত একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত, এই সংগঠন শীঘ্রই ত্রিপুরায় প্রকাশনা আন্দোলনের অনুঘটক হয়ে ওঠেবে এটাই বিশ্বাস।