আজকের কবিতাটি নদ/নদীর জীবন প্রবাহ ও তাঁর স্থানভেদে রূপ ও নামের কেমন আশ্চর্য জনক পরিবর্তন হয়, তাঁরই গল্প শোনাবো, তবে রূপকের আড়ালে!


এখন আমি উচ্ছল, স্রোতস্বিনী, ক্ষীণ তটিনী; মদ যৌবনে ভরপুর তরঙ্গায়িত ঢেউয়ে ফুঁসছি-
সামনে যা পাবো; বিধস্ত করে এগিয়ে যাবো!


অধর উপত্যকা দিয়ে চলেছি আমি,
আমার নাম --- অধরাবতী!*
তুষার জলে মোড়া এলায়িত নীল জল কেশরাশির গর্জন ও তূর্যে সাড়া অধরদেশ প্রকম্পিত!


এই সবে অধরদেশ পিছনে ফেলে, চিবুক পাহাড় অতিক্রম করলাম... এখন আমি গণ্ডদেশের উপর দিয়ে প্রবল বেগে ছুটে চলেছি,
এখন আমার নাম --- মালিনী!*


সামনেই প্রকাণ্ড দুই পর্বতরাজি, নাম- কুচ-পর্বত!
যার; তুলনাহীন সুরম্য সৌন্দর্যের মাধুর্যে; পুরুষ নারী সকলেই বিমোহিত।
কখনও চড়াই কখনও উতরাই মাড়িয়েই চলেছি।
এখানে আমার নাম --- শ্বেতবতী!*


যতই এগোই বেগের প্রাবল্য স্তিমিত হচ্ছে, প্রস্থে প্রসারিত হচ্ছে আমার ক্ষীণ তটিনী!
কুঁচ পর্বত'কে পিছনে ফেলে- চলেছি মধ্যপ্রদেশের দিকে!
মধ্যপ্রদেশ...! কি মসৃণ! আর সুললিত, এখানে আমি পূর্ণ-যৌবনাবতী... নাম --- ভোগেশ্বরী!*
ধিরে ধিরে স্রোতের বেগ স্তিমিও, এখন আমি অনেক শান্ত আর কিছুটা ক্লান্ত। মোহনা আমায় টানছে?


মধ্যপ্রদেশের পথেই চলতে চলতে পেলাম এক গভীর নাভিকুণ্ড- উফফস! কি গভীর আর বেশ উষ্ণ!
কিন্তু ওই, মোহনা আমাকে টানছে।
নাভিদেশকে বাম হাতে রেখে ঘন বন'কে পিছনে ফেলে ছুটে চললাম শেষ গন্তব্য সঙ্গমের টানে...
যার আরেক নাম- কড়িদেশ!


ওহহহ...! কি অলঙ্ঘ্য টান, কিহ অপার্থিব উত্তাপ; আর ফেরমনের একটা মিষ্টি গন্ধ মিলে মিশে এক অদ্ভুত মায়া জগতের রচনা করেছে!
আজ আমি সকল বেগ হারিয়েও-
প্রাণের শেষ আবেগকে সঙ্গী করে মিশে গেলাম কড়িদেশে। নাম হল --- কামিনী!*


শেষ হল আমার দীর্ঘ পথচলার, আমি এখন সাগর সঙ্গমে সঙ্গমরতা... কামিনী!


আমার চুপকথারা লেখা থাকলো শুধু তোমাদেরই মনে!
কি আমায় রাখবে তো মনে? আমি যে তোমার শরীরেও বই!!!