বহু কষ্টে ধরে আছি শ্বাস, আছি কোনমতে বেঁচে
এই এক চিলতে আকাশের নীচে;
পথ নেই এতটুকু বেরোবার
নেই দিগন্তজোড়া সবুজের দুর্বার
হাতছানি
নেই কুয়াশার জাল, শিশিরের পানি
পাষাণ-ঘেরা এই চার হাত কৃত্রিম সবুজ মাত্র
যা কিনা সকাল-দুপুর-বিকালের দুচোখ জুড়ানোর পাত্র-
আর কিছু নেই, নির্জীব পাষাণ-ঘেরা চারিধার
নিঃশ্বাসের শব্দগুলি কেবলই বারবার
ফিরে আসে হৃদপিন্ডের কাছাকাছি-
এইভাবে বেঁচে থাকা, জানি না কতটুকু জীবনের কাছাকাছি আছি
ওই ঘরের আঁতুড়ের কথা
নতুন জীবনের এক বারতা
দেখেছি পহেলা তারিখে কোন এক দৈনিকের পাতায়
আজ উনিশ কি বিশ হবে, কিন্তু কোথায়
গেল সেই কাতর-কান্নার সিম্পোনী
কেন আজও শুনিনি
বুঝেছি, সেও পড়েছে আটকা কেবলই অকারণে
ঐ বিস্তৃত কঠোর কাঁচের ইন্জাংশনে 
এখানে নেই বৃক্ষ ও বৃষ্টির পৌরাণিক মাখামাখি সেই
এখানে ফুল আর ফাগুনের রূপশালী মিতালী নেই
এখানে কৃষ্ণচূড়ার আগুন দেখিনা
তাইতো ফাগুন আসে কখন তাও বুঝি না
দখিনের জানালাটা একেবারে খোলা পড়ে না
জানি ওখানে আর বাতাস ওড়ে না
ওখানে দেখি এখন লেনিনের পুনঃপতন
ভালোবাসার রঙ দেখি সারাক্ষণ
গালিবের জন্মদিনের আকাশ কাঁপানো ফূর্তিতে
অথবা হিরোশিমার ভাবগম্ভীর বর্ষপূর্তিতে
আর পারিনে, বড়ই কষ্ট লাগে বুকের ভেতরে
আধমরা জীবনটি কেবলই ছটফট করে
বড়বেশি ইচ্ছে করে আবার ফিরে যেতে
সেই বিল সেই ক্ষেতে
সেই ‘অবারিত মাঠ গগন ললাট চুমে যেথা
পদধুলি’র দেশে সেথা
কিংবা ধানসিঁড়িটির তীরে
কিংবা ফিরে-ফিরে
সেই আঁশসেওড়া-ঘেরা সরু পথটি ধরেধরে এক সময়
গাঢ় সবুজ তমালময়
হিজলের বিলে
যেখানে রহস্যেভরা প্রকৃতির ছায়া পড়ে আকাশের নীলে
আকাশ যেখানে প্রথম শীতের সন্ধ্যায়
নব বধুর মতো শান্ত হয়ে যায়
তারপর বুনো শৃগালের সহসা সিম্পোনী
শুনে ঝির-ঝির কেঁপে ওঠে ঐ দূর রোহিণী
যেন মিটিমিটি চেয়ে থাকে জগতের পানে
শন-শন উত্তুরে হাওয়া বয়ে আনে
হিমালয়ের শীত, হৃদয়ে ছটা লাগে তার 
সহসা একাকার
হয়ে যায় যেন চোখ-কান-নাক এক অদৃশ্য বন্ধন-বলে
কেবল তখনি বুঝতে পারি কোন এক ছলে
হৃদয়ও কথা বলে যায়
নির্দিধায়
হৃদয়ের এমন মধুর কথকতা তাই
আবারও শুনতে চাই
কেবলই শুনতে চাই