দুখু মিঞা ,এ এক দুরুহ সময়,
আমাদের ঘরের চাল উড়ে গেছে ঝড়ে,
আজ তোমার জন্মবার্ষিকীর বাসরে বাজবে
গান, বক্তৃতা, কবিতা ।গতকাল আামাদের
আয়ের শেষ সম্বল হিন্দমোটর বন্ধ হয়ে গেছে,


দরজায় তালা,মালিক বেপাত্তা,বাবাকে ফেরাতে পারিনি,
দুর্বল-চোখে অন্ধকার দেখে আজ হাসপাতালে,
অথচ এমন তো হবার কথা ছিলনা।আমি সদ্য চোখ ফোটা
ক্লাশ টুর বেঞ্চে তখন,দিদি কাঁদতে কাঁদতে আমায় নিয়ে গেল সোজা হাসপাতাল,অনেকে অসুস্থ,সারি সারি বেড, সেই শেষ


দুখু মিঞা ডিম ভাত পেটপুরে,তারপর ঝড় এল উড়ে গেল চাল,
মায়ের সাড়া শব্দ পাইনি প্রথমে,রাত্রি বেলা দিদা এসে
ঠাকুরঘর থেকে টেনে তুলল মাকে অচেতন পাথর মূর্তি,
আমি প্রথম- দেখলাম মা আমায় দেখল না, কাউকে না,
শুধু মাথাঠুকে ঠাকুর আমায় নাও বলে চীত্কার করে কাঁদছিল ,


আমি সেইরকম ভালো বুঝি না দুখু,তোমার ফোটোর কাছে
দুগ্গা ঠাকুরের মতো,কালী ঠাকুরের মত প্রার্থণা করছি,
তুমিও তো ঠাকুর,আজ তিনদিন আমাদের ঘরে
চুলা জ্বলে নি ,দিদি আমায় মুড়ি এনে দিয়েছিল
দেখলাম ওর মুখটা শুকনো...কোনদিন তো এমন হয়নি,


ঠাকুর লকআউট মানে কি...বাবা অসুস্থ...
তা আর এমন কি,সুস্থ হলেই তো ফিরে আসবে...
অত কাঁদছে কেন মা,দিদি...দুখু ঠাকুর বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে ,
না দিদিকে বোল না,আমি এই মুড়িটাই খেয়ে নেব..
তারপর অনেকটা জল...ঘরেরই এক কোনে ঠাকুর ঘরের


চালটা-পাঁকা ছিল তাই রক্ষে,..আচ্ছা তোমার নামটা-
দুখু কেন ঠাকুর...তোমাদেরও কি ঘরের চাল ভেঙেছিল
লক আউট- হয়েছিল....বাবার  অসুখ করেছিলো
দিদি কাঁদতে কাঁদতে কেন বলল,আর স্কুলে যেতে হবে না,
আমার যে ভয় করছে,দিদি বসে আছে চুপটি করে আকাশের
দিকে চেয়ে, সূয্যি ওঠেনি আজ বড্ড মেঘলা,


আচ্ছা দুখু ঠাকুর বাবা যে বলেছিলো আর আমাদের-
কোন কষ্ট- হবে না,এবার পাঁকা ছাঁত হবে,গঞ্জের স্কুলে যাবি,
একটা গরু হবে,জমীন হবে,সেই জমিতে চাষ হবে,
ঘরে চাল আসবে, আলো জ্বলবে, জল আসবে, নবান্ন হবে,
ঘরে লোক আসবে.......তবে, সেই কবে থেকে কেরাসিন
      সন্ধ্যে হলেই জড়োসড়ো.....ছমছম গা


কি হল সেসব  বলনা,তুমি তো সব জানো ঠাকুর
পাড়ার সবাই এভাবে ভীড় জমিয়ে কি দেখছে...অমন করে..
মাকে ভালো করে দাও না,আমার যেন কেমন মনে হচ্ছে
বাবার খুব শরীর খারাপ হয়েছে, জানো দুখু ঠাকুর
সেবার আমাদের গায়ে দোল খেলার সময় সে কি-                 আনন্দ,বাবা,মা,দিদি আমি তো খাবার কথা-
   ভুলেই গিয়েছিলাম,মা জোর করে ধরে
   কোলে বসিয়ে খাইয়ে দিয়েছিলো ভাত,
কত আদর করে। আজ আর কিছু বলছে না কেন..


   আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে ঠাকুর----
আমি ঘুমিয়ে পড়ছি,মা এলে আমায় জাগিয়ে দিও...
আর মাকে বোল আমি এখন সব পারি,
  চাষ করা,লাঙল বোনা,ধান ভাঙা,সব ।
মা একটু বিশ্রাম নিক,দিদিও, আমি বাবার ঘরে যাই,


ওঃ আমরা তো তাবুতে থাকি,মাকে বোল
সবাই ছেড়ে গেলেও আমি তৈরী করবো এক অন্য ঘর,
আমরা সবাই থাকবো, সেটা হবে পৃথিবীর ঘর,
সবাই একসাথে,মাত্র একটাই ছাঁত থাকবে ,
আর নীচে আমরা সবাই, কি মজা হবে না, বলো..


একটা হাঁড়িতে ফুটছে খিঁচুরির জল,
আমরা পাত পেড়ে বসেছি তাকে ঘিরে-
       ছবিটা...দেখেছি আমি....  
আর দেখছি সব্বাইকে আবার এক ছাতের নীচে
কেমন এনেছি.....তোমরা পারলে না.....দ্যাখতো...
প্রকৃতির কোন ঘর আছে? গাছ,পাখি,মাঠ,পশু সবাই
  আমিও বানাবো এক আজব পান্থশালা,
আর সেখানে-আমার সবাই খুব সুখে থাকবো.....দেখো।