(1)


সেদিন সপ্তমী মনে আছে মাগো
মৃত্যুশয্যায় ঠাম্মি তোমার হাত ধরে বলেছিল,
" দিদি রে জীবনের যাতায়াত তো কান্না দিয়েই সাজানো,"
বুঝতে পারিনি,
পেটের ব্যাথাটা যখন ভরন্ত মাসের দিকে,
আমি বেশ টের পাচ্ছিলাম ,
তোমার স্বপ্নগুলো কেমন সজীব হয়ে উঠছে ,
চারিদিকের আবছা বাস্তব
একটু একটু করে স্বপ্নের মায়াজাল বিছাচ্ছে ,
আমি তাতে সাজিয়ে দিচ্ছি তোমাদের স্নেহ,মায়া,মমতা ।


আর তোমরা কেমন আহ্লাদে মেতে উঠছ,
প্রকাশের দিকে,
উন্মুক্ত আলোর দিকে তখন আমার কি উন্মাদনা
তালগোল পাকানো মাংসের দলার পরিপূর্ণ অবয়বে -
আসছি তোমার প্রিয় জায়গাটা কেড়ে নিতে ,
শখ,ইচ্ছেগুলোর স  ব  টা..............
তোমাদের বংশের পরম্পরা, যোগ-অভিযোগ
আমার বৃদ্ধিতে যোগ হচ্ছে ;
যোগ হচ্ছে কত ফেলে আসা,মুছে যাওয়া অভ্যেস,রীতি-নীতি,গঠন,প্রভাব ;
আমি দেখছি তোমার অনুনয় ফলক ছুঁয়েছে কৃষ্টির ,
পেতে চলেছ তোমার ইচ্ছে-
একান্তে দেখা স্বপ্নরুপের প্রতিরুপ ,আমিকে.....
কতভাবে দেখতে চেয়েছ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে,
নেড়ে-চেড়ে, তোমারই প্রতিচ্ছবি ;
ভাবছিলাম কতটুক সূত্র জড়ো হলে
তোমাদের ইচ্ছেগুলো নিয়ে জন্মাতে পারবো মাগো।
                                    
                                   (2)


অথচ দেখো আজ আমি আমার মতো
নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছি ;
ঠাম্মি চলে গেছে, বলে গেছে ,
"সত্যটা ভুলে যাস না",
আমি রুপান্তরিত হতে চেয়েছিলাম..
তোমার আদলে,বাবার আদলে
আমি তোমাদের পছন্দগুলোকে বেঁছে নিয়েছিলাম
এমনকি সঞ্চিত স্বপ্নগুলো ও ;
একান্ত বলে কিছু থাকতে নেই বলে
আমি চেয়েছিলাম তোমাদের হাসিমুখ মা...............


তারপর একটা ইমারত তৈরি ....
তোমার, আমার ধারাবাহিকতার
প্রাত্যহিকী জুড়ে; নিষ্ঠার বাদানুবাদ ,
থিওরি প্রাকটিক্যালের ভুল ব্যালান্স আর রোজকার
চিকেন প্রণ্ ...........ঘর, গেরস্থালী ।


সমাজ.জগৎ , স্থাণ কাল্ বদলে গেল সহসা
ন্যুব্জ হল পিঠ , কাঁধ , মাথা , ঘিলু , সব
হৃদয় ক্ষরণে অন্য আওয়াজ
অসংখ্য গহ্বরে খাবি খেতে খেতে
মিশে যাচ্ছি তখন নিজস্ব চেতনায়
ভাঙতে ভাঙতে শূণ্য অন্তঃসারে
একদিন সকালে ভাঙণ শেষের
প্রাক্ লগ্নে প্রজন্মের বিরাট ব্যাবধানে
তোমাকে আমার সন্দিহান মনে হবে
বিস্ময়ে মুখের দিকে,বিস্তর অভিযোগ নিয়ে.......
চেয়ে থাকবে তুমি ..............


কি জানি , এবারও মেয়েমানুষ হয়েই জন্মাব হয়তো !
স্রেফ মেয়েমানুষ !!