চার নম্বর খুপরির দিদিমা-
মেঘে মেঘে বেলা গড়িয়ে
পিতৃপ্রদত্ত নামখানি ভুলে গিয়েছেন কবেই!
সাদা থান আর গামছা কাঁধে,
নাইতে যান যমুনা তটের ঘাটে।
পুণ্যতোয়া যমুনা তিন ডুবে শুষে নেয়
দীর্ঘ আশি বছরের গ্লানি, প্রতিদিন।
সূর্যোদয়ের মূহুর্তে কাঁপা কণ্ঠে উচ্চারিত হয়
“ওম জবা-কুসুম শঙ্কাস্যং…….”
পরিশ্রান্ত পায়ে চার নম্বর খুপরির দিদিমা,
আবারও সেই খুপরিতেই ফিরে আসেন।
মনে বড় সাধ, মৃত্যুমুখে গঙ্গাজলের ছোঁয়া
কৃষ্ণ চরণে ঠাঁই দেবে পরলোকে।
প্রতিমাসে সম্বল হয় তিনশত টাকা
দিনগত পাপক্ষয়ে ক্ষয়িষ্ণু হয় তাও!
স্বপাক আহারে আধপেটা উদরান্ন,
মথুরানগরে বাড়ায় কৃষ্ণভক্তি।
কণ্ঠ-বেষ্টনী তুলসীমালা, লালিত হয় সযত্নে;
দিদিমা কিন্তু তার জরাজীর্ণ হাত দুখানি
কথায় কথায় কৃষ্ণ নামে কপালে ঠেকান।
পরনের শতচ্ছিন্ন সাদা থানখানি
জোড়াতালি গুণে লেগে থাকে গায়ে।
তিলক কেটে, নামাবলী গায়ে আমাদের দিদিমা
খালি পায়ে রোজ আরতি দেখতে যান!
লেলিহান শিখায় কখনও সখনও,
জাগরিত হয় ফেলে আসা স্মৃতি-গাঁথা।
পাশে বসা জনৈক সারদাসুন্দরীর উদ্দেশ্যে
দিদিমা বলে ওঠেন, “আমাদের দেশের বাড়িতে
এভাবেই সন্ধিপূজোয় আরতি হত..”
একরাশ বিরক্তি মুখে সারদাসুন্দরী নিশ্চুপ থাকেন।
পূণ্য সঞ্চয়ে ক্ষণিক বিরতিও বড় অসহ্য বোধ হয় তার!
স্মৃতি হাতড়ে আবারও দিদিমা দুলে ওঠেন,
“বাবা আমার নাম রেখেছিল হেমলতা..”
সারদাসুন্দরী উপহাস করেন, “ছিঃ ছিঃ!
ও কি কথা? এখনও ভোলনি পিছুটানগুলো?
আহা! তুমি না এখন ব্রজবাসিনী রাধা!!”