আমার কাছে তুমি
মানিক হোসেন


প্যারিস রোড,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়,
২০১৭ সাল,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্যারিস রোড,
তোমাকে নতুন মনে হচ্ছে।
আমিও নতুন।
কি সে নতুন?
ঐতো পুরোনের ছায়া।
এখানে তারা উদাস।
স্নিগ্ধতায় বিভোর।
তোমার রুপেই হয়তো।
তোমার ভালবাসায় হয়তো।
তুমি,
সারা বছরই মানুষকে জাগিয়ে রাখো
কল্পনায় আর বাস্তবতায়।
তুমি,
কখনো সবুজে ভরা,
কখনো কালো ও করুণ;
কখনো লজ্জায় লাল,
কখনো ছিন্ন আবরণ।
তবুও তুমি সুন্দর।
অন্য মায়া,
ঠিক কেমন তা ধরতে পারি নি।
তবে মা,ভাই,বোনের মায়া হতে আলাদা।
পছন্দের কুমারীর মায়া হতেও।
তোমার বুক চিড়ে হাটতে গেলে
পাশে কে আছে বা কে নেই,
সে বন্ধু নাকি প্রমিকা নাকি উদ্দাম কোন নারী,
তা বুঝার অভিপ্রায় নেই।
কারণ,তখন তুমি আছো।
শুক্রবার,
ছুটির দিন,
ক্লাস না হওয়াতে সবাই খুব খুশি।
কিন্তু,
তোমাকে না দেখার বেদনা যে
হাজারো হৃদয়কে টুকরো টুকরো করে
যা সেই ছুটিটুকু বিষন্ন করে দেয়।
মনের আবেগে,তোমার টানে
যখন তোমার পানে ছুটে গেলাম,
তখন দেখি অলকে এক শীতল হাওয়া এসে
বুকের গভীরে ছুয়ে যায়।
তুমি উন্মনা।
উন্মাদ করেছো হাজারো জীবন।
তোমাকে দেখে জন্ম হয়েছে কত কবির,
তোমাকে দেখে আশা ফিরে পেয়েছে কত কবি,
আজ তোমাকে দেখে মনে হয়,
কবিতা লিখাতেই আসল সুখ,
কবিতা প্রকাশে নয়।
তাই আবার লিখতে বসেছি।
হ্যা,তোমাকে নিয়ে।
তোমার প্রভূকে নিয়ে।


তুমি গন্ধ ছড়িয়ে দিয়েছো সারা দেশে,বাতাসের আবরণে;
ঘিরে আছো সবুজে তুমি উদাসী বেশে,আমার মন হরনে।
তুমি নীলাভ আকাশের নিচে
আছো একলা গভীর
হাজারো মানুষের ভিড়ে,
হাজারো মানুষ স্বপ্ন দেখে
তোমার আঙ্গিনায়
তোমার সে দুয়ার ঘিরে।
শীতল মায়া,উষ্ণ বাতাসে,
ঘনিয়ে আসে না কালো ছায়ায়,
জানিয়ে দাও তুমি আভাসে;
রেখে দাও তবু তোমার হিয়ায়;
আমারে।


তুমি আসলে কেমন করে,স্বপ্ন ছিড়ে,মায়ার জালে;
আমি তোমার অধর জুড়ে ছুয়ে গেলাম আড়ালে।
তোমার বুকে আমার ছায়া,
পড়বে তা ভাবিনি;
তুমি আমার স্বপ্ন নিয়ে,
আগে যাবে জানি নি।
তোমারই মুখোমুখি
কাঁদে কত অপরাধী
চেয়ে দেখেছ তুমি,
দল হারা ঐ পাখি
দেয়ালে রেখেছ বাধি
করেছি প্রিয় ভূমি,
তোমারে।


আজ আবার একটু স্বস্থি।
নিশ্চিত,আজ ছুটির দিন।
আজ বধ্যভূমি,
দুদিন পর,
একই যায়গায়।
একাডেমিক এলাকা থেকে একটু দুরে,
তাই নিয়মিত আসা হয় না।
ভালবাসা ও শ্রদ্ধা জানানোর
নির্জন ও নিরাপদ যায়গা।
সারাদিন কাঁদলেও তুমি ছাড়া কেউ দেখে না।
তোমারও একটা রুপ আছে।
ভাল লাগার রুপ।
গভীর হেলান দিয়ে শুয়ে থাকা মানুষগুলো।
তুমি তাদেরই স্মৃতি বহন কর।
তোমার শরীরের অংশে অংশে খুবলানো আছে।
তাদেরও ছিল।
তুমি সেই শ্রদ্ধার প্রতীক।
তুমি ভালবাসার অভিযান।


শহীদ মিনার,
আমরা চারবন্ধু দাড়িয়ে আছি।
হাতগুলো দিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে
একটা বৃত্ত পাকিয়ে রেখেছি।
ঠিক তোমার মতোই।
তাইতো হওয়া উচিত।
আমরা সবাই যদি এভাবে থাকতে শিখি,
একসাথে বাচতে শিখি
তাহলে হাজারো বায়ান্নো উনোসত্তর
হাতের ধুলো ভেবেই ঝেড়ে ফেলা যায়।
তুমিও শিক্ষার হাতিয়ার।
কত সভা,কত দলপাঠ
তোমাকে ঘিরে।
তোমার প্রতিটি দূর্বাঘাসই আমাদের শিক্ষা দেয়।
আমরা সে শিক্ষার যোগ্য নই।
তাই নিতে পারি না।
হে,শহীদ মিনার,
আমরা বই পড়ি
আর তোমার বুকে কাঁদি,
কিন্তু,যদি তোমার বক্ষ পড়তাম
তবে বই বুকে নিয়ে হাসতে পারতাম।


জোহা চত্ত্বর,
তোমার কথা ভাবতে গেলেই
দুচোখে জল এসে যায়।
তোমার সৌন্দর্য আছে।
বাইরে থেকে দেখা যায়।
তোমার লুকানো দুঃখ আছে।
গভীর থেকেও দেখা যায় না।
একটুখানি অনুভূতির বিষয়।
একটুখানি কান্নার মূহুর্ত।
তোমার বুকে যিনি শুয়ে আছেন
তিনি একজন মানুষ ছিলেন।
সাধারন মানুষের মতো নন।
তিনি ছিলেন ছাত্রপ্রেমী।
সময় তাকে এই প্রতিদান দিয়েছে।
গুলি আর বেয়োনেট।
আর লিখতে পারছি না।
মনে পড়ে যায় সে ইতিহাস।
কল্পনায় ভাসে তার ছায়া।
প্রধান ফটক থেকেই তোমাকে দেখা যায়।
প্রবেশ করলে সামনে থাকো তুমি।


ফটক থেকে প্রবেশের পর দুপাশে আছে দুটি স্থাপত্য।
সাবাস বাংলাদেশ ও
গোল্ডেন জুবিলি টাওয়ার।
এদের চেহারা আর নাম দেখলে
চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়
এরা কোন স্মৃতি বহন করে।
প্রথমটি স্বাধীনতা যুদ্ধ
আর দ্বিতীয়টি
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর কথামালা।


জোহা চত্ত্বরের পর মতিহার চত্ত্বরে
আর যে চত্তরগুলো চোখে পড়ে
তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোড়নময়
টুকিটাকি চত্ত্বর।
লিপু চত্ত্বরের পাশে
সবচেয়ে জনমানবপূর্ণ চত্ত্বর।
এখানটাতে সবসময় কোলাহল থাকে।
আরও কত চত্ত্বর আছে।
স্বপ্ন চত্তর,টিএসসি চত্ত্বর,জারজিজ চত্ত্বর
আরো কতো কি।
সব চত্ত্বরেই আড্ডা জমে।
কিন্তু টুকিটাকির মতো নয়।


সমস্ত শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি যেখানে যায়
সেটা হলো মুন্নুজান সড়ক।
কেউ যায় নিজ ঠিকানায়।
কেউ যায় হৃদয়ের ঠিকানায়।
কেউ যায় ঠিকানার খোজে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে
মুন্নুজান হলের সামনে দিয়ে যে সড়কটা চলে গেছে
তারই নাম মুন্নুজান সড়ক।
অনেক হাসি,সুখ,আনন্দ,ভালোবাসা আর প্রেমে
গড়ে ওঠা এই সড়ক রাবির শিক্ষার্থীদের
কাছে এক ঐতিহ্যবাহী সড়ক।
কারণ,অনেকের প্রেমই হয়তো গড়ে ওঠে এই সড়ক
ধরে হাটতে হাটতে।
এই সড়কই ভার্সিটির সঞ্জিবনী।