বসন্তের বিদায়ি বার্তা শেষ হতে না হতেই জানান দেয় বর্ষার আগমনী বার্তা-
বর্ষার ছোঁয়ায় চারদিকের লতা-পাতা, গাছগাছালি সব কিছুই যেন সবুজের আবরণে ঢেকে যেত।
খাল-বিল, নদীনালা চারদিকে ছিল থৈ থৈ পানি-
টিনের চালে বৃষ্টির শব্দের লোভে তাকিয়ে থাকতাম মেঘের দিকে-
বৃষ্টি হলেই জানালায় বসে দেখতাম- উঠনে কাদা-মাটি গুলো বর্ষার ঝুম বৃষ্টির শব্দের তালে তালে নাচে।
বৃষ্টির জলে হিজল ফুল গুলো ভেসে আসত, মনে হত বর্ষাকে বরণ করার জন্য এতদিন সেজে ছিল বরণ ডালায়।
বর্ষা মানেই ছিল কদমের শুভ্ররাগে প্রিয় মানুষটিকে রাঙিয়ে নেয়া।  
বৃষ্টির শব্দের সাথে সাথে হাঁসের প্যাক প্যাক ডাকে বাড়ি উঠন মনে হত যেন নৃত্যশালা।
মা’র চোখ রাঙানো উপেক্ষা করেই বৃষ্টির সাথে মিশে যেতাম।
বৃষ্টি মানেই স্কুলে না যাওয়ার ওজুহাত,
আবার স্কুলে থেকে আসার পথে বৃষ্টি হলে ইচ্ছে করেই স্কুলের ইউনিফর্ম ভিজিয়ে আসতাম-
যাতে ইউনিফর্ম এর ভিযে থাকার অজুহাতে স্কুলে যেতে না হয়।
বৃষ্টি মানেই ছিল হাডুডু, ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত থাকা-
মাঝে মাঝে বাবার সাথে মাঠে যেতে হত তাকে সাহায্য করার জন্য-
কখনো ধান কাটা, খেতের আগাছা পরিষ্কার করা, মাঠে গরু নিয়ে যাওয়া-
বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দুপুরবেলা যখন বাসায় আসতাম,
মা বাটি ভরে নতুন ধানের গরম গরম ভাতের মাড় দিয়ে বলতেন-
খেয়ে শরীরটা গরম করে গোসল করে আয়, আজ ইলিশ মাছের খিচুড়ি রান্না হয়েছে।    
সুযোগ পেলেই জ্বাল নিয়ে বের হয়ে যেতাম- খাল-বিল, নদী-নালায় মাছ ধরার জন্য।
ধরেছি কত টেংরা, পুটী, শিং, আর কৈ-
সাথে ছিল ভাজা, নতুন ধানের খৈ।
কখনো ছিল বাবার শাসন কখনো বা মায়ের
আমার নামে বাবার কাছে-
কত রকম বিচার আসত গাঁ-য়ের।
কলার ভেলায় করে তুলেছি কত কত শাপলা ফুল
চলে যেতাম কোন বালিকার বাড়ির আঙিনায়-
বানিয়ে কানের দুল।
বর্ষার দিনগুলি যেমন ছিল আনন্দের তেমনি কখনো আবার দুঃখের কারণ ও  হয়ে উঠত!
কোন কোন বর্ষায় বাবাকে দেখতাম মেঘের মত মুখ কালো করে বসে থাকত!
কারণ, বর্ষায় অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে কৃষকের স্বপ্ন ভেসে যায় জলের স্রোতে।