ভাসমান জীবন ঘুরেফিরে চলে শহরের অলিগলি,
যেখানে যেমন থাকে তেমন ভাসমান কাজলি।
কুকুরের সাথে ভাগাভাগি করে খেয়ে নেয় ডাস্টবিনে,
সুঠাম দেহ কাজলির গা থাকে একা নির্জনে।
দিবারাত চলে অলিগলিতে পথে বা ইস্টিশনে,
ঘুরে বেড়ায় এখানে সেখানে কয়জনে তারে চেনে।
দ্বারে দ্বারে ঘুরে যদি কিছু পায় সেখানে কাজলি খায়,
মাঝে মাঝে তার ক্ষুধার জীবন এমনি কাটিয়ে যায়।
কাজলি কানে শোনে না তেমন বধির জীবন তার,
একা একা কথা বলে কাজলি মুখটা যেন ভার।
কি যেন কি হয়েছে তার বলতে পারে না মুখে,
ছেঁড়া বসনে যতটুকু পারে পেটটা রেখেছে ঢেকে।
কাজলি মাথার চুল ছিঁড়ে নিজেই হেসে কয়,
কে যেন তারে জোর করে পেট ভরিয়ে দেয়।


হাল ছাড়া যেমন নৌকা চলে ঢেউয়ের তালে তালে,
দুখের জীবন নিদারুণ কষ্টে দিবানিশি তার চলে।
কখনো দেখা যায় রমনা পার্কে শাহবাগের মোড়ে,
কখনো আবার দেখা যায় তারে হাইকোর্ট মাজারে।
দেখা যায় তারে কাকলী বনানী আমতলী মহাখালী।
উসকোখুসকো চুল ঘুরে বেড়ায় সুঠাম দেহ কাজলি।
কখনো থাকে ফুটওভার ব্রিজ কখনো গাছের তলে,
কখনো থাকে রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত ছাদের তলে।


কিছুদিন পর পথের বাঁকে রক্তমাখা সারা শরীরে,
কাঠফাটা ওই রোদের মাঝে আধলা ইটের ঢিবির ধারে।
ফুটফুটে এক বাচ্চা কোলে কাজলিরে দেখা যায়,
আদর সোহাগে কাজলি তারে চুমু দিচ্ছে সারা গায়।
শিশু যে তার রতন মানিক রাখে যতনে কোলে,
কাজলি তারে বুকের আদরে চুমু দেয় হেসে গালে।
পিতৃপরিচয় নবজাতকের কেউ দিল না তারে,
ঘৃণার দৃষ্টি দেখিতেছে সব কেউ ঘেঁষে না ধারে।
দুদিন চলিছে প্রসব বেদনা কাতর জীবন তার,
হাউমাউ করে অনেক কেঁদেছে কেউ আসেনি একবার।
আজকে তার নিস্তার হয়েছে প্রসব বেদনা গেছে ভুলি,
নবজাতকের মুখ দেখে তার সব ব্যথা গেছে চলি।
কাজলি তার দুখের দিনে সুখ পাখি পেল বুকে,
ছেঁড়া কাপড়ে যতটুকু পারে ঢেকে নেয় শিশুকে।
রাস্তার ধারে জিগায় অনেকে নাকে কাপড় দিয়ে,
কি গো তোমার কি হয়েছে ছেলে নাকি তোর মেয়ে।
মেয়ে হবে কেন ছেলে হয়েছে চাঁদের মতো মুখ,
গর্ভের ধন খুশিতে কাজলির ভরে উঠেছে বুক।


হঠাৎ একদিন মায়ের চিন্তা বাড়িয়ে দিল যত রোগ,
ঠান্ডা কাশি শিশুরোগ যত একসাথে দিয়েছে যোগ।
প্রচন্ড জ্বর বমি তার সাথে পায়খানা কয়েকবার,
বাচ্চাকে বুকে রেখে মায়ে দেখিছে অন্ধকার।


কত কথা আজ মনে পড়ে কোলের শিশুকে নিয়ে,
নবজাতকের হয়নি আজান উলুধ্বনি ফূল দিয়ে।
বাচ্চা কিনতে এসেছিল একজন পাজেরো গাড়িতে চড়ে,
কষ্টের জীবন বেচেনি তবু রেখেছে বুকে ধরে।


পচা নর্দমার যত মশা সব আসিতেছে ঝাকে ঝাকে,
সারারাত চলে মশার কামড় কামড় দেয় শিশুকে।
ড্রেনের পানিতে পড়ে আছে জমানো ডাবের খোসা,
ডেঙ্গু সহ নানান মশা বাঁধিছে সেথা বাসা।
ঢাকার শহর মশার শহর ভন ভন গলিতে,
সিটি মেয়র কামান দাগাইছে পারেনি দমাতে।
নমরুদ মরেছে মশার জ্বালায় খোদা দাবি গেছে চলে,
আরামের ঘুম ঘুম ভেঙ্গে যায় মশা কামড় দিলে।
সারারাত চলে চড় থাপ্পড়ে তবু কি মশা যায়,
চারোদিকে মশার আনাগোনা মশারি যে তার নাই।


দুখিনী মায়ের অন্তর আজ কাঁদে বারে বারে,
বিদ্যুতের তারে ঝুলে আছে মরে নিশির বাদুড়ে।
অশুভ চিন্তা জেগে জেগে ওঠে বুকের ব্যাথাতে,
সাত আসমান আজ ভেঙ্গে পড়লো মায়ের মাথাতে।
কোলের শিশু বুক ছেড়ে আজ গেল যে তার মরে,
চোখের জলে বিদায় দিল সে আসিল না আর ফিরে।
শিশু যে তার রাজপুত্র চাঁদের মতন মুখ,
বারে বারে মা'র মনে পড়ে আঁখি নীরে ভাসে বুক।
কলিজা ছিঁড়ে যায় যে মায়ের কাঁদিছে নাড়ির টানে,
প্রকৃতি আজ করুণ সুরে গেয়ে যায় আপন মনে।


ঘুমেরো পাখি ঘুমে গেছে আর নাহি পোহায় রাত।
চোখের জলে মা বসে আছে জাগে যে সারারাত।।


বৃষ্টির তালে ঝড়ো হাওয়া বয় উড়ে যায় পাখি,
অন্তর পুড়ে যায় দুখের জ্বালায় ঝরে মোর আঁখি।
আকাশে ডাকে গুড়-গুড় আওয়াজে পড়ে বজ্রপাত,
বুকের মানিক হায় কোল ছেড়ে যায় করুণো প্রভাত।
ঘুমেরো পাখি ঘুমে গেছে আর নাহি পোহায় রাত।
চোখের জলে মা বসে আছে জাগে যে সারারাত।।


শূন্য খাঁচা পড়ে আছে পাখি গেল কই,
কলিজা জ্বলে যায় বিরহ জ্বালায় কেমনে করে সই।
শিয়রে বসে কাঁদে মায়ে মাথায় দিয়ে হাত,
কে নিল আমার প্রিয়কে কেড়ে দিলো না হায়াত।
ঘুমেরো পাখি ঘুমে গেছে আর নাহি পোহায় রাত।
চোখের জলে মা বসে আছে জাগে যে সারারাত।।


টাকা পয়সা নাই দুখিনী মায়ের সাহায্য করবে কে,
ভাঙ্গা থালি ভগ্নহৃদয় সাহায্য কর আমাকে।
সাদা কাপড় দে কলজা টুকরা সাজবে মনে সাধ,
মায়ের বুকে হায় খালি সিংহাসন রাজার খালি হাত।
ঘুমেরো পাখি ঘুমে গেছে আর নাহি পোহায় রাত।
চোখের জলে মা বসে আছে জাগে যে সারারাত।।


মায়ের ক্রন্দন থেকে থেকে ওঠে হৃদয়ের আহাজারি,
দুই হাতে বুক থাপড়ায় কাজলি মাটিতে করে গড়াগড়ি।
পুত্র শোকে কাঁদে বারে বার আকাশ-বাতাস ভারী,
ক্ষুধার পেটে ঝাপসা দেখে পুত্র গেছে তার মরি।
চিৎকার করে আকাশের দিকে পুত্র নাই তার ক্রোড়ে,
দুহাতে যা পায় তাই দিয়ে সে এদিক সেদিক ছুড়ে।
ক্রিকেটের বল কোথা থেকে এসে ভাংলো গাড়ির গ্লাস,
জানালা খুলে গাড়ির মালিক দেখে একি সর্বনাশ।
রক্তচক্ষু গাড়ির মালিক বলছে দেখে কাজলিরে,
কত গাড়ি ভাঙ্গোস হারামজাদি ঢিল মেরে তুই ছুড়ে।
পথের ধারে বেগানা মাগি তুই সবারে জ্বালাস,
কত বিগাড় তোর পাছার মাঝে ভাংলি গাড়ির গ্লাস?
চুলের ঝুটি ধরে কাজলির পিটায় গাড়ির মালিক,
কিল-ঘুষি দেয় অনাহারী পেটে হৃদয় পাশবিক।
গালি মুখে মালিক লাথি মারে ছেঁড়া কাপড়ে দেয় থাবা,
কেঁদে কয় কাজুলি গাড়িতে আমি ঢিল মারি নাই বাবা।
ঢিল তবে রে স্বর্গ থেকে আসলো কেমন করে ?
দাঁত খিঁচিয়ে নরম গালে চড় মারে খুব জোরে।
চোখের জলে দু পা ধরে তোতলা মুখে কয়,
আর মেরো না আমায় বাবা প্রাণটা চলে যায়।


দুধের শিশু মরে গেছে মাই ফোলা তার বুক,
লোলুপ দৃষ্টি আড়চোখে চায় শয়তানি কামুক।
নারীর দেহ কি অপরূপ পুরুষের মন কাড়ে,
মরা নদী ভরা জোয়ার মন উচাটন করে।
গ্লাস ভাঙছিস দাম দিবি না চল নিয়ে যাই তুলে,
ভাবখানা তোর সতী-সাধ্বী সবারে খাস গিলে।
শোকের জীবন বিপদ যে তার কেঁপে ওঠে ডরে,
রাস্তার লোকে দেখল সবে সকলি গেল সরে।
শহর জীবন এমন জীবন বিপদে নাহি আসে,
কাজলিকে সে ধাক্কা মেরে গাড়িতে নিয়ে বসে।


সাহায্যের মালিক কোথায় তুমি রক্ষা কর আমায় ,
পুত্রের শোক ইজ্জতের লড়াই দুর্বল দেহ কয়।
কে আছো বাচাও মোরে বাঁচানের মালিক কোথায়,
হরিণীর গায় বাঘের থাবা ছিঁড়ে ছিঁড়ে মোরে খায়।
মনের খায়েশ মিটিয়ে মালিক কাজলিকে দেয় ফেলে,
ভাসমান জীবন থুথু প্রতিবাদ প্রতিবাদ চোখের জলে।


ফুটপাতে লোকজন ব্যস্ত শহরে করছে হাঁটা-হাঁটি,
হাঁটার পথে কাজলিকে দেখে অঙ্গে ধুলোমাটি।
কতজন যে হাঁটার ছলে কাজলিকে দেখে চেয়ে,
এত সুন্দর গড়ন তাহার পথের খাবার খেয়ে।
ইট-পাথরের রাস্তার ধারে পড়ে আছে কাজলি একা,
লোকজন দেখে বলাবলি করে ভাসমান গণিকা।
অভাগীরে ভর্ৎসনা দেয় কেউ নেয় না তারে তুলে,
পুরুষের কামড় দেহের ভাঁজে ফুটিছে দুটি গালে।


গায়ের জোরে ক্ষমতার বলে কর যদি কেউ ক্ষতি,
বিধির বিচার একাই করে ছাড় দেয় না এক রতি।
উল্টোপথে গাড়ির মালিক জোরছে চলে শেষে,
বাহাদুরি মন ক্ষমতার জোর নিমিষে যায় পিষে।
ব্রেক ফেল হয় গাড়ি তার ডিভাইডার লেনে আঘাত,
গাড়িখানা তার দুমড়ে-মুচড়ে যায় ছিন্ন হয় দুটি হাত।
অহংকারী জীবন দুশমনি মন জুলুমকারী অভিশাপ,
মানুষের মাঝে অমানুষ সে ঘিরে নেয় তারে পাপ।
জগৎ বিধাতা জুলুম দেখে থাকেন না তিনি বসে,
জুলুমকারীকে পঙ্গু করে দেয় তিলে তিলে নেয় খসে।
অত্যাচারী শক্তি তোমার যায় যদি গো বেড়ে,
মহাশক্তির গজব তোমার পড়বে মাথার পরে।


অচেতন দেহ কখন যে তার রাত হয়েছে গভীর,
আকাশে চাঁদ আবছা আলো মেঘ করেছে ভিড়।
শুনশান্ নগর আঁধার রাত পড়ে আছে কাজলি পথে,
তন্দ্রা চোখ ব্যথা শরীরে ক্ষুধা পেট তার সাথে।
মায়া কন্ঠে কে যেন ডাকে ওঠ কাজলি ওঠ,
কে করেছে এমন হাল তোর কে দিয়েছে চোট।
মাথা ঝিমঝিম মনের ভ্রম কানে যেটুকু শোনে,
কে ডাকে মোরে এমন করে কে আজ আমার সনে।
একি তার কাছে কেটে গেল তার ত্রিনয়নের ঘোর,
কালো বিড়ালে শরীর ঘেঁষে লেজের পরশে আদর
কোথা থেকে যে কালো বিড়ালটি মাঝেমধ্যে আসে,
শুয়ে থাকে তার তনু ঘেঁষে শুয়ে থাকে তার পাশে।
রাতের আঁধারে পাখা ঝাপটায় হুতুম পেঁচা গাছে,
ভয়ে কাঁদে ইঁদুরের দল বিড়ালে ওত পেতে আছে।


দিনের পর দিন চলে যায় মাসের-পর-মাস,
কাজলি থাকে খোলা আকাশে খোলা বাতাসে বাস।
দুখিনির জীবন দুখে ভরা মন হৃদয়ের গভীরে,
রাস্তার স্মৃতি রাস্তায় থাকে নেয় না আপন করে,
পথের ধারে দেহ লেনদেন নিত্যদিন সে দেখে,
ভোগের দাম কষাকষি হয় যৌবনের  আড়চোখে।
চোখ ইশারায় টাকার বিনিময় যায় চুপি অভিসারে ,
কেউ নিয়ে যায় সিএনজি রিকশায় কেউবা প্রাইভেটকারে।
টাকার বিনিময় চলে আসা যাওয়া জীবনের প্রয়োজনে,
সারারাত চলে দেনা পাওনা তৃপ্তির আলিঙ্গনে।
কত নারী পুরুষ এদিক-সেদিক ঘোরে রাতের বেলা,
মনে বাসনা মনে কামনা মিটায় দেহের জালা।
ঘরে খাবার রেখে অনেকে বাহিরের খাবার খায়,
রুচি তাদের মনের আঙ্গিনায় গুণীজনকে দেখা যায়।
কেউবা নবীন কেউবা প্রবীণ কেউবা দাঁড়ি মুখে,
কেউবা আসে বোরকা পরে কেউবা উদম মুখে।
জাত বেজাতে একই ঘাটে একই তরী বায়,
একই ঘাটে মোল্লা-পুরুত ব্রাহ্মণকে দেখা যায়।
যৌবনের ক্ষুধা মেটায় চুপে ধর্মের বাণী কানে,
উম্মাদ দেহ মত্ত মন ঢুলে পড়ে সংগোপনে।
উঁচু-নিচু নাই ভেদাভেদ জাত কাহারে বলে,
মূর্খ-জ্ঞানী গরিব-ধনী মান ডোবে এক জলে।
টাকার জন্য ইজ্জত হারায় ইজ্জত হারায় দুখে,
কেউবা ইজ্জত বিলিয়ে দেয় ভোগ-বিলাসের সুখে।


কাজলি ভাবে মনে মনে শুধায় তারে নিজে,
অসহায়ের মধ্যে অসহায় আমি যাইনি অসৎ কাজে।
নিজের ইচ্ছায় সঁপি নাই দেহ থাকি রাস্তায় পড়ে ,
যেটুকু হয়েছে আমার সাথে হয়েছে জোর করে।
চোখের পাতায় অশ্রুকণা ঝরে ঝরে তার পড়ে ,
না বলা কথা না বলা ভাষা কেউ বুঝেনি তারে।


ভূলোকে আসা মানে কি আমার জীবনটা এমন হবে,
দুখের জীবন সুখ পেলাম না সুখ পাবো আর কবে।
সুখের দুয়ার বন্ধ আমার দুখের দুয়ার খোলা,
বিধির লেখা একি আমার সুখের দুয়ারে তালা।


জন্ম থেকে আজ অবধি হয়েছে যত খেয়াল,
মনে পড়ে শুধু রাস্তায় জীবন কেটেছে এতোকাল।
আর কতকাল থাকব আমি কষ্টের জীবন নিয়ে,
তুমি বিধাতা একটুখানি দেখো আমায় চেয়ে।
ঝড়-বৃষ্টি রোদের তাপে পাই না কোথাও আশ্রয়,
পুনর্বাসন জীবন তুমি গড়তে পারো নিশ্চয়।
কোথায় তোমার দীন দানবীর কোথায় তোমার বর,
থাকার মত একটু আশ্রয় দাও গো আমায় ঘর।


কয়েদির জীবন জেলখানাতেও সুখের দেখা পায়,
খোলা আকাশে জীবন আমার ধুকেধুকে চলে যায়।
ভুলিনাই প্রভু তোমার নিয়ামত করি নাই মন ক্ষুণ্ণ ,
যেটুকু দিয়েছো তোমার নিয়ামত তাতেই আমি ধন্য।
ঘুম দিয়েছো স্বপ্ন দিয়েছো জীবন দিয়েছো দুখে,
ভাসমান জীবন সীমাহীন কষ্ট ডাস্টবিনের খাবার মুখে।
কত বসন্ত চলে গেছে হায় ঝরে গেছে কত ফুল,
অচিন ঠিকানা জীবন চলা জানিনা কোন কুল।


কাজলি ঘুমে স্বপ্ন দেখে কোলের মানিক তারে ডাকে,
দূর অজানা কোথা থেকে যেন ডাকে বাছাধন মাকে।
চিৎকার করে ওঠে কাজলি ঘুম ভেঙ্গে যায় তার।
আয় বাছাধন মায়ের কাছে দেখি তোরে বারবার।
কতকাল যে দেখিনা তোরে দুই নয়নে ভাসি,
তোরে ছাড়া যে দুখিনী মায়ের দুঃখ রাশি রাশি।
পুত্র শোকে মন কাঁদে সারাক্ষণ কেড়ে নিয়েছে যমে,
বিলাপের সুরে কাঁদে কাজলি কেঁদে কেঁদে যায় ঘুমে।
প্রভাতের রবি অস্ত যায় নিশিতে ওঠে শশী,
দিনের পর রাত চলে যায় জীবনের কান্না হাসি।
খেলার সাথী জোটেনি কাজলির জীবন চলার পথে,
জুটিছে ললাটে বঞ্চনা আর অঙ্গভঙ্গি তার সাথে।
ধূলি ভরা ভূবন ভরা যৌবন নারীর স্বাদ পেতে,
এসেছে শুধু পুরুষ খদ্দর যৌবনের স্বাদ নিতে।


কত দিন হয় কাজলিকে দেখা যায় না রাস্তায়,
ফুটপাতে আর শহর মাঝে কাজুলির দেখা নাই।
যেটুকু জানা যায় কাজলির পুত্র আসিত স্বপনে কোলে,
মরার আগে কেঁদেছিলো খুব বাছাধন বাছাধন বলে।
রাজপুত্র বলে ডাকিত সারাক্ষণ রাজপুত্র কই আমার,
রাস্তার লোকেরে  জিগাইত কাজলি জিগাইত শতবার।


কি যেন রোগে নাদুসনুদুস দেহ হয়েছিল কঙ্কালসার,
পিত্ত উদর অনাহারী জীবন জুটিত কষ্টে আহার।
ডাস্টবিনের খাবার খেতো কাজলি ক্ষুধার পেটটি ভরে,
খাবার চাইতে গেলে কাজলি কেউ আসতো তেড়ে।
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকত একটু খাবারের আশায়,
আকাশের দিকে বিড়বিড় করে কি যেন কথা কয়।
স্বার্থ ছাড়া এই পৃথিবীত দেয় না এক মুঠ ভাত,
ক্ষুধার জ্বালা বিষণ্ণ বদন কেটেছে দিবারাত।


ধীরে ধীরে তার জীবন প্রদীপ তেল ফুরায়ে যায়,
মরণে পানি খেতে চেয়েছিল পানি দেবার কেউ নাই।
দুখের ডালা সঙ্গে নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢুলে,
অকালে মরণ ষোড়শী জীবন প্রাণবায়ু গেল চলে।
দুখের সাগর পাড়ি দিয়ে সে গিয়েছে পুত্রের পাশে,
কেউ বলছে কাজলি এখন না ফেরা ওই দেশে।
কেউ বলছে বেওয়ারিশ লাশ মরেছে কষ্টে ভূগে ,
কেউ বলছে কাজলি মরেছে কঠিন এক রোগে।


কত লোকজন কত কথা কয় কাজলিকে তারা নিয়ে,
অসহায় জীবন হয়েছে মরণ মরেছে না খেয়ে।
চোখের জল ফেলেনি কেউ কাজলির মরণে,
চোখের জল ফেলবে কেন কয়জনে তারে চেনে।


দুখের তরী সাঙ্গ করে গিয়েছে কাজলি মরে,
পরিচয় নাই বেওয়ারিশ লাশ রাস্তায় ছিল পড়ে।
শুধু পরিচয় বেওয়ারিশ লাশ জানা নাই তার কুল,
কাজলির লাশ নিয়েছে কাঁধে আঞ্জুমান মফিদুল।