পাঁচ বছরের শিশুর ক্রন্দনে, প্রকম্পিত বাড়ি;
        গত দু'দিন উনুনে, উঠেনি হাঁড়ি।
    অসহায় পিতা, চোখের জলে ভাসায় বুক;
অক্ষমের আর্তি, সন্তানেরে কেমনে দেখাবে মুখ।
     অনেকের কাছে চেয়েছিল, কিছু চাল ধার;
       ভাগ্যে জোটেনি কিছুই, শুধুই তিরস্কার।
  অনন্যোপায় পিতা, চুরির সিদ্ধান্ত নেয় অবশেষে।
  পাশের বাড়িতে সিঁধ কেটে, ঢোকে চোরের বেশে।

   অভিজ্ঞতা নেই, চাল নিতে গিয়ে ধরা পরে তাই;
    এলোপাতাড়ি কিল চড়ে, প্রাণ করে যাই যাই।
           গ্রামের সব লোক এসে জড় হয়;
           যে চায়, দু'চারটা করে মার দেয়।
    খবর পেয়ে স্ত্রী কন্যা এসে, সবার পায়ে পরে।
কন্যা কেঁদে কয়, 'যাব মরে, কাঁদবনা খাবার তরে।
       পায়ে পরি সবার, বাপেরে মোর ছেড়ে দেন'।
  ক্রন্দনে কাঁপে খোদার আরশ, টলেনা নেতার মন।

  সিঁদ কাঁটা চোর, ফের করবে চুরি, যদি দাও ছাড়ি;
       তাই পুলিশের কাছে দেয়, পড়িয়ে হাতকড়ি;
                ছোট পুলিশ কানে কানে কয়;
      পাঁচ হাজার টাকা দাও, মারের থাকবেনা ভয়।
               কেস সাজিয়ে দিব, এমন ভাবে;
                  কালই তোমার জামিন হবে।
         চোর মিনতি করে, পাঁচ বছরের কন্যা তার;
      একটি দানাও পড়েনি পেটে, তিনদিন অনাহার।

'মেয়েটারে বাঁচান মোর; এতটুকু খেতে দেন তারে;
       বাধা নাই, পাঠিয়ে দেন মোরে, লাশঘরে'।
          কথা শুনেই পুলিশ গেল মহাক্ষেপে;
         প্রচণ্ড জোরে মারিল লাথি, পাছা মেপে।
  বুঝিল চোর, এদের কাছে টাকা ভিন্ন হবেনা কাজ;
       নিজেকে ভাগ্যের হাতে শপে দেয়, আজ।
      ভাবে চোর, মানুষ কেমনে দিবে তারে সুখ!
   অন্নদাতা খোদাই যেখানে আজ, হয়েছেন বিমুখ।

  সর্বাঙ্গ জ্বলছে ব্যথায়, এলোপাতাড়ি মারের চোটে;
      ক্ষুধায় জ্বলছে হাবিয়া দোজখ, তার পেটে।
  ভাবে চোর, পুলিশ পয়সা চায়; তা অপরাধ নয়?
    খাদ্য তো অধিকার, তা নিলে সাজা কেন তয়!
           অবৈধ উপার্জনে যারা কোটিপতি;
              তারাইতো আজ সমাজপতি।
লক্ষ কোটি টাকা বিদেশ পাচার করে, নমস্য তারা;
ক্ষুধা নিবারণ তরে খাদ্য চোর, জেলে যায় মারা।
             তারিখঃ ২৯-১১-২২ ইং;