কবিতা কেন গদ্য নয়?
গদ্য কেন কবিতা নয়?
তাহলে গদ্য-কবিতা কি?
গদ্যছন্দ কি?


কবিতা কেন গদ্য নয়?  কবিতা লিখতে গেলে ছন্দ, মাত্রা, তাল, লয়, অন্ত্যমিলের প্রয়োজন হয়, কিন্তু গদ্য লিখতে গেলে এসবের প্রয়োজন হয় না, তাই কবিতা কখনো গদ্য হয় না ৷


গদ্য কেন কবিতা নয়? গদ্য কোন ছন্দ, মাত্রা, তাল, লয়, অন্ত্যমিল ঠিক রেখে লেখা হয় না, সে ধারাবাহিক ভাবে একটানা অবিরাম পানির স্রোতের মতো বিন্যাস হয়ে যায়, তাই গদ্য কোন কবিতা হয় না ৷


এভাবে আরও অনেকগুলো কারণ আছে, যেমন গদ্য রচনার ক্ষেত্রে ভাষা প্রয়োগের ব্যাপারে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, যেমন সাধু-চলিত ভাষার মিশ্রণ ঘটানো যায় না, তৎসম, তদ্ভব, দেশী-বিদেশি শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে হিসাব নিকাশ করে উপযুক্ত শব্দ চয়ন করে ব্যবহার করতে হয়,  যেমন হস্তী/ হাতি দুটি শব্দের অর্থ এক কিন্তু গদ্য রচনার ক্ষেত্রে দুটি শব্দ এক গদ্যের মাঝে ব্যবহার করা ঠিক হবে না, কারণ হস্তী শব্দটি সংস্কৃত থেকে সাধু-রীতিতে এসেছে, আর হাতি শব্দটি চলিত-রীতিতে এসেছে,  কিন্তু কবিতার ক্ষেত্রে এ দুটি শব্দ এক কবিতাতে ব্যবহার করা যাবে, কবিতার ক্ষেত্রে সাধু-চলিত ভাষার মিশ্রণ ঘটানো যাবে, দেশী-বিদেশ তৎসম, তদ্ভব, সংস্কৃতি ভাষা ব্যবহার করা যাবে ৷


গদ্য রচনার ক্ষেত্রে গদ্যের ভাষাগুলো বাস্তব প্রেক্ষাপট থেকে নিতে হবে, কিন্তু কবিতার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম করা যাবে, কবিতাতে কখনো কখনো কল্পনা থেকে ভাষা শব্দ চয়ন করে কবিতা লেখা যাবে, বাস্তবের সাথে  মিল না-হলেও কবিতা হয়ে যাবে যদি ছন্দ, মাত্রা, তাল, লয়, অন্ত্যমিল ঠিক থাকে, কিন্তু গদ্য রচনার ক্ষেত্রে  মনের নানান কল্পনা জল্পনা থেকে উদ্ধৃত শব্দগুলো দিয়ে গদ্য রচনা করা যাবে না, এর জন্য উপযুক্ত তথ্য থাকার প্রয়োজন আছে, বাস্তবের সাথে মিল থাকার প্রয়োজন আছে, এমনকি  ব্যাকরণের নিয়মের সাথেও মিল থাকার প্রয়োজন আছে, কিন্তু কবিতার ক্ষেত্রে ব্যাকরণের নিয়ম অনুসরণ না করলেও চলবে ৷


গদ্য রচনা মানুষের মন মস্তিষ্ক চিন্তা চেতনার পথ উন্মুক্ত করে, তথ্য-প্রযুক্তির পথ বৃদ্ধি করে, মানুষকে নূতন কিছু সঞ্চয় করার শক্তি সাহস যুগিয়ে তুলে, কিন্তু কবিতা মানুষকে সুর-ছন্দের সম্ভারে, আনন্দ-বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করে, তবে কবিতা যে মানুষকে ভাবনার শক্তি, জ্ঞান, অন্বেষণ করার শক্তি যুগিয়ে তুলে না, তা-কিন্তু নয়, অনেক কবিতা পাঠকের ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করে তুলে, অনেক কবিতা জালিমের অন্তরকে ভীতু করে তুলে, তাই কবিতারও ক্ষমতা ব্যাপক আছে, সে কথা ভুলে গেলে চলবে না, তবে তথ্য প্রযুক্তি ও জ্ঞান শিক্ষার বিস্তার করার জন্য শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো গদ্য-রচনা,  গদ্য যা করতে পারে কবিতা তা করতে পারে না, কবিতা যা করতে পারে গদ্য তা করতে পারে না, দুটোর ক্ষমতা ব্যাপক, কবিতা তার দিক দিয়ে সিংহরাজ, তেমনি গদ্য তার দিক দিয়ে সিংহরাজ, কাউকে ছোট করার কোন অবকাশ নেই, তাই কবিতা কখনো গদ্য হয় না, গদ্য কখনো কবিতা হয় না ৷


তাহলে অনেকে বলে গদ্য-কবিতা বা গদ্যছন্দ এটি কি? গদ্য-কবিতা বলতে কিছু নেই, কবিতা সে কবিতাই তবে কবিতার কিছু নাম আছে, সে নাম অনুযায়ী কিছু নিয়ম আছে, কিছু কাঠামো আছে, কিছু ছন্দ আছে, যেমন অক্ষরবৃত্ত ছন্দের কবিতা, তার মাত্রার কাঠামো হলো, ৬+৮/ ৮+৬/ অথবা ১০+৮/ ৮+১০/ অথবা ১২+১০/ ১০+১২/ অথবা ৮+১০+৮/ অথবা ৮+৮+৪+৮ /  মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতা তার মাত্রার কাঠামো হলো, ৪+৪+৪+২ অথবা ৫+৫+৫+৩/ অথবা ৬+৬+৬+৪/ অথবা ৭+৭+৭+৫/  তবে শেষের অপূর্ণ পর্বগুলোতে নিজের মতো কমবেশি করে নিতে পারবে ৷ স্বরবৃত্ত ছন্দের কবিতা তার মাত্রার কাঠামো হলো, ৪+৪+৪+৪ অথবা ৪+৪+৪+১ অথবা ৪+৪+৪+২ অথবা ৪+৪+৪+৩  ৷


এখন অনেকে একটি প্রশ্ন করতে পারে, আমরা এমন নিয়মে অনেকগুলো কবিতা দেখতে পাই না, সে কবিতাগুলো আসলে কি? এই কবিতাগুলোকে আমাদের সমাজে অনেকে বলে মুক্তক-ছন্দের কবিতা, অনেকে বলে মিশ্র-ছন্দের কবিতা, অনেকে বলে গদ্য-ছন্দের কবিতা, আবার অনেকে বলে গদ্য-কবিতা, আসলে কোনটি সঠিক? এখানে আমার বিশ্লেষণ মতে এগুলো হবে মিশ্র-ছন্দের কবিতা, অথবা মুক্তক-ছন্দের কবিতা, কারণ এ কবিতাগুলোর মাঝে আছে তাল, লয়, সুর, ভাব, ভঙ্গিমা, বিদ্যমান, কিন্তু মাত্রা, ছন্দ, অন্ত্যমিল, অমিল অথবা সমিল অবস্থায় আছে, যেমন কোন পদে বা বাক্যে, অক্ষরবৃত্ত ছন্দের ৬ মাত্রা আছে, পরের বাক্যে বা পদে মাত্রাবৃত্ত ছন্দের ৫ মাত্রা অথবা ৭ মাত্রা আছে, আবার পরবর্তী পদে অক্ষরবৃত্ত ছন্দের ৮ মাত্রা অথবা ১০ মাত্রা অথবা ৪ মাত্রা আছে, এভাবে ছন্দ মিশ্রণের মাধ্যমে কবিতাটি নির্মাণ হয়েছে, আবার অন্য একটি কবিতাতে মাত্রাবৃত্ত ছন্দের প্রথম পদে বা বাক্যে ৭ মাত্রা আছে, তার পরের পদে বা বাক্যে অক্ষরবৃত্ত ছন্দের ৮ মাত্রা অথবা ১০ মাত্রা আছে, আবার পরের কিছু পদে স্বরবৃত্ত ছন্দের ৪ মাত্রা করে আছে,  আবার মাত্রাবৃত্ত ছন্দের  ৫  মাত্রা অথবা ৪ মাত্রা অথবা ৩ মাত্রা আছে, এবং চরণের শেষে কোথাও কোথাও অন্ত্যমিল ঠিক আছে, আবার কোথাও কোথাও অন্ত্যমিল অমিল অবস্থায় আছে,  তাই যে কোন অন্ত্যমিলের হোক না কেন, যে কোন ছন্দে বিন্যাস হোক না কেন, এ কবিতাগুলোর মাঝে কিন্তু তাল, লয়, সুর, ভাব-ভঙ্গিমা বিদ্যমান আছে, এ কবিতাগুলো সোজাসুজি গদ্যের মতো বিন্যাস হয়নি, তাই এ কবিতাগুলোকে মুক্তক-ছন্দ অথবা মিশ্রছন্দ বলা যাবে, এগুলোকে নিছক গদ্য-কবিতা বলা যাবে না ৷


একটি কথা মনে রাখতে হবে কোন কবিতা তাল, লয়, সুর, ছন্দ ছাড়া নির্মাণ হয় না,  প্রত্যেক কবিতার মাঝে তাল, লয়, সুর-ছন্দ বিদ্যমান থাকে, কোথাও কোথাও ছন্দের ঝলকানি থাকে, কোথাও কোথাও অলংকারের ভাব মাধুর্য গাম্ভীর্য পূর্ণ পদ থাকে, কোথাও কোথাও অন্ত্যমিলের অপূর্ব মিলন মেলা থাকে,  যার কারণে সে কবিতাগুলো পড়তে গেলে লেখক এবং পাঠকের মনের মাঝে ভাব তরঙ্গিত হয়ে হৃদয়ে সুর-ছন্দের দোলা সৃষ্টি করে, তাই এই ধরণের কবিতাগুলোকে মুক্তক-ছন্দ অথবা মিশ্রছন্দ বলাই ভালো হবে, এ ধরণের কবিতাগুলোকে নিছক গদ্য-কবিতা বলা যাবে না, আর যদি একান্ত বলতেই হয় তাহলে গদ্য-ছন্দের কবিতা বলা যেতে পারে, কারণ সে কবিতাগুলোর মাঝে ছন্দ, মাত্রা বিদ্যমান আছে ৷ তবে কোনটির মাঝে মিলবদ্ধ ছন্দ আছে, আর কোনটির মাঝে অমিলবদ্ধ ছন্দ আছে ৷


এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারে মিলবদ্ধ ছন্দ কাকে বলে? আর অমিলবদ্ধ ছন্দ কাকে বলে?  যে কবিতাগুলোর মাঝে অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত এই ছন্দগুলোর যে কোন একটি ছন্দের গঠন কাঠামো ঠিক থাকে, তাকে মিলবদ্ধ ছন্দ বলে, আর এর বাহিরে গেলে অমিলবদ্ধ ছন্দ বলে, তাই যে সকল কবিতাগুলো মিলবদ্ধ ছন্দে থাকে না, তাকে মুক্তক-ছন্দ অথবা মিশ্রছন্দ অথবা গদ্যছন্দ বলা যাবে, হয়তো আমার এ কথার সাথে অনেকে একমত নাও হতে পারে, অনেকে মতবিরোধ করতে পারে, তারা আমাকে বলবে পারে, এমন কবিতা মুক্তক-ছন্দ হতে পারেনা, তারা আমাকে হয়তো মুক্তক-ছন্দের নিয়ম কানুন কাঠামো শেখাতে পারে, তারা আমাকে হয়তো বলবে পারে মুক্তক মানে মাত্রার স্বাধীনতা নয়, মুক্তক মানে হলো পর্বের স্বাধীনতা, মূলপর্বে যে মাত্রা থাকে সে নিয়ম অনুসরণ করে কবিতা রচনা করতে  হবে, তবে চরণের মধ্যে বাক্য কমবেশি বসানো যাবে, এটাই হলো মুক্তক কবিতা ৷


আসলে তারা মুক্তক কথাটির অর্থই হয়তো জানে না, মুক্তক মানে কি? মুক্তক মানে হলো:  মুক্তা, বৈকল্পিক, কোন বৈচিত্র নেই,  যার কোন বৈচিত্র নেই, যে বিচিত্রিতা হতে পারে, যে বিভিন্নতা প্রকাশ করতে পারে, যে নানারূপ শোভা সৌরভ ছড়িয়ে দিতে পারে, সে কিভাবে নিদিষ্ট মাত্রায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে? তাই মুক্তক কবিতা মানে হলো, ছন্দ, মাত্রা, তাল, লয়, অন্ত্যমিল, পদ, চরণ, বিন্যাস সব কিছুরই স্বাধীনতা থাকবে, কবি তার মনের মতো করে মুক্তক-কবিতা রচনা করতে পারবে, সেখানে থাকবে না কোন বাধার প্রাচীর, কোন নিদিষ্ট সীমারেখার বন্ধন,  তবে মুক্তক কবিতা দুভাবে লেখা যায়, অমিল মুক্তক কবিতা,  সমিল মুক্তক কবিতা, কেউ মুক্তক কবিতা মিল রেখেও লিখতে পারে, যেমন মুক্তক অক্ষরবৃত্ত,  মুক্তক মাত্রাবৃত্ত, মুক্তক স্বরবৃত্ত, অথবা অন্ত্যমিল ঠিক রেখেও লিখতে পারে,  অথবা কবি তার নিজের মতো করে যে কোন নিয়মে কবিতা লিখতে পারে, মুক্তক কবিতা রচনার ক্ষেত্রে কবির সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আছে, কোন বাধা প্রতিবন্ধকতা নেই, কোন বাধার প্রাচীর নেই ৷


গদ্যছন্দ কি? আমরা কেন কিছু কবিতাকে গদ্যছন্দ বলি?  গদ্যছন্দ আমরা এ কারণে বলি যদিও কবিতাটি গদ্যের মতো লেখা হয়, কিন্তু আমরা যখন সে কবিতাটি পাঠ করি অথবা আবৃত্তি করি, তখন কিন্তু আমরা সোজা গল্পের মতো পাঠ করি না, সোজা পত্রিকার মতো পাঠ করি না, আমরা সে কবিতাটি আবৃত্তি করতে গিয়ে কখনো কখনো বিস্ময়কর ভাব প্রকাশ করি, কখনো কখনো বিদ্রোহী আওয়াজ তুলি, কখনো কখনো বিনয় প্রকাশ করি,  কখনো কখনো প্রশ্ন উত্থাপন করি, আর তা করতে গিয়ে আমাদেরকে প্রতি পদে পদে অথবা নিদিষ্ট কোন পদে থামতে হয়, সে কবিতা আবৃত্তি করার সময় শ্রোতাদের সামনে সুরেলা  করতে হয়, শ্রোতাদের সামনে ভাব-ভঙ্গিমা বিনয়, আবেদন, আহ্বান, বিদ্রোহী ক্ষোভ প্রকাশ করতে হয়, এর কারণে এমন কবিতাকে গদ্যছন্দ বলে, যদিও ছন্দের মিল না থাকে তবুও ছন্দের মতো আবৃত্তি করতে হয়, বাহিরের দৃষ্টি থেকে এমন কবিতার মাঝে ছন্দ পাওয়া না গেলেও, আবৃত্তি করতে গিয়ে পাঠক অথবা গায়ক অথবা লেখক ছন্দের অস্তিত্ব ঠিকে খুঁজে পায়, আর একটি বিষয় অবশ্যই সবাইকে মেনে নিতে হবে, আপনারা যদি এমন কবিতার মাঝে ছন্দ বিশ্লেষণ করতে যান, তাহলে দেখবেন এমন কবিতার মাঝে মিশ্রছন্দ অবশ্যই বিদ্যমান আছে, আমরা যে কোন কবিতা লেখি না কেন, সব কবিতার মাঝে কোন না কোন ছন্দ আছে, হয়তো কোন কবিতার মাঝে নিদিষ্ট ছন্দ আছে, আর কোন কবিতার মাঝে মিশ্রছন্দ আছে ৷


এখন অনেকে বলতে পারে গদ্য-কবিতা তাহলে কোনগুলো? পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে, অবশ্যই বলতে হবে, গদ্য কবিতা বলতে কোন কিছুই নেই, যে কবিতাগুলোকে আমরা গদ্য কবিতা বলি, সে কবিতাগুলোকে গদ্য-ছন্দের কবিতা বলতে হবে, যার ব্যাখ্যা আমি উপরে দিয়েছি, তারপরেও কেউ যদি মেনে নিতে না চায়, তারা যদি জোর প্রয়োগ করে, তারা যদি পূর্বেকার কবি সাহিত্যিকদের রচনা থেকে উদ্ধৃতি পেশ করে, এমনকি তারা যদি বলে আগের কবি সাহিত্যিকগণকি এর উপর কোন গবেষণা করে নাই? তারা কি গবেষণা না করেই গদ্য কবিতার নাম দিয়েছে?  তাহলে আমি শুধু তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, সীমানার শেষ প্রান্তে গিয়ে,  গদ্য কবিতা শুধু সেইসব কবিতাগুলোকে বলা যাবে, যে কবিতাগুলো গল্পের মতো করে লেখা হবে, এবং সে কবিতাগুলোর আবৃত্তি গল্পের মতো করে পাঠ করা হবে, পত্রিকার মতো করে পাঠ করা হবে, যেমন কেউ গল্প পাঠ করতে গিয়ে অথবা পত্রিকা পড়তে গিয়ে সহসা কোথাও থামে না বিরামহীন ভাবে চলে, কেউ শ্রোতাদের সামনে সুরেলা ভাবে পাঠ করে না, ভাব-ভঙ্গিমা বিনয়, আবেদন, আহ্বান, বিদ্রোহী ক্ষোভ কোন কিছুই প্রকাশ করে না, তাকেই শুধু গদ্য কবিতা বলা যেতে পারে,  আর এর ব্যতিক্রম হলে তা হবে গদ্য-ছন্দের কবিতা অথবা মিশ্র-ছন্দের কবিতা অথবা মুক্তক-ছন্দের কবিতা ৷


আমার এ আলোচনাটি পড়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন উঠতে পারে, বিশেষ করে যারা গদ্য কবিতার পক্ষপাতী, যারা ছন্দ, মাত্রা-বিহীন  অন্ত্যমিল-বিহীন আধুনিক কবিতার পক্ষপাতী, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে নিচের অংশটুকু লেখা ৷


প্রিয় কবি সাহিত্যিকগণ, আমিও আধুনিক কবিতা লেখার পক্ষপাতী, আমি নিজেও নিদিষ্ট ছন্দে কবিতা লেখা পছন্দ করি না, এবং তা লেখি না, হয়তো আমার কিছু কবিতা আছে নিদিষ্ট ছন্দে লেখা, আর বাকী সবগুলো আছে মুক্তকছন্দ, অথবা মিশ্রছন্দ, অথবা গদ্যছন্দ,  তবে বিষয় হচ্ছে আধুনিক কবিতা কি গদ্য-কবিতা? এটা আমার প্রশ্ন ৷  আধুনিক কবিতা যদি গদ্য কবিতা হয়, তা মেনে নিলাম কিছু সময়ের জন্য তর্কের খাতিরে, তবে সে আধুনিক কবিতার আবৃত্তি কেমন হবে? সে আধুনিক কবিতা আবৃত্তি কি বইয়ের পড়ার মতো ঢালাও ভাবে হবে? অথবা সংবাদ পত্রের মতো একটানা পড়ে যাবে? যদি সে আধুনিক কবিতার আবৃত্তি এমন ভাবে হয়, তাহলে সে আধুনিক কবিতা গদ্য-কবিতা হবে, আর যদি সে আধুনিক কবিতার আবৃত্তি অন্যগুলোর মতো আবৃত্তি হয়, অথবা ছন্দযুক্ত কবিতার মতো আবৃত্তি হয়, অথবা মুক্তক-ছন্দ অথবা মিশ্রছন্দ অথবা গদ্যছন্দের কবিতার মতো আবৃত্তি হয়, যদি আবৃত্তিকারক সে কবিতা আবৃত্তি করতে গিয়ে সুর-ছন্দের ভাব নিয়ে আসে, কবিতার বাস্তব উপলব্ধি ফুটিয়ে তোলার জন্য রং, টং ভাব-ভঙ্গিমা অনুনয়-বিনয়, আহ্বান-আবেদন, বিদ্রোহী-বিপ্লবী আওয়াজ উচ্চারিত করে তুলে, তাহলে সে কবিতা অবশ্যই মিশ্রছন্দের কবিতা, অথবা মুক্তক-ছন্দের কবিতা, অথবা গদ্য-ছন্দের কবিতা, এটা নিছক গদ্য কবিতা নয়, গদ্য কবিতা বলতে কিছু নেই, তবে গদ্য-ছন্দের কবিতা বলা যাবে, মুক্তক ছন্দের কবিতা বলা যাবে, মিশ্রছন্দের কবিতা বলা যাবে, তাই আমরা যারা আধুনিক কবিতা রচনা করি, তারা এ কবিতাগুলোকে গদ্যছন্দের কবিতা বলবো, অথবা মুক্তক-ছন্দের  কবিতা বলবো, অথবা মিশ্রছন্দের কবিতা বলবো, তাহলে আর আমাদের মাঝে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবেনা, আর কোন মতানৈক্য থাকবেনা, আশা করি সবাই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন ৷