যাদুঘরের অভ্যন্তরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ দিয়ে আমার দ্বিতীয়বার আসা । অনেক বছর আগে একবার এসেছিলাম নজরুল গবেষক এবং কবি তালিম হোসেন এর উপর আলোচনা এবং বিষুদ্ধ নজরুল সংগীত শুনতে । তখন উপস্থিত ছিলেন মরহুম কবির স্ত্রী সু-সাহিত্যিক, গল্পকার মাফরুহা চৌধুরী, মেয়ে উপমহাদেশের প্রখ্যাত নজরুল সংগীত শিল্পী শবনম মোস্তারীসহ আরো অনেকে ।


তখন ইন্টারনেট বা অনলাইন বলে যে কিছু আছে তা জানতাম না । অথচ আজ অনলাইন কবি হিসেবে এখানে আমি আমন্ত্রিত হয়েছি বাংলা কবিতা ডট কমের পক্ষ্য থেকে । সাইটে যদিও আমাদেরকে সৌখিন কবি বলা হয় তবু এই যে সম্মেলন, এতগুলো কবির অংশগ্রহন - তার জন্য সাইটের অভিভাবক, এডমিন মোঃ আশফাকুর রহমান পল্লব সাহেব ধন্যবাদ পেতেই পারেন ।


তবে ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বাংলা কবিতা ডট কমের পক্ষ্য থেকে এই যে আয়োজন, সেটা কতটুকু স্বার্থক হয়েছে তা উপস্থিত কবি, বিশ্লেষকগণই ভাল বলতে পারবেন । আমি শুধু কয়েকটি অসংগতি এখানে তুলে ধরব যেটা আমার দৃষ্টিকটু লেগেছে ।


প্রথমতঃ এটাকে কবি সম্মিলন বলা হলেও উপস্থিত কবিদের কাউকে মঞ্চে ডেকে পরিচয় করানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়নি । অর্থাৎ সম্মেলনের আগে আমরা যেভাবে একে অপরকে চিনতাম, এখনো তাই । এখানে সময় স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে কোন লাভ নেই ।


দ্বিতীয়তঃ কবিতায়'ই যেখানে মুখ্য বিষয় সেখানে উপস্থিত কবিদের মধ্য থেকে কেউ কেউ তাদের স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনাবে - এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু দেখা গেল আগ্রহী কবিরা তাদের নামের তালিকা দিলেও আসরের একজন প্রাচীন কবি সেখান থেকে বেছে বেছে তার পছন্দের কবিদের ডেকে ডেকে কবিতা পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন এবং এর ৯০ ভাগই মহিলা কবি । এক মহিলা কবিকে দিয়ে তো দু'বার কবিতা পড়ানো হলো এবং আরেকজন বহিরাগত মেয়েকে এনে প্রায় ১০ মিনিট ধরে কবিতা আবৃত্তি করানো হলো; যখন হলের বরাদ্দকৃত সময় প্রায় শেষ । অনেকেই তখন বিরক্তির চরম সীমায় ।


যাইহোক, বেরুনোর সময় দেখলাম প্রাচীন সেই কবি তার নিকট পরিচিতদের মধ্যে অতিরিক্ত গিফটব্যাগ থেকে কিছু বিলি-বন্টন করছে । ভাবলাম এটাও হয়ত তার দায়িত্ব, তা না হলে উনার মধ্য থেকে এত ছন্দমুখর জাদরেল কবিতা বের হবে কি করে ।


অবশেষে বের হয়ে আসলাম আমরা পাঁচজন কবি । এদের মধ্যে প্রনব দার খেতাবপ্রাপ্ত বোদ্ধা কবি জসীম উদ্দীন মুহম্মদ, যাকে আমি কবিতার গুরু হিসেবে মানি । বেশ কয়েক বছর পর আবার দেখা হলো সমৃদ্ধ কবি সরকার মুনীর এর সাথে, যিনি একজন শুধু কবি হিসেবেই নয় আদর্শ মানুষ হিসেবে সত্যিই অনুকরনীয় । প্রথম বারের মত দেখা হলো কবি মোজাহারুল ইসলাম চপল এবং দ্বিতীয় বারের মত দেখা হলো কবি আলমগীর সরকার লিটন এর সাথে  । তারপর সকলে মিলে ঘুরতে বেরুলাম বই মেলায় ।


গত ১০ তারিখের মত আজও বেশ কিছু বই কিনলাম । প্রথমে কিনলাম আসরের কবি জসীম উদ্দীন মুহম্মদ এর ভালোবাসার নির্বাচিত কবিতা এবং পরে লিটল ম্যাগ চত্ত্বর থেকে কিনলাম অখণ্ড বাংলার দ্বিতীয় দশকের কবিতাসহ আরো কিছু কবিতার বই ।


ঠিকানা যেহেতু ধামরাই, তাই একটু আগে রওনা দেওয়াই ভাল । এদিকে সন্ধ্যা আসন্ন । শেষ পর্যন্ত সাথে রইলেন কবি সরকার মুনীর । দীর্ঘক্ষণ নীলক্ষেতে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি । কথায় কথায় কখনো বা পৌছে যাচ্ছি জীবনের গভীরে । বাস এলো । প্রচন্ড ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে মনে পড়ল অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন কবি বন্ধু আমাকে খুঁজে খুঁজে বের করে আমার কবিতা তাদের ভাল লাগার কথা জানিয়েছিল । তার মানে আমি কি সত্যি সত্যিই একটু একটু করে কবি হয়ে উঠছি ? নাকি শুধু শুধুই সময়ের অপচয় করে যাচ্ছি ?