শাহবাগ হতে বাংলা একাডেমি গমনের পথে
আচানক দেখা মিলে এক সহপাঠী বন্ধুর সাথে
আমি ভুলে গেলেও আমার নাম সে ভুলেনি
এটাই বিস্ময় ত্রিশ বছরের ব্যবধানে।
ঝাপটে ধরে গলাগলি কোলাকোলি তারপর
উচ্ছ্বসিত প্রশ্ন, "বল, কেমন আছিস?"
রাস্তায় মানুষ কেমন আবার থাকে-রসাত্মক
জবাবে বিস্ময় প্রশ্ন, "মানে?"
মানটানে কিছু নয়, আয় বোস, চায়ে চুমুক
দিতে দিতে সব জানা যাবে।
টিএসসির সামনে চায়ের দোকানে বসে
হাজারো কথা, হাজারো স্মৃতি রোমন্থন।
কাঁধে ঝুলানো চটের ঝোলা দেখে সহাস্য জিজ্ঞাসা,
"কবি হলি কবে; তুই তো ছিলি
ক্লাসে সবচেয়ে ব্রিলিয়েন্ট; তোর তো বড়
কোনো অফিসার হবার কথা; কী আছে ঝোলায়?"
কবির ঝোলায় কী আর থাকে? এই ধর-
কিছু ছেঁড়া কষ্ট, কিছু টুকরো টুকরো স্বপ্ন,
কিছু মলিন ধূসর স্মৃতি, সংসার চালানোর
অক্ষমতার কুমারী লজ্জা, স্ত্রীর লাল চোখ,
সন্তানের অপূর্ণ সাধের করুণ আর্তনাদ,
শিশিরের জলে ভেজা বিষণ্ন বিকেল, আর
হতাশার ঘোর অন্ধকার। বিনাশের চিহ্নযুক্ত
উষ্ণ কিছু চুম্বনও আছে এতে। আছে দিনান্তের
দহন, গোপন দুঃখের চিৎকার।
আছে কবি নামের অবিমিশ্র সম্মান ও তাচ্ছিল্যযুক্ত
শব্দের বিপুল সমাহার। সমাজ ক্ষতের দগদগে
ঘায়ের যাতনা, নীড় হারা পাখির কান্নার করুণ সুর,
জীবনের তীর ভাঙা ঢেউয়ের গর্জন, ধর্ষিতা নারীর
উরুগলা রক্তস্রোত, অস্থির সময়ের সদর্প বিচরণ,
অবহেলার অনন্ত যন্ত্রণা, প্রেমহীন জীবনের অন্ধকার রাত,
শীতের সন্ধ্যায় নেমে আসা স্মৃতির সারস,
ছানাহারা ডাহুকের বিরহী বিলাপ। আরো আছে
প্রতিহিংসার দাবদাহে পোড়া কিছু লাশের দুগন্ধ,
আবরারের রক্তভেজা শার্ট,
ক্ষমতার দ্বন্দ্বে কুক্কুট ও শিয়ালের সন্ধি, স্বার্থের আবর্তে
বন্দী মানুষের কলরোল, অত্যুষ্ণ উষ্ণতায় ঘর্মাক্ত পৃথিবী,
অপ্রাপ্তির অভিঘাতে বিদ্ধস্ত স্বপ্নের সানুদেশ,
জলমুকুরে বিম্বিত আশাহত হৃদয়, বুকের সীমান্তে শূন্যতা,
মৃত বৃক্ষদের আর্তনাদে চৌচির জন্মভূমি, আর...
বলা শেষ না হতেই বেজে ওঠে বন্ধুর
মুঠোফোন, "হ্যালো জানু, আমি
আসছি এখনই।"- বলে হন্তদন্ত দেয় ছুট।
"আসি দোস্ত, দেখা হবে, বাই" বলেই হারিয়ে
যায় দৃষ্টির ওপারে অসংখ্য মানুষের ভীড়ে,
যেমন করে প্রতিদিন আমার জীবন থেকে
হারিয়ে যায় স্বপ্ন; দুপুরের প্রখর দহন শেষে
একটি বিশুদ্ধ বিকেল পাবার স্বপ্ন।
২৩-৪-২০১৯