ম ম জামান

কতদিন দেখি না সে চোখ যে চোখ
দেখার তৃষ্ণায় আমার চোখ দুটো
চন্দন চিতার মতো জ্বলতো দাউ দাউ
একদিন না দেখার যন্ত্রণায়!

অজানা ছলছুতায়, মিথ্যে বাহানায়
যুগ যুগ ধরে যত্নে বেড়ে ওঠা
ভালোবাসার সজীব বৃক্ষের গর্দানে
নির্দয় কুড়াল মেরে ঢুকে গেছো
স্বার্থের খেয়ালি খোড়লে।

আমার দুচোখে তন্ময় তাকিয়ে
বলো না এখন আর, "চলো ভিজি
চৈতি চাঁদের কোমল জোছনায়, চলো
হাতে হাত রেখে ঘুরে আসি স্বপ্নের শহর।"

কথা বলতে বলতে যে চোখ ভেসে যেতো
বর্ষার চঞ্চল নদীর ছলছল উপমায়
সে মৃণাল চোখ আজ পড়ে থাকে
অন্য কোনো চোখের তারায়।

কতদিন পড়ে না তোমার
বিচঞ্চল পদছাপ হৃদয়ের গলিপথে
যে পথে হাঁটার আগ্রহে ব্যাকুল হতে।

কতদিন শুনি না মুঠোফোনের
করুণ কান্নার ধ্বনি, তবু ক্ষণে ক্ষণে
হৃদয়ে রিংটোন বেজে ওঠতে শুনি।
হ্যালো হ্যালো বলে হঠাৎ টের পাই
হাই ভোল্টেজ হ্যালোসিনেশন
বিক্ষপ্ত চিন্তার বিস্রস্ত মনন।

এলোমেলো অস্থির জীবন আর ভালো
লাগে না। হৃদয় পথের দ্বারে দ্বারে
পদ্মগোখরার সতর্ক পাহারা, ঢেলে
রাখে নীল বিষ অপরাজিতার বুকে
ডানা ভাঙা গাঙচিল কাতরায়
সফেন সমুদ্র সৈকতে।

রক্তের লোহিত কণার লালে হার মানে
কৃষ্ণচূড়া ও রক্তজবার লাল
বৃন্ত থেকে সবার অলক্ষে খসে পড়ে
বিবিধ গোলাপ
বন্ধ হয়ে যায় প্রিয়তম কথার সংলাপ।
জমাট মেঘের ভারে ভেঙে পড়ে
আকাশ ব্যথার ঢলে বৃষ্টিজলে।

ব্যথা আছে, ভাবনা আছে
হেমন্ত আঁচলে সোনাঝরা রোদ আছে
শেফালির বুক চুঁয়ে নেমে আসা
সন্ধ্যার শিশির আছে
ঋতুর অমোঘ আবর্তনে হিজল তমাল
জারুলের আনাগোনা আছে
নেই শুধু তুমি, যার প্রেমজলশূন্যতায়
এ জীবন মরুভূমি।

সব দুখ সয়ে সয়ে উদধির বুকে
প্রবল প্রতাপে উত্থিত জলোচ্ছ্বাস
সবকিছু তছনছ করে থেমে যাওয়া
আইলার মতো আমি বড় বেশি ক্লান্ত আজ।

বলবো না কতটা কষ্টে আছি
যদি বুঝে থাকো, যদি বা সময় হয়
দিয়ে যেও উষ্ণ ঠোঁটে এক বিন্দু
জল-জোছনার সুখ। যদি তা না পাই-
দীর্ঘশ্বাস বুকে নিয়ে কুড়িয়ে যেতেই
থাকবো হৃদয় পোড়া ছাই, কুড়িয়ে যেতেই
থাকবো হৃদয় পোড়া ছাই...
৪-৪-২০১৯